শ্রীকৃষ্ণের শুভ জন্মাষ্টমী আজ
[ঢাকা] ২৬ আগস্ট, ২০২৪ [বুলেটিন নিউজ ২৪.কম] : কৃষ্ণভক্তদের বিশ্বাস, জন্মাষ্টমী ব্রত পালন করলে সব পাপমোচন ও প্রভূত পূণ্য অর্জিত হয়; এ ব্রত যারা নিয়মিত পালন করে তাদের সন্তান, সৌভাগ্য ও আরোগ্য লাভ হয় এবং পরকালে বৈকুণ্ঠ প্রাপ্তি ঘটে। কোনো কোনো অঞ্চলে এ জন্মাষ্টমী ‘গোকুলাষ্টমী’ নামেও খ্যাত।
তথ্য মতে, দ্বাপর যুগের কোনোও এক শ্রাবণ (মতান্তরে ভাদ্র) মাসের কৃষ্ণপক্ষের অষ্টমী তিথিতে কৃষ্ণ জন্মগ্রহণ করেন। তাই এ দিনটি জন্মাষ্টমী নামে খ্যাত। বিভিন্ন স্থানে এদিন নানাবিধ উৎসব অনুষ্ঠিত হয়। এ দিনে ভক্তরা উপবাস করে রাত্রিতে কৃষ্ণপূজা করে।
সনাতন ধর্মাবলম্বীদের বিশ্বাস, পাশবিক শক্তি যখন ন্যায়নীতি, সত্য ও সুন্দরকে গ্রাস করতে উদ্যত হয়েছিল, তখন সেই শক্তিকে দমন করে মানবজাতির কল্যাণ ও ন্যায়নীতি প্রতিষ্ঠার জন্য মহাবতার ভগবান শ্রীকৃষ্ণের আবির্ভাব ঘটেছিল। তাদের আরও বিশ্বাস, দুষ্টের দমন করতে এভাবেই যুগে যুগে ভগবান মানুষের কাছে নেমে আসেন এবং সত্য ও সুন্দরের প্রতিষ্ঠা করেন।
আজ ২৬ আগস্ট (সোমবার) সনাতন হিন্দু সম্প্রদায়ের আরাধ্য ভগবান শ্রীকৃষ্ণের জন্মতিথি ও শুভ জন্মাষ্টমী । হিন্দু সম্প্রদায় ধর্মীয় ভাবগাম্ভীর্য ও আনন্দ–উৎসবের মধ্য দিয়ে জন্মাষ্টমী পালন করবে।
জন্মাষ্টমী উপলক্ষ্যে বাংলাদেশ পূজা উদ্যাপন পরিষদ ও আন্তর্জাতিক কৃষ্ণভাবনামৃত সংঘ ইসকনসহ বিভিন্ন সামাজিক, সাংস্কৃতিক ও ধর্মীয় সংগঠন ব্যাপক কর্মসূচি গ্রহণ করেছে।
জন্মাষ্টমী উপলক্ষ্যে আজ সরকারি ছুটি। বাংলাদেশ বেতার, টেলিভিশনসহ বেসরকারি স্যাটেলাইট চ্যানেলে সম্প্রচারিত হবে বিশেষ অনুষ্ঠান এবং সংবাদপত্রসমূহে কৃষ্ণের আদর্শ ও জনহিতকর কর্মকাণ্ড সম্পর্কে বিভিন্ন প্রবন্ধ উপস্থাপিত হয়।
শুভ জন্মাষ্টমী উপলক্ষ্যে মহানগর সর্বজনীন পূজা কমিটি ঢাকেশ্বরী জাতীয় মন্দিরে কেন্দ্রীয়ভাবে কর্মসূচি গ্রহণ করেছে। কর্মসূচির মধ্যে রয়েছে, আজ সকাল আটটায় দেশ ও জাতির মঙ্গল কামনায় গীতাযজ্ঞ এবং বেলা দুইটায় ঐতিহাসিক জন্মাষ্টমী মিছিল ও রাতে শ্রীকৃষ্ণপূজা।
জন্মাষ্টমীর মিছিলপূর্বক আলোচনা সভায় প্রধান অতিথি থাকবেন অন্তর্বর্তী সরকারের আইন, বিচার ও সংসদবিষয়ক এবং সংস্কৃতিবিষয়ক মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা অধ্যাপক আসিফ নজরুল।
মিছিলের উদ্বোধন করবেন ডাক, টেলিযোগাযোগ ও তথ্যপ্রযুক্তি এবং তথ্য ও সম্প্রচার মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা মো. নাহিদ ইসলাম।
উল্লেখ্য যে, ঢাকার জন্মাষ্টমী মিছিলের গোড়াপত্তন হয় ১৫৫৫ সালে বংশালের এক সাধুর নেতৃত্বে। তখন এর নাম ছিল ‘শ্রীশ্রী রাধাষ্টমী’। পরে তিনি স্থানীয় প্রশাসনের নিকট থেকে কৃষ্ণের জন্মোপলক্ষে অপেক্ষাকৃত জাঁকজমকের সঙ্গে একটি মিছিল করার অনুমতি লাভ করেন। ১৫৬৫ সালে প্রথম ব্যাপকভাবে জন্মাষ্টমী মিছিল বের হয় এবং তখন থেকে এর সম্পূর্ণ দায়দায়িত্ব অর্পিত হয় নবাবপুরেরর ধনাঢ্য ব্যবসায়ী কৃষ্ণদাস বসাকের পরিবারের ওপর।
১৭২৫ সাল থেকে ইসলামপুরের ব্যবসায়ী গদাধর ও বলাইচাঁদ বসাকের নেতৃত্বে আরও একটি মিছিল বের হতে থাকে। এ নিয়ে উভয় পক্ষের মধ্যে দ্বন্দ্বের সৃষ্টি হলে তৎকালীন ব্রিটিশ সরকার দুদিনে দুপক্ষের মিছিল বের করার আইন করে দেয়। ঢাকার এ মিছিল এক সময় এত প্রসিদ্ধ ছিল যে, দেশবিদেশের বহুলোক তা দেখতে আসত।
ব্রিটিশ শাসনামলে জন্মাষ্টমী মিছিল ছিল অংশগ্রহণমূলক। মিছিলে শ্রীকৃষ্ণের জীবনকাহিনী নৃত্য-গীতের মাধ্যমে তুলে ধরা হতো। বিভিন্ন পৌরাণিক কাহিনীও চিত্র আকারে এবং সঙ সেজে দেখানো হতো। ১৯৪৭ সালে ভারত বিভাগের পর মিছিলের পৃষ্ঠপোষকসহ অনেক হিন্দু ভারতে চলে গেলে এবং পাকিস্তান সরকারের বিবিধ আইন ও একটি মিছিলে মুসলমানদের হামলার ফলে মিছিল বন্ধ হয়ে যায়।
১৯৭১ সালে বাংলাদেশ স্বাধীন হওয়ার পর সরকার ও জনগণের সহযোগিতায় জন্মাষ্টমী মিছিল পুনরায় শুরু হয়।