শেয়ার বাজারের ইতিহাস
নিজস্ব প্রতিবেদক : ২৮ এপ্রিল, ১৯৫৪ সালে ইস্ট পাকিস্তান স্টক এক্সচেঞ্জ এসোসিয়েশন লিঃ হিসেবে অন্তর্ভুক্তি। ১৯৫৬ সালে আনুষ্ঠানিকভাবে লেনদেন শুরু। ২৩ জুন, ১৯৬২ সালে ইস্ট পাকিস্তান স্টক এক্সচেঞ্জ লিঃ নামে পুনঃনামকরণ। ১৩ মে, ১৯৬৪ সালে ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জ নামে পুনঃ নামকরণ। ১৬ ডিসেম্বর, ১৯৭১ সালে নতুন রাষ্ট্রীয় নীতিমালার অধীনে লেনদেন স্থগিত করা হয়। ১৬ আগস্ট, ১৯৭৬ সালে বাংলাদেশে লেনদেন পুনরায় শুরু হয়। ১৬ সেপ্টেম্বর, ১৯৮৬ সালে সার্বিক মূল্য সূচকের হিসাবনিকাশ শুরু। ১ নভেম্বর, ১৯৯৩ সালে আইএফসির নিয়মে শেয়ারের মূল্য সূচকের হিসাবনিকাশ শুরু। ১০ আগস্ট, ১৯৯৮ সালে স্বয়ংক্রিয় লেনদেন শুরু। জানুয়ারি ২০০১ সালে ডিএসই-২০ সূচকের হিসাবনিকাশ শুরু। ২৭ নভেম্বর, ২০০১ সালে ডিএসই সাধারণ সূচকের হিসাবনিকাশ শুরু। ২৪ জানুয়ারি, ২০০৪ সালে সিডিবিএলের মাধ্যমে সিডিএস শুরু। ২৮ মার্চ, ২০০৫ সালে ডিএসই সার্বিক মূল্য সূচক (ডিএসআই) পুনঃপ্রবর্তন। ১২ এপ্রিল, ২০০৬ সালে রেগুলেশনস ২০০৬ প্রবর্তন। ২২ নভেম্বর, ২০০৭ সালে ডিএসই চট্টগ্রাম কার্যালয়ের অভিষেক। ৩০ মার্চ, ২০০৮ সালে ডিএসই সিলেট কার্যালয়ের অভিষেক। ২০১০ সালে বুক বিল্ডিং পদ্ধতির প্রবর্তন। ১০ জুন , ২০১২ সালে ইন্টারনেটভিত্তিক লেনদেন সফটওয়্যার এমএসএ প্লাসের অভিষেক। ১৪ অক্টোবর , ২০১২ সালে ওয়ার্ল্ড ফেডারেশন অব এক্সচেঞ্জেস এর করেসপন্ডেন্ট সদস্যপদ লাভ। ২৮ জানুয়ারি, ২০১৩ সালে ডিএসই ব্রডসূচক (ডিএসইএক্স) এবং ডিএসই ৩০ সূচক (ডিএস৩০) শুরু (এসএ্যান্ডপি দ্বারা)ল। ১৮ ফেব্রুয়ারি , ২০১৩ সালে বাংলা ওয়েবসাইট চালু। ২৯ এপ্রিল, ২০১৩ সালে দি এক্সচেঞ্জ ডিমিউচ্যুয়ালাইজেশন আইন ২০১৩ সংসদ কর্তৃক গৃহীত। ২ মে, ২০১৩ সালে দি এক্সচেঞ্জ ডিমিউচ্যুয়ালাইজেশন আইন ২০১৩ কার্যকরের তারিখ। ২৫ সেপ্টেম্বর, ২০১৩ সালে শরীয়াহ্ সূচক চালুর জন্য এসএ্যান্ডপি ডাও জোন্স এর সঙ্গে একটি চুক্তি স্বাক্ষর। ২১ নভেম্বর, ২০১৩ সালে একটি ডিমিউচ্যুয়ালাইজড এক্সচেঞ্জে রূপান্তরিত। ২০ জানুয়ারি, ২০১৪ সালে ডিএসইএক্স শরীয়াহ্ সূচক (ডিএসইএস) শুরু। ২১ মার্চ, ২০১৪ সালে বিশ্বের নেতৃস্থানীয় লেনদেন সফটওয়্যার প্রদানের জন্য নাসডাক ওএমএক্স এবং ফ্লেক্সট্রেড সিস্টেমস এর সঙ্গে একটি চুক্তি স্বাক্ষর। ১১ ডিসেম্বর, ২০১৪ সালে পরবর্তী প্রজন্মের স্বয়ংক্রিয় লেনদেন সিস্টেমের উদ্বোধন। ৩ মার্চ, ২০১৫ সালে ওয়ার্ল্ড ফেডারেশন অব এক্সচেঞ্জেস-এর