বিনোদনবুলেটিন নিউজস্থানীয় সংবাদ

সবাইকে নিয়ে জনবান্ধব শিল্পকলা একাডেমি গড়ে তুলতে চাই : মহাপরিচালক, বাংলাদেশ শিল্পকলা একাডেমি

[ঢাকা] ৩ নভেম্বর, ২০২৪ [বুলেটিন নিউজ ২৪.কম] : দেশের শিল্প চর্চার অন্যতম কেন্দ্রীয় প্রতিষ্ঠান বাংলাদেশ শিল্পকলা একাডেমি। জুলাই বিপ্লবউত্তর দেশের সার্বিক নিরাপত্তা পরিস্থিতি বিবেচনায় বাংলাদেশ শিল্পকলা একাডেমির সকল মিলনায়তন বন্ধ ছিলো ১০ অক্টোবর ২০২৪ পর্যন্ত। কিন্তু পরবর্তীতে একাডেমির সাংস্কৃতিক কার্যক্রমে স্থবিরতা দূর করতে, রাজধানীসহ সারাদেশে জেলা শিল্পকলা একাডেমিগুলোতেও সাংস্কৃতিক কার্যক্রম সচল করতে উদ্যোগ গ্রহণ করেন একাডেমির মহাপরিচালক ড. সৈয়দ জামিল আহমেদ। ফলে নানান প্রতিকূলতার মধ্যে সীমিত পরিসরে গত ১১ অক্টোবর ২০২৪ জাতীয় নাট্যশালা মিলনায়তন নাট্য মঞ্চায়নের জন্য এবং ২ টি মহড়া কক্ষ নাট্যচর্চার জন্য উন্মুক্ত করা হয়।

এর মধ্যেই ২ নভেম্বর (শনিবার) জাতীয় নাট্যশালা মিলনায়তনে এক অনাকাঙ্খিত পরিস্থিতি সৃষ্টি হয়, যার প্রেক্ষিতে আজ ৩ নভেম্বর (রবিবার) সকাল ৯ টায় বাংলাদেশ শিল্পকলা একাডেমিতে নিজ কার্যালয় থেকে এক ভার্চুয়াল সংবাদ সম্মেলন করেছেন মহাপরিচালক . সৈয়দ জামিল আহমেদ

সংবাদ সম্মেলনে গতকালের ঘটনা তুলে ধরে তিনি বলেন- “সোহরাওয়ার্দী উদ্যানের মুক্তমঞ্চে শিল্পকলার আয়োজনে যাত্রা উৎসব চলছে। আমি এবং নাট্যকলা বিভাগের পরিচালক ফয়েজ জহির সেখানে ছিলাম। নাট্যশালার সামনে বিক্ষোভ হচ্ছে শুনে আমি একাডেমি যাই। ততক্ষণে একাডেমির কর্মকর্তাগণ পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে নিয়ে এসেছিলেন। এমতাবস্থায় আমি ব্যাকস্টেজে গিয়ে দেশ নাটকের সদস্যদের মনোযোগ দিয়ে উৎকৃষ্টমানের প্রযোজনা উপস্থাপনের পরামর্শ দেই। একইসাথে বাবুকে তিরস্কার করি কুরুচিসম্পন্ন পোস্ট দেবার জন্য। এর কিছু পর আবার ফোন আসে। এবার বিক্ষুব্ধ জনতা নিয়ন্ত্রণের বাইরে। আমি একাডেমি ফিরে গিয়ে বিক্ষোভকারীদের সঙ্গে কথা বলি। তারা জানায়, যে সংগঠনের নাটক মঞ্চস্থ হচ্ছে তাদের দলের একজন সদস্য  স্বৈরাচারের দোসর। ওই নির্দিষ্ট ব্যক্তির কারণে নাট্যদলের প্রদর্শনী করতে দেবে না। আমি তাদের বুঝিয়েছি, দেশ নাটকের অনেক সদস্যও জুলাই গণঅভ্যুথানে সক্রিয়ভাবে অংশ নিয়েছে। তাদের মধ্যে গুলিবিদ্ধও আছে। আমি তাদের বুঝিয়েছি, শিল্পকলার কণ্ঠ যেন কেউ রোধ না করে। শেখ হাসিনার মতো স্বৈরাচার আমরা হতে চাই না। ২০১৮ সাল থেকে আমি নাটক করে স্বৈরাচারের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ করেছি। আরো সুবিতর্কের পরে তারা উত্তেজিত হয়ে পড়ে। তাদের একজন নিজেকে রিকশাচালক পরিচয় দিয়ে জানায়, জুলাই আন্দোলনে তিনি গুলিবিদ্ধ হয়েছেন।”

