আন্তর্জাতিক সংবাদ

মার্কিন শুল্ক নীতি আত্মঘাতী পদক্ষেপ

আন্তর্জাতিক ডেস্ক : বেইজিং সময় ১০ এপ্রিল দুপুর ১২:০১ থেকে চীন আমেরিকা থেকে আমদানি করা সমস্ত পণ্যে অতিরিক্ত ৮৪% শুল্ক আরোপ করেছে, যুক্তরাষ্ট্রের ক্রমবর্ধমান শুল্ক আগ্রাসনের বিরুদ্ধে পাল্টা ব্যবস্থা হিসেবে। অন্যান্য প্রতিশোধমূলক পদক্ষেপের মধ্যে রয়েছে: ডব্লিউটিওর বিরোধ নিষ্পত্তি প্রক্রিয়ায় অতিরিক্ত অভিযোগ দায়ের করা, একাধিক আমেরিকান প্রতিষ্ঠানকে ‘অবিশ্বস্ত সত্তা তালিকায়’ অন্তর্ভুক্ত করা ইত্যাদি। এ ছাড়াও, চীন প্রায় ৩০ হাজার শব্দের ‘চীন-মার্কিন অর্থনৈতিক ও বাণিজ্য সম্পর্ক সংক্রান্ত বিভিন্ন ইস্যুতে চীনের অবস্থান’ শীর্ষক একটি শ্বেতপত্র প্রকাশ করেছে, যা তাদের নীতি, নীতিমালা ও অবস্থানকে পদ্ধতিগতভাবে ব্যাখ্যা করে। আন্তর্জাতিক মিডিয়া মনে করে, ‘চীন যুক্তিসঙ্গত ও প্রমাণভিত্তিক উপায়ে মার্কিন শুল্ক আগ্রাসনের বিরুদ্ধে পাল্টা ব্যবস্থা নিয়েছে’। ব্লুমবার্গের মতে, ‘যারা মনে করেন বিশ্বের দ্বিতীয় বৃহত্তম অর্থনীতি সহজেই আঘাত মেনে নেবে বা হোয়াইট হাউসকে শান্ত করার জন্য তাড়াহুড়ো করবে, তাদের প্রত্যাশা সম্পূর্ণ অবাস্তব’।

চীনের শক্তিশালী পাল্টা ব্যবস্থার মুখে, আমেরিকা বিশ্বজুড়ে নিন্দা উপেক্ষা করে ঘোষণা করেছে যে তারা চীনের উপর শুল্ক বাড়িয়ে ১২৫% করবে। ১০ এপ্রিল, মার্কিন শেয়ার বাজারের তিনটি প্রধান সূচক নিম্নমুখী ছিল, অ্যাপল ও মাইক্রোসফ্টসহ মার্কিন প্রযুক্তি খাতের ‘সাত বিশালাকার’ কোম্পানির শেয়ারমূল্য ব্যাপকভাবে হ্রাস পেয়েছে। অবশ্যই, এর বিরুদ্ধে আবারও পাল্টা ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে-চীন স্পষ্টভাবে জানিয়েছে: যদি আমেরিকা শুল্ক যুদ্ধ ও বাণিজ্য যুদ্ধ চালাতেই থাকে, তবে চীন অবশ্যই শেষ পর্যন্ত লড়াই করবে।

এই বছর শুরু থেকেই, আমেরিকা তথাকথিত বাণিজ্য ঘাটতি কমানোর অজুহাতে বিভিন্ন শিল্পে শুল্ক, ‘দেশভিত্তিক’ শুল্ক, ‘মতুল্য শুল্ক’ ইত্যাদি নানা কৌশলে বাড়াচ্ছে, যা বিশ্বকে অস্থির করে তুলেছে এবং আমেরিকান সমাজেও আতঙ্ক সৃষ্টি করেছে। গোল্ডম্যান স্যাক্স সম্প্রতি একটি প্রতিবেদন প্রকাশ করে আগামী এক বছরে আমেরিকার অর্থনৈতিক মন্দার সম্ভাবনা ৩৫% থেকে বাড়িয়ে ৪৫% করেছে। আমেরিকার দুই প্রাক্তন অর্থমন্ত্রী ল্যারি সামার্স ও জ্যানেট ইয়েলেন মার্কিন শুল্ক নীতিকে ‘সবচেয়ে খারাপ আত্মঘাতী পদক্ষেপ’ বলে সমালোচনা করেছেন, যা বিশ্বজুড়ে আমেরিকার বিশ্বাসযোগ্যতা মারাত্মকভাবে ক্ষুন্ন করেছে।
আমেরিকার এই উন্মত্ত আচরণের বিপরীতে, চীন তার নিজস্ব ‘স্থিতিশীলতা’ দিয়ে বিশ্বকে নিশ্চয়তা দিচ্ছে।