করেসপন্ডেন্ট সদস্যপদ এফিলিয়েটেডে উন্নীত। ১২ এপ্রিল ২০১৫ সালে ডিএসই অফিসিয়াল ওয়েবসাইটের উন্নত সংস্করণের উদ্ভোধন। ৩০ এপ্রিল ২০১৫ সালে লেনদেনে সার্কিট ব্রেকারের মান নির্ধারণ। ১২ জুলাই ২০১৫ সালে ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জের নতুন লিস্টিং রেগুলেশন ২০১৫ অফিসিয়াল গেজেটে প্রকাশিত। ১২ আগস্ট, ২০১৫ সালে এক্সচেঞ্জ ট্রেডড ফান্ড চালুর ব্যাপারে আলোচনা। ১৫ সেপ্টেম্বর, ২০১৫ সালে রিসেন্ট দেভেলপমেন্ট ইন ডিএসই এ্যান্ড রেগুলেটরি রিফর্মস ফর ক্যাপিটাল মার্কেট, এর উপর সিম্পোজিয়াম। ২৫ সেপ্টেম্বর, ২০১৫ সালে বাংলাদেশ ক্যাপিটাল মার্কেট কনফারেন্স। ২৫ নভেম্বর, ২০১৫ সালে মোবাইল এ্যাপ “ডিএসই ইনফো” চালু। ৯ মার্চ, ২০১৬ সালে “ডিএসই মোবাইল” চালু। ২৬ মে, ২০১৬ সালে নতুন বুক বিল্ডিং সফটওয়্যার চালু। ৩০ অক্টোবর, ২০১৬ সালে আই.এস.ও 9001: 2008 অর্জন। ২৩ জানুয়ারি, ২০১৭ সালে অগ্রগতির অভিযাত্রায় ডিএসসি। ১২ মে, ২০১৭ সালে ডিএসই এবং বিএসই এর মধ্যে বোঝাপড়া স্মারক। ৬ জুন, ২০১৭ সালে ডিএসই’র WFE এর সম্পূর্ণ সদস্যপদ অর্জন করেছে।
মূল কাজগুলো হচ্ছে, কোম্পানীগুলোকে তালিকাভুক্ত করা (লিস্টিং রেগুলেশনস অনুযায়ী)। তালিকাভুক্ত সিকিউরিটিজের জন্য পর্দার উপর স্বয়ংক্রিয় লেনদের ব্যবস্থা সরবরাহ করা। লেনদেনের নিষ্পত্তি করা (সেটেলমেন্ট অব স্ট্রান্সজেকশন রেগুলেশনস অনুযায়ী)। উপহার হিসেবে দেয়া শেয়ার বা লেনদেন ব্যবস্থার বাইরে গিয়ে এক্সচেঞ্জে শেয়ার বিনিময়/স্থানান্তরে অনুমোদন প্রদান করা (লিস্টিং রেগুলেশনস ৪২ অনুযায়ী)। বাজার পরিচালনা এবং নিয়ন্ত্রণ। বাজার তদারকি করা। মাসিক রিভিউ প্রকাশ করা। তালিকাভুক্ত কোম্পানীগুলোর কার্যক্রম পর্যবেক্ষণ (লিস্টিং রেগুলেশনস অনুযায়ী)। বিনিয়োগকারীদের জন্য অভিযোগ সেল গঠন (উপবিধি ১৯৯৭ অনুযায়ী অভিযোগ নিষ্পত্তি করা)। বিনিয়োগকারী সুরক্ষা তহবিল (ইনভেস্টর প্রটেকশন ফান্ড রেগুলেশনস ১৯৯৯ অনুযায়ী)। অনলাইনের মাধ্যমে তালিকাভুক্ত কোম্পানীগুলোর মূল্য সংবেদনশীল অথবা অন্যান্য তথ্য ঘোষণা করা।
আইনগত নিয়ন্ত্রণ ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জ একটি নিবন্ধিত পাবলিক লিমিটেড কোম্পানী এবং এটি নিয়ন্ত্রিত হয় আর্টিকেলস অফ এসোসিয়েশন এর নিয়মকানুন এবং উপবিধি সহকারে সিকিউরিটিজ এন্ড এক্সচেঞ্জ অর্ডিনেন্স-১৯৬৯, কোম্পানীজ এক্ট ১৯৯৪ এবং সিকিউরিটিজ এন্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন এক্ট ১৯৯৩ দ্বারা।
