এক্সক্লুসিভবিনোদন

স্মৃতি সত্তা ভবিষ্যৎ বাউল সম্রাট শাহ আব্দুল করিম ও বাউল সাধক-গীতিকার রশীদ উদ্দিন

মো. মনজুরুল ইসলাম (মনজু) : সাংস্কৃতিক ঐতিহ্য রক্ষণ ও মনীষীদের প্রতি শ্রদ্ধা নিবেদনের নিমিত্তে বাংলাদেশ শিল্পকলা একাডেমির আয়োজনে “স্মৃতি সত্তা ভবিষ্যৎ” শীর্ষক স্মরণ অনুষ্ঠান আয়োজিত হচ্ছে। সংস্কৃতি বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের পৃষ্ঠপোষকতায় ও বাংলাদেশ শিল্পকলা একাডেমি আয়োজিত ‘স্মৃতি সত্তা ভবিষ্যৎ’ শীর্ষক অনুষ্ঠানে বাংলাদেশের বরেণ্য শিল্পী ও গুণীজনদের নিয়ে আলোচনা ও সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়। এ বছর দেশের ৬২ জন মনীষীদের জীবন ও কর্মের উপর আলোচনা ও সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান ২৪ মে থেকে ১২ জুন ২০২৪ পর্যন্ত অনুষ্ঠিত হবে। আজ ৩ জুন ১০ ম দিনে অনুষ্ঠান শুরু হয় সন্ধ্যা ৬ টায় জাতীয় সংগীত ও নৃত্যকলা কেন্দ্র মিলনায়তনে।

 “বাউল গানগুলোর মধ্যে কী যেন একটা মাধুর্য আছে, যা মানুষের হৃদয়কে অত্যন্ত গভীরভাবে নাড়া দেয়। বাউল সম্রাট শাহ আব্দুল করিম তাঁর এবং তাঁদের বাল্যের অসাম্প্রদায়িক সাংস্কৃতিক ঐতিহ্যকে স্মরণ করে সমকালীন সাম্প্রদায়িক আগ্রাসন দৃষ্টে ব্যথিত হয়েছেন। সে বেদনা প্রকাশ পেয়েছে তাঁর গানে। তিনি লিখেছেন : “আগে কি সুন্দর দিন কাটাইতাম আমরা, আগে কি সুন্দর দিন কাটাইতাম, গ্রামের নওজোয়ান হিন্দু মুসলমান, মিলিয়া বাউলা গান আর ঘাটু গান গাইতাম”।

“গাড়ি চলে না চলে না, চলে না রে, গাড়ি চলে না। চড়িয়া মানব গাড়ি, যাইতেছিলাম বন্ধুর বাড়ি, মধ্য পথে ঠেকলো গাড়ি, উপায়-বুদ্ধি মেলে না”-বাউল সম্রাট শাহ আব্দুল করিম।

বাংলাদেশ শিল্পকলা একাডেমির আয়োজনে বাউল সম্রাট শাহ আব্দুল করিম-এর স্মরণ অনুষ্ঠান আয়োজিত হয়। অনুষ্ঠানের শুরুতেই প্রদর্শিত হয় বাউল সম্রাট শাহ আব্দুল করিমের জীবন ও কর্মের উপর বাংলাদেশ শিল্পকলা একাডেমির আয়োজনে নির্মিত ১০ মিনিটের বিশেষ প্রামাণ্যচিত্র। পরে শাহ আব্দুল করিম-এর জীবন ও কর্মের উপর প্রবন্ধ পাঠ করেন প্রাবন্ধিক ড. শেখ মেহেদী হাসান, সহকারী রেজিস্ট্রার, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান বিশ্ববিদ্যালয়, কিশোরগঞ্জ।  প্রবন্ধের শিরোনাম ‘শাহ আব্দুল করিম জীবন ও গান’। আলোচক হিসেবে উপস্থিত ছিলেন আয়েশা সিদ্দিকা, উপসচিব, (সাংস্কৃতিক চুক্তি শাখা), সংস্কৃতি বিষয়ক মন্ত্রণালয়। সভাপতিত্ব করেন ড. আবুল কাশেম মজুমদার, প্রাক্তন সদস্য, বাংলাদেশ পাবলিক সার্ভিস কমিশন। আলোচনা শেষে সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানে গান পরিবেশন করেন বিশিষ্ট কন্ঠশিল্পী আবু বকর সিদ্দিক ও রোকসানা আক্তার রূপসা।