প্রথমত, চীনের অবস্থান স্পষ্ট ও ধারাবাহিক। যেমন শ্বেতপত্রে উল্লেখ করা হয়েছে, চীন-মার্কিন অর্থনৈতিক ও বাণিজ্য সম্পর্কের মূল ভিত্তি হলো পারস্পরিক সুবিধা ও জয়-জয়। উভয়পক্ষ সমতার ভিত্তিতে আলোচনা ও পারস্পরিক উপকারিতামূলক সহযোগিতার মাধ্যমে তাদের বাণিজ্যিক মতবিরোধ সমাধান করতে পারে। চীন শুধু কথাই বলে না, কাজেও তা করে। এটি কেবল তাদের নিজস্ব সার্বভৌমত্ব, নিরাপত্তা ও উন্নয়নের স্বার্থ রক্ষার জন্যই নয়, আন্তর্জাতিক বাণিজ্য নিয়ম ও বৈশ্বিক ন্যায়বিচার রক্ষার জন্যও।

একই সময়ে, চীনের ‘স্থিতিশীলতা’ আসে নিজের কাজে মনোনিবেশ করার আত্মবিশ্বাস থেকে। চলতি বছরের প্রথম প্রান্তিকে, চীনের অর্থনীতি উন্নতির ধারা বজায় রেখেছে। সম্প্রতি প্রকাশিত মার্চ মাসের ভোক্তা মূল্যসূচক (সিপিআই) দেখিয়েছে যে, সিপিআই উল্লেখযোগ্যভাবে বেড়েছে, যা ইঙ্গিত দেয় যে ভোক্তা চাহিদা বৃদ্ধির নীতির প্রভাব আরও স্পষ্ট হচ্ছে। আর কয়েক দিনের মধ্যে ১৩৭তম চীন আমদানি-রপ্তানি পণ্য মেলা শুরু হবে, যেখানে অংশগ্রহণকারী প্রতিষ্ঠানের সংখ্যা প্রথমবারের মতো ৩০,০০০ ছাড়িয়েছে, যা গতবারের তুলনায় প্রায় ৯০০ বেশি। চীন অবিচ্ছিন্নভাবে বিশ্বের সাথে সুযোগ ভাগ করে নিচ্ছে, আর বিশ্বও চীনের প্রতি আস্থার ভোট দিচ্ছে।

একটি দায়িত্বশীল বৃহৎ শক্তি হিসেবে, চীন তার নীতির ‘স্থিতিশীলতা’ দিয়ে একটি উন্মুক্ত বিশ্ব অর্থনীতি গঠনে ভূমিকা রাখছে। সম্প্রতি, চীনের উচ্চপদস্থ নেতারা ইইউ ও আসিয়ান কর্মকর্তাদের সাথে যোগাযোগ করে যোগাযোগ ও সমন্বয় জোরদার করা এবং বহুপাক্ষিক বাণিজ্য ব্যবস্থা রক্ষার ওপর জোর দিয়েছেন, পাশাপাশি উল্লেখ করেছেন যে চীন অব্যাহতভাবে তার দরজা খোলা রাখবে। আন্তর্জাতিক বিশ্লেষকদের মতে, নিজের নীতি ইচ্ছামত পরিবর্তন করা আমেরিকার তুলনায়, চীনই হলো আরও নির্ভরযোগ্য অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধির উৎস। সম্প্রতি, অর্থনৈতিক সহযোগিতা ও উন্নয়ন সংস্থা (ওইসিডি) চীনের অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধির হার ০.১ শতাংশ বাড়িয়েছে।

ঝড় উঠলেও, চীন দৃঢ়ভাবে দাঁড়িয়ে থাকবে। চীনা সংস্কৃতি ‘সাম্য ও শান্তি’কে গুরুত্ব দেয়, আবার একই সাথে আধিপত্য ও একচেটিয়া আচরণের বিরোধিতা করে। যখন শুল্কের ঝড় আঘাত হানে, চীন তার নিজস্ব ‘স্থিতিশীলতা’ দিয়ে ঝড় মোকাবেলা করে, নিয়ম রক্ষা করে, ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠা করে এবং বিশ্বায়নের জাহাজকে প্রতিকূল স্রোত ও বিপদসংকুল পথ পেরিয়ে উন্মুক্ততা ও সহযোগিতার সঠিক পথে নিয়ে যায়।
সূত্র : স্বর্ণা-হাশিম-লিলি, চায়না মিডিয়া গ্রুপ।

image_print
Spread the love
0 0 votes
Article Rating
Subscribe
Notify of
guest
0 Comments
Inline Feedbacks
View all comments