উল্লেখ্য যে, ১৯৫২ সালে কলকাতা স্টক এক্সচেঞ্জে পাকিস্তানি কোম্পানির শেয়ার এবং সিকিউরিটিজ লেনদেন নিষিদ্ধ ঘোষণা করা হলে তৎকালীন পূর্ব পাকিস্তানে আলাদা একটি স্টক এক্সচেঞ্জ প্রতিষ্ঠার প্রয়োজনীয়তা দেখা দেয় সরকারের সামনে। তখন পাকিস্তানের শিল্প সংক্রান্ত প্রাদেশিক পরামর্শক কাউন্সিল পূর্ব পাকিস্তানে একটি স্টক এক্সচেঞ্জ প্রতিষ্ঠার সম্ভাব্যতা যাচাইয়ে একটি কমিটি গঠন করে। ১৯৫৩ সালের ১৩ মার্চ অনুষ্ঠিত ওই কমিটির দ্বিতীয় সভায় এ বিষয়ে একটি চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেয়া হয়। পূর্ব বাংলার সরকারের বাণিজ্য, শ্রম এবং শিল্প বিভাগের সচিব এ খলিলি’র সভাপতিত্বে ইডেন ভবনের কেবিনেট রুমে অনুষ্ঠিত এক সভায় স্টক এক্সচেঞ্জ প্রতিষ্ঠার বিষয়ে বিস্তারিত আলোচনা হয়। তখন কেন্দ্রীয় সরকার ঢাকায় করাচি স্টক একচেঞ্জের একটি শাখা খোলার প্রস্তাব করে, কিন্তু সভায় তা সমর্থন পায়নি। তার বিপরীতে পূর্ব পাকিস্তানে একটি স্বতন্ত্র স্টক এক্সচেঞ্জ প্রতিষ্ঠার পক্ষেই জোরালো মত উঠে আসে সভায়। সভায় এটা প্রস্তাব করা হয়েছিল যে, ঢাকা-নারায়ণগঞ্জ চেম্বার অফ কমার্স এন্ড ইন্ডাস্ট্রিজের উচিত তাদের সকল সদস্যের জন্য ২০০০ রুপি করে প্রস্তাবিত স্টক এক্সচেঞ্জের সদস্যপদে প্রতিটি কার্ড কিনে নেয়া। এটা মনে করা হয়েছিল যে এক্সচেঞ্জের অবস্থান ঢাকা, নারায়ণগঞ্জ কিংবা চট্টগ্রাম হওয়া উচিত। এক্সচেঞ্জ গঠন করার জন্য জনাব মেহদি ইস্পাহানিকে আহ্বায়ক করে প্রদেশের শিল্প ও বাণিজ্যে প্রতিষ্ঠিত নেতৃস্থানীয় ব্যক্তিদের সমন্বয়ে গঠিত একটি সাংগঠনিক কমিটিকে দায়িত্ব দেয়া হয়।
নারায়ণগঞ্জ চেম্বার সভার মতামত ও তথ্য সংস্থাটির সদস্য এবং তাদের সঙ্গে সম্পর্কিত প্রতিষ্ঠানকে জানিয়ে দেয়। পাশাপাশি জানতে চাওয়া হয়, তারা প্রস্তাবিত স্টক এক্সচেঞ্জ গঠনে আগ্রহী কিনা। পরবর্তীতে ১৯৫৩ সালের ৭ জুলাই চেম্বারের একটি সভা অনুষ্ঠিত হয়। যেখানে প্রায় ১০০ ব্যক্তি ঐ এক্সচেঞ্জ গঠনে আগ্রহ প্রকাশ করে। ঐ সভার আহ্বায়ক জনাব এম মেহদি ইস্পাহানিসহ মোট আটজন ব্যক্তিকে এক্সচেঞ্জের পৃষ্ঠপোষক হওয়ার অনুরোধ জানানো হয়। পাশাপাশি তাদের ঐ এক্সচেঞ্জের মেমোরেন্ডাম এন্ড আর্টিকেলস অব এসোসিয়েশন তৈরীরও অধিকার দিয়ে কোম্পানিজ অ্যাক্ট ১৯১৩ এর অধীনে এটিকে নিবন্ধিত করার উদ্যোগ গ্রহণ করতে বলা হয়। এক্সচেঞ্জের অন্য ৭ জন পৃষ্ঠপোষক ছিলেন- জে এম এডিসন-স্কট, মোহাম্মদ হানিফ, এ সি জৈন, আবদুল জলিল, এ কে খান, এম সাব্বির আহমেদ এবং সাখাওয়াত হোসেন।