বাউল সম্রাট শাহ আব্দুল করিম সম্পর্কে বক্তারা বলেন, বাউল জীবনের শুরুতেই তাঁকে রোষানলে পড়তে হয় স্থানীয় ধর্মান্ধদের। ঈদের দিন জামাতে তাঁকে গান গাওয়ার অপরাধে গ্রামছাড়া করার ঘোষণা দেওয়া হয়েছিল। কিন্তু কোনো কিছুই তাঁকে গানের জগৎ থেকে বিরত রাখতে পারেনি। ভাটি অঞ্চলের মানুষের জীবনের সুখ-দুঃখ, প্রেম-ভালোবাসার পাশাপাশি শাহ আবদুল করিমের গান কথা বলে সব অন্যায়, অবিচার, কুসংস্কার আর সাম্প্রদায়িকতার বিরুদ্ধে। মানবপ্রেমের মধ্য দিয়ে জগৎ সংসার আলোকিত করা এবং সমাজের নিপীড়িত-নির্যাতিত মানুষের মুক্তির বার্তা দেয় তাঁর গান। তাঁর গানে ফুটে উঠেছে সাম্যবাদী সুর”।

অনুষ্ঠানের দ্বিতীয় পর্বে বাউল সাধক, গীতিকার রশীদ উদ্দিন-এর স্মরণ অনুষ্ঠান আয়োজন করা হয়। শুরুতেই প্রদর্শিত হয় রশীদ উদ্দিনের  জীবন ও কর্মের উপর বাংলাদেশ শিল্পকলা একাডেমির আয়োজনে নির্মিত বিশেষ প্রামাণ্যচিত্র। এরপর ‘বিশ শতকের বাংলা গান ও রশীদ উদ্দিন’ শীর্ষক প্রবন্ধ পাঠ করেন বিশিষ্ট প্রাবন্ধিক ড. কমল খালিদ, সহকারী অধ্যাপক ও বিভাগীয় প্রধান, সরকারি সংগীত কলেজ। আলোচক হিসেবে উপস্থিত ছিলেন ড. জাহিদুল কবীর লিটন, অধ্যাপক, জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলাম বিশ্ববিদ্যালয়। সভাপতিত্ব করেন মো: জাহাঙ্গীর আলম, মহাপরিচালক, বাংলাদেশ  টেলিভিশন।

আলোচনা শেষে সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানে গান পরিবেশন করেন বাউল শিল্পী মনির বাউলা এবং মৌসুমী ইকবাল।

আগামিকাল ৪ জুন বিকাল সাড়ে ৫ টায় স্টুডিও থিয়েটার হলে বিশিষ্ট চলচ্চিত্র পরিচালক, লেখক ঋত্বিক ঘটক ও বিশিষ্ট চিত্র গ্রাহক, চলচ্চিত্র নির্মাতা হীরালাল সেন এবং সন্ধ্যা ৬ টায় জাতীয় সংগীত ও নৃত্যকলা কেন্দ্র মিলনায়তনে বিশিষ্ট সংগীত ব্যক্তিত্ব আব্বাস উদ্দিন ও আব্দুল লতিফ স্মরণে আলোচনা অনুষ্ঠিত হবে ।

image_print
Spread the love
0 0 votes
Article Rating
Subscribe
Notify of
guest
0 Comments
Inline Feedbacks
View all comments