মার্কেটিং সেক্টরে ক্যারিয়ার : যেসব বিষয় জানা জরুরি
বর্তমানে মার্কেটিং একটা জনপ্রিয় পেশা। বাংলাদেশে অসংখ্য মার্কেটিং পদ আছে যেগুলোর চাহিদা ব্যাপক। সঠিক দক্ষতা কাজে লাগালে দেশ ও দেশের বাইরে সবখানেই এই সংক্রান্ত কাজ মেলে। বর্তমান বিশ্ব তথাকথিত বিপণন মাধ্যমের সঙ্গে সঙ্গে এখন ডিজিটাল মার্কেটিংকেও অধিক গুরুত্বের সঙ্গে দেখছে কারণ আধুনিক যুগে মানুষ ডিজিটাল মাধ্যমে অধিক সক্রিয়।
অনেকের মধ্যেই মার্কেটিং এর দক্ষতা থাকে। কিন্তু এই দক্ষতা সঠিক চর্চার মাধ্যমে বৃদ্ধি করা সম্ভব। মার্কেটিং এর এই বিশাল সেক্টরে নিত্যদিন যুক্ত হচ্ছে নতুন নতুন ধারণা। এই সবই মার্কেটিং নিয়ে বিভিন্ন পর্যায়ে চর্চার ফল।
যদি আপনি ডিজিটাল মার্কেটিংয়ে অধিক স্বাচ্ছন্দ্যবোধ করে থাকেন এবং এই ক্ষেত্রে নিজস্ব পরিচিতি ও অভিজ্ঞতা থাকে তবে নিজস্ব যোগ্যতা এবং পেশাগত দক্ষতাকে কাজে লাগিয়ে এ সেক্টরের অসংখ্য পদ থেকে নিজের জন্য সেরাটা সহজেই খুঁজে নিতে পারবেন। এই ইন্ডাস্ট্রিতে অভিজ্ঞতা খুব গুরুত্বপূর্ণ। তাই ক্যারিয়ারের শুরু থেকেই এই বিষয়ে সচেতন হতে হবে।
অনেকেই বুঝতে পারেন না একজন দক্ষ বিপণনকারী হিসেবে নিজের ক্যারিয়ার কীভাবে বা কখন থেকে শুরু করতে হবে। তাদের জন্যই কিছু টিপস।
১. নিজের ইচ্ছা সম্পর্কে সঠিক ধারণা গ্রহণ : ক্যারিয়ার গড়তে হলে প্রথমেই চিন্তা করতে হবে কোন ক্ষেত্রটি নিজের জন্য উপযুক্ত। এজন্য নিজস্ব দক্ষতা বা সীমাবদ্ধতাগুলো সম্পর্কে স্পষ্ট জ্ঞান রাখা জরুরি। সঠিক অবস্থান মূল্যায়ন করে উদ্দেশ্য খুঁজে বের করতে হবে। এর মাধ্যমেই ব্যক্তিগত ব্র্যান্ডের প্রতিফলন করা সম্ভব। মার্কেটিংয়ে ক্যারিয়ার গড়তে হলে ক্যারিয়ার তৈরির সম্ভাব্য সম্ভাবনাগুলো সম্পর্কেও স্বচ্ছ ধারণা নিতে হবে।
আপনি চাইলে মার্কেটিংয়ের কাজ করার আগে নিজের আগ্রহ যাচাই করার জন্য অন্য সেক্টরেও কাজ করে দেখতে পারেন। এছাড়াও শিক্ষানবিশ হিসেবে বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে বিপণন কর্মী হিসেবে কাজ করেও নিজের আগ্রহের জায়গাটি সম্পর্কে ধারণা নেওয়া যায়। বর্তমানে কাজ করা পেশাগুলোতে উৎসাহ না পেলে পেশা পরিবর্তন করে মার্কেটিং সেক্টরে ক্যারিয়ার গড়ার জন্য আপনি অনুপ্রেরণা পাবেন।
উদাহরণস্বরূপ বলা যায় আপনি শুরুতেই জনসংযোগ হয় এমন ধরনের কাজগুলো দিয়ে শুরু করতে পারেন। এক্ষেত্রে সামাজিক সংগঠন বা বিভিন্ন ক্যাম্পেইনের কাজগুলো অন্যতম। মূলত বিপণনের কাজ যে কোনো জায়গা বা বয়স থেকেই শুরু করা সম্ভব। ধরুন অন্য কোনো পেশা বাদ দিয়ে আপনি হুট করেই বিপণনের কাজ শুরু করবেন। তাহলে অবশ্যই এর সব ক্ষেত্রগুলো সম্পর্কে ধারণা রাখতে হবে।
এরপরও যদি নিজেকে আরও অভিজ্ঞ হিসেবে দেখতে চান তাহলে মার্কেটিংয়ের উপর শর্ট কোর্সগুলো আপনাকে সহযোগিতা করবে। তবে এই সবকিছুর জন্য প্রথমেই আপনার নিজের মনের দৃঢ়তা আনতে হবে যে আপনি আসলেই মার্কেটিংয়ের কাজে আগ্রহী কি না।