পরে শিল্পকলা একাডেমি আক্রান্ত হওয়ার শঙ্কা তৈরি হওয়ায় অধ্যাপক ড. জামিল আহমেদ বলেন, “আমি এটাও বলেছি, আমার বুকের উপর দিয়ে যান। তখন আমাকে পাশ কেটে দেয়াল টপকে কয়েকজন ঢুকে পড়ে। যখন গেইট ভেঙে ফেলে, তখন আমরা দেশ নাটকের সদস্যদের সঙ্গে কথা বলে প্রদর্শনী বন্ধ করার সিদ্ধান্ত নিয়েছি। অনেক চেষ্টা করেছি নাটকের প্রদর্শনী যেন হয়। আমি স্বীকার করি- I have lost ‍a battle but will definitely win the war. আপনারা পাশে থাকবেন।”

একাডেমির মহাপরিচালক, নাট্য নির্দেশক ও শিক্ষক ড. সৈয়দ জামিল আহমেদ বলেন, “সবাইকে নিয়ে জনবান্ধব শিল্পকলা একাডেমি গড়ে তুলতে চাই। সাম্প্রতিক সময়ে দেশের ২২ জায়গায় শিল্পকলা একাডেমিতে হামলা হয়েছে। সেসব বিষয় বিবেচনায় রেখেই যেহেতু মিলনায়তনের ভেতরে দর্শক ছিলেন, তাদের নিরাপত্তার কথা ভেবে আমরা প্রদর্শনী বন্ধ করি। আমি ভেতরে গিয়ে দর্শকের কাছে ক্ষমা চেয়েছি।”

সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন- “আইনশৃংখলাবাহিনী সহায়ক হিসেবে আছে, আমরা জনতার সাথে তাদের মুখোমুখি দাঁড় করাতে চাই নি। যারা নাটক করতে চায় তাদের নাটক করতে দিতে হবে। দর্শক তাদের নাটক দেখে বিবেচনা করবে, তাদের নাটক দর্শক দেখবে কিনা। কোন ব্যক্তির কারণে নাটকের দল যেন ক্ষতিগ্রস্থ না হয়।”

তিনি আরও বলেন, জনগণকেই শিল্পকলার প্রণোদনার দায়িত্ব নিতে হবে, আইনশৃংখলাবাহিনীর পাহারায় নয়। আমরা জনবান্ধব শিল্পকলা একাডেমি চাই। জনগণই যেন শিল্পকলাকে লালন করে। আমি দায়িত্ব নেয়ার পর থেকেই বলে আসছি, শিল্প চর্চাকে সমাজের কেন্দ্রে স্থাপন করতে হবে। সংস্কৃতি বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের খাতে বরাদ্দ বাড়াতে হবে।

পরে বাংলাদেশ শিল্পকলা একাডেমি আইন ১৯৮৯ এর প্রস্তাবিত সংশোধিত খসড়া বিষয়ে সাংবাদিকদের প্রশ্নোত্তরে তিনি সকলকে মতামত লিখিত আকারে জানানো আহ্বান জানিয়েছেন।

image_print
Spread the love
0 0 votes
Article Rating
Subscribe
Notify of
guest
0 Comments
Inline Feedbacks
View all comments