সভায় আরও সিদ্ধান্ত হয় যে, এক্সচেঞ্জের সদস্য ফি হবে ২০০০ রুপি এবং মাসিক চাঁদা হবে ১৫ রুপি। এক্সচেঞ্জের ১৫০ জনের বেশি সদস্য থাকা যাবে না। ১৯৫৩ সালের ৩ সেপ্টেম্বর অনুষ্ঠিত চেম্বারের পৃষ্ঠপোষকদের এক সভায় সিদ্ধান্ত নেয়া হয়। মেমোরেন্ডাম এন্ড আর্টিকেলস অব এসোসিয়েশন তৈরীর জন্য ওরর ডিগনাম এন্ড কোং কে আইনজ্ঞ হিসেবে নিয়োগ করা হবে এবং এই মেমোরেন্ডাম এন্ড আর্টিকেলস অব এসোসিয়েশনের মধ্যে অন্যান্য দেশের স্টক এক্সচেঞ্জের প্রচলিত নিয়মগুলো অন্তর্ভূক্ত করে তার সঙ্গে স্থানীয় পরিবেশ বিবেচনায় আনা হবে।
আটজন পৃষ্ঠপোষক নিয়ে ১৯৫৪ সালে গঠন করা হয় ইস্ট পাকিস্তান স্টক এক্সচেঞ্জ অ্যাসোসিয়েশন লিমিটেড। নব গঠিত দি ইস্ট পাকিস্তান স্টক এক্সচেঞ্জ অ্যাসোসিয়েশনের প্রথম চেয়ারম্যান ছিলেন সাদ্রি ইস্পাহানী। ১৯৫৬ সালের ১ সেপ্টেম্বর স্টক এক্সচেঞ্জের আনুষ্ঠানিকভাবে লেনদেন শুরু হয় নারায়ণগঞ্জ কো-অপারেটিভ ভবনে। ১৯৬২ সালের ২৩ শে জুন একটি পাবলিক লিমিটেড কোম্পানি হিসেবে এটির পুনঃনামকরণ করা হয় ইস্ট পাকিস্তান স্টক এক্সচেঞ্জ লিমিটেড, আবার ১৯৬৪ সালের ১৪ জুন ইস্ট পাকিস্তান স্টক এক্সচেঞ্জ লিমিটেড এর নাম পরিবর্তন করে রাখা হয় “ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জ লিমিটেড”।
যাত্রার শুরুতে এক্সচেঞ্জের অনুমোদিত মূলধন ছিল ৩০০,০০০ রুপি, যা ১৫০টি শেয়ারে বিভক্ত। পরবর্তীতে ১৯৬৪ সালের ফেব্রুয়ারি ২২ তারিখে একটি বিশেষ সাধারণ সভার মাধ্যমে প্রতিটি সদস্য ফি ২০০০ রুপির পরিবর্তে এক্সচেঞ্জের অনুমোদিত মূলধন বাড়িয়ে ৫০০,০০০ রুপি করা হয় যেটা ২,০০০ রুপির ২৫০টি শেয়ারে বিভক্ত ছিল। এক্সচেঞ্জের পরিশোধিত মূলধন হচ্ছে ৪৬০,০০০ রুপি যা ২,০০০ রুপির ২৩০টি শেয়ারে বিভক্ত। যদিও ২,০০০ রুপির ২৩০ শেয়ারের মধ্যে ৩৫টি শেয়ার ৭,৯৯৮,০০০ রুপি প্রিমিয়ামসহ প্রতিটি মাত্র ৮,০০০,০০০ রুপিতে ছাড়া হয়েছিল।
১৯৫৪ সালে যাত্রা শুরু করলেও, ১৯৫৬ সালে লেনদেন শুরু করার অনুমতিপত্র পাওয়ার পরই নারায়ণগঞ্জে স্টক এক্সচেঞ্জের আনুষ্ঠানিকভাবে লেনদেন শুরু হয়। কিন্তু ১৯৫৮ সালে এটি ঢাকায় স্থানান্তর করা হয় এবং মতিঝিল বাণিজ্যিক এলাকায় নারায়ণগঞ্জ চেম্বার বিল্ডিং-এ এর কার্যক্রম শুরু হয়। ১৯৫৭ সালের ১ অক্টোবর স্টক এক্সচেঞ্জ সরকারের কাছ থেকে ৮.৭৫ কাঠার একটি জমি কিনে ৯ এফ মতিঝিল বাণিজ্যিক এলাকায় এবং ১৯৫৯ সালে নিজের জায়গায় স্টক এক্সচেঞ্জকে স্থানান্তর করা হয়। [তথ্যসূত্র : ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জ]