২. নিজের জন্য মডেল তৈরি করা : বিপণনকারী হিসেবে ক্যারিয়ার গড়তে হলে অবশ্যই কারো না কারো পরামর্শকে গুরুত্ব দিতে হবে। কিংবা কাজের ভালো-মন্দ যাচাই বাছাই করতে পারে এমন একজন মডেল বেছে নিতে হবে যেন একটা কাজ ভালো থেকে আরও বেশি ভালো করা সম্ভব হয়। যিনি আপনাকে পরামর্শ দিবেন তিনি হতে পারে পরিবারের সদস্য বন্ধু অথবা অন্য যেকেউ।
অনেক সময় বয়সে ছোট কেউও আপনাকে পরামর্শ দিতে পারে। ভালো বিপণনকারী হতে হলে সবার পরামর্শই গুরুত্বপূর্ণ। এমনও হতে পারে কিছু মানুষের পরামর্শ মনে দ্বিধার সৃষ্টি করতে পারে। কফির আড্ডায় অন্যদের কাছে থেকে আপনি নতুন কোনো তথ্যও পেতে পারেন।
মার্কেটিং এমন একটা বিষয় যেখানে প্রতিটা মানুষের মতামতের গুরুত্ব আছে। বিষয়টি এমন না যে শুধুমাত্র সিইও বা আপনার পছন্দের মানুষের পরামর্শের গুরুত্ব দিতে হবে বরং মার্কেটিংয়ে ভালো ক্যারিয়ার গড়ার জন্য সকল শ্রেণির মতামত নিয়ে চিন্তা করতে হবে। মনে রাখতে হবে এখানে প্রত্যেকেরই কোচ বা পরামর্শদাতা। এটিকেই কাজে লাগিয়ে সঠিকভাবে সকলের কাছে বিপণন করার সুযোগ রয়েছে।
মার্কেটিং আজীবন শেখার বিষয়। এই সেক্টরে এমন কোনো ব্যক্তি নেই যিনি সম্পূর্ণ সঠিক অথবা ভুল। তাই সকলের পরামর্শ গ্রহণ করে নিজে থেকেই সিদ্ধান্ত নিতে পারাটা গুরুত্বপূর্ণ।
৩. শিক্ষাগত যোগ্যতা বৃদ্ধি : পেশাগত অভিজ্ঞতা বৃদ্ধির সঙ্গে সঙ্গে মার্কেটিংয়ে শিক্ষাগত যোগ্যতা বৃদ্ধির বিকল্প নেই। কাজ করার পাশাপাশি মার্কেটিংকে আজীবনের শিক্ষা হিসেবে গ্রহণ করুন। যদি কাজ করার সঙ্গে সঙ্গে অধ্যায়ন করার সুযোগ থাকে তাহলে তা থেকে পিছনে আসার কোনো মানেই হয় না।
নিজেকে প্রশ্ন করুন, আপনি কি একজন সাধারণ বিপণনকারী হতে চান নাকি আপনি এই পথের একটা বিশেষজ্ঞ হিসেবে নিজেকে পরিচয় করাতে বেশি আগ্রহী? যদি নিজেকে একজন বিশেষজ্ঞ হিসেবে দেখতে চান তাহলে অবশ্যই প্রাতিষ্ঠানিক জ্ঞানগুলো থাকা গুরুত্বপূর্ণ। যদিও প্রাথমিকভাবে মার্কেটিংয়ে কাজ করার জন্য প্রাতিষ্ঠানিক ডিগ্রি বা শিক্ষাগত অধিক যোগ্যতা গুরুত্বপূর্ণ নয়। তবে এই ক্ষেত্রে বিশেষজ্ঞের জ্ঞান ধারণ করার জন্য উচ্চতর পড়াশোনার বিকল্প নেই।
এক্ষেত্রে এডুকেশন ব্যাকগ্রাউন্ড থাকলে আপনি মার্কেটিংয়ের উচ্চপর্যায়ে কাজ করার সুযোগ পাবেন যেমন: ব্যাচেলর ইন মার্কেটিং, ব্যাচেলর ইন বিজনেস, স্নাতকসহ মার্কেটিং বা বিজনেসের বিষয়ে বেশ ভালো পড়াশুনা থাকতে হবে। এছাড়াও বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে ইন্টার্নশিপ করে এবং বিভিন্ন ধরনের বই পড়েও ভালো জ্ঞান অর্জন সম্ভব।
যে যত বেশি সময় মার্কেটিং বিষয়ক পড়াশুনায় ব্যয় করবে সে তত বেশি এক্সপার্ট হয়ে উঠবেন। এটি অন্যদের থেকেও আপনাকে এগিয়ে রাখবে এবং পরবর্তীতে আবেদনকৃত পদে অধিক যোগ্য হিসেবে বিবেচনা করা হবে।
আপনি কি মার্কেটিংয়ের শিক্ষার্থী? কিংবা ভবিষ্যতে এই সেক্টরে ক্যারিয়ার গড়ার কথা ভাবছেন? তাহলে এই বিষয়গুলো খেয়াল রাখুন।
লেখক : ফারদীন হক জ্যোতি