আন্তর্জাতিকজাতীয়বিনোদন

৩ দিনব্যাপী বিশ্বকবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের ১৬৩ তম জন্মবার্ষিকী উদ্বোধন

মো. মনজুরুল ইসলাম (মনজু) : বাংলাদেশ শিল্পকলা একাডেমিতে আজ থেকে শুরু হলো বিশ্বকবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের ১৬৩ তম জন্মবার্ষিকী উদযাপন। জাতীয় পর্যায়ে আয়োজিত অনুষ্ঠানমালা আজ সকাল ১১ টায় জাতীয় নাট্যশালা মিলনায়তনে উদ্বোধন করেন বাংলাদেশ জাতীয় সংসদের স্পীকার ড. শিরীন শারমিন চৌধুরী।

প্রদীপ প্রজ্জ্বোলন ও জাতীয় সংগীত পরিবেশনের মাধ্যমে শুরু হয় প্রথম দিনের আয়োজন। এরপর সদ্য প্রয়াত শিল্পী সাদি মহম্মদকে স্মরণ করা হয় যন্ত্রসংগীতের করুণ সুর পরিবেশনার মাধ্যমে।

‘সোনার বাংলার স্বপ্ন ও বাস্তবতা: রবীন্দ্রনাথ থেকে বঙ্গবন্ধু’ প্রতিপাদ্যে অনুষ্ঠিত আলোচনায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে স্পিকার ড. শিরীন শারমিন চৌধুরী এমপি বলেন, “রবীন্দ্রনাথ এবং বঙ্গবন্ধুর দর্শন একসাথে দেখলে তার কেন্দ্রে বাঙালী জাতি স্বত্ত্বা, আত্ম পরিচয় এবং আত্ম মর্যাদা খুঁজে পাই” ।

তিনি আরো বলেন, “বাঙালীর আত্ম পরিচয় ও আত্মমর্যাদা প্রতিষ্ঠাই ছিলো রবীন্দ্রনাথ ও বঙ্গবন্ধুর মধ্যেকার নিবিড় যোগসূত্র। রবীন্দ্রনাথ বাঙালীকে নিয়ে গেছেন বিশ্ব সভায়, বঙ্গবন্ধুও ১৯৭৪ সালে জাতিসংঘের সভায় প্রথম বাংলায় ভাষণ দিয়েছেলেন। বঙ্গবন্ধু আমাদের জাতীয় সংগীতরূপে বেছে নিয়েছিলেন রবীন্দ্রনাথ রচিত ‘আমার সোনার বাংলা, আমি তোমায় ভালোবাসি’

স্বাগত বক্তব্যে বাংলাদেশ শিল্পীকলা একাডেমির মহাপরিচালক বলেন- “স্বাধীনতা পরবর্তীকালে শুধু বঙ্গবন্ধু নয়, কবিগুরু রবীন্দ্রনাথকেও নিষিদ্ধ করা হয়েছিল, বঙ্গবন্ধুর মৃত্যুর পর রবীন্দ্রনাথের দর্শন অনেকটাই বাধাগ্রস্ত করার চেষ্টা চলেছে”।

তিনি আরো বলেন, “বাঙালি কবি এবং বাংলা কবিতা লিখে যিনি বিশ্বকবি হয়েছেন, স্বাধীনতার পর আমরা দেখেছি জাতীয় সংগীতকেও বদলে দেওয়ার চেষ্টা করা হয়েছে”।

তিনি আরো বলেন, “কবিগুরু রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর এমনই এক রবি যে রবির উদয় আছে, কিন্তু অস্ত নেই”

এছাড়াও আলোচনা পর্বে বক্তব্য প্রদান করেন রবীন্দ্র বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচায প্রফেসর ড. মো: শাহ্‌ আজম এবং সংস্কৃতি বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের সচিব খলিল আহমদ।

স্মারক বক্তব্য প্রদান করেন বিশিষ্ট সাংস্কৃতিক ব্যক্তিত্ব জনাব রামেন্দু মজুমদার ।

সভাপতির বক্তব্যে সংস্কৃতি বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের প্রতিমন্ত্রী নাহিদ ইজাহার খান এমপি বলেন “কবিগুরু মুক্তচিন্তার পাঠের মাধ্যমে যেভাবে সাহিত্যকে রাঙিয়ে তুলেছেন, তেমনি জাতির পিতার দর্শন, আত্মপরিচয়ের সংগ্রাম আমাদের শক্তি যোগায়। সকল পরিস্থিতিতেই বঙ্গবন্ধু ও কবিগুরুকে আমাদের ধারণ করতে হবে।”

আলোচনায় বক্তারা বলেন,“বাংলা ভাষা ও সাহিত্যে আমরা যাঁর কাছে সবচেয়ে বেশি ঋণী তিনি কবিগুরু রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর। শুধু বাংলা সাহিত্যের সমৃদ্ধিই নয়, তাঁর মাধ্যমে বাংলা সাহিত্য বিশ্ব দরবারে পৌছেছে”।

আলোচনা পর্ব শেষে পরিবেশিত হয় রবীন্দ্র জন্মজয়ন্তীর সাংস্কৃতিক আয়োজন। সমবেত সংগীত ‘হে নতুন দেখা দিল আর বার” পরিবেশনার মাধ্যমে শুরু হয় ২য় পর্বের আয়োজন। রবীন্দ্র বিশ্ববিদ্যালয় পরিবেশন করে সমবেত সংগীত ‘ঐ মহামানব’। এরপর ভাস্বর বন্দোপাধ্যায় পরিবেশন করেন আবৃত্তি। সমবেত সংগীত ‘ও আমার দেশের মাটি’ পরিবেশন করে রবীন্দ্র বিশ্ববিদ্যালয়; এরপর নৃত্যনাট্য পরিবেশন করে বাংলাদেশ শিশু একাডেমির শিশু শিল্পীরা ‘হৃদয় আমার নাচেরে আজিকে’। ‘সবার তুমি আনন্দধন’ গান ও কবিতা পরিবেশন করেন সামিউল ইসলাম পুলক এবং মাহনাজ করিম হোসেন। এরপর একক সংগীত পরিবেশন করেণ বরেণ্য শিল্পী রেজওয়ানা চৌধুরী বন্যা। ‘রবীন্দ্রনাথ ও বঙ্গবন্ধু’ নৃত্যালেখ্য পরিবেশন করে বাংলাদেশ শিল্পকলা একাডেমির নৃত্যদল ।

অনুষ্ঠান উপস্থাপনায় ছিলেন তামান্না তিথি এবং নুরুল হাসনাত জিলানী।

সংস্কৃতি বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের আয়োজনে বাংলাদেশ শিল্পকলা একাডেমির ব্যবস্থাপনায় ৮-১০ মে ২০২৪ পর্যন্ত চলবে এ আয়োজন। আগামিকাল ৯ মে ২য় দিন সকাল ১১ টায় এবং তৃতীয় দিন সকাল ১০ টায় সমাপনী আয়োজনেও থাকবে আলোচনা অনুষ্ঠান ও রবীন্দ্র পরিবেশনা।

image_print
Spread the love
0 0 votes
Article Rating
Subscribe
Notify of
guest
0 Comments
Inline Feedbacks
View all comments