কভারেজ নিউজজাতীয়বিনোদন

 ‍‌মাছে ভাতে বাঙালি, ঐতিহ্যমন্ডিত পিঠাপুলি, রন্ধন আর পিঠার বাহারে শিল্পী আছে ঘরে ঘরে

নিজস্ব প্রতিবেদক : বাংলাদেশে পিঠা আনন্দ ও উদযাপনের প্রতীক, যা শীতের সকাল এবং সন্ধ্যাকে উপভোগ্য করে তোলে। শীতকালে আমাদের দেশে বিয়ের মৌসুম চলে আর পিঠা এই বিয়ে উদযাপনের একটি অন্যতম অংশ। কিন্তু সময়ের সঙ্গে সঙ্গে মানুষের জীবনযাত্রা বদলে যাচ্ছে, বাড়ির ওঠোনে পিঠা তৈরীর সেই আমেজ, নগরের এই ব্যস্তময় জীবনের গর্ভে হারিয়ে যাচ্ছে অনেকটা। তাই অঞ্চলভিত্তিক বিশেষায়িত ও লুপ্তপ্রায় পিঠা শিল্পকে তুলে আনার লক্ষ্যে সারাদেশব্যাপী এ আয়োজন করছে বাংলাদেশ শিল্পকলা একাডেমি।

সংস্কৃতি ও ঐতিহ্য পিঠা প্রত্যেক দেশেরই খাদ্য ও সংস্কৃতি হিসেবে একটি মিষ্টান্ন থাকে, যা সে দেশের প্রতিনিধিত্ব করে। বাংলাদেশের ক্ষেত্রে তা অবশ্যয় পিঠা। বাঙালি লোক-সংস্কৃতির অন্যতম উপাদান। পিঠা পুলির বাংলাদেশ এটি আমাদের দীর্ঘকালের পরিচয় বহন করে। হাজার বছর ধরে বাঙালির উৎসব-পার্বণে পিঠা অনিবার্য উপাদান হিসেবে আমাদের সংস্কৃতির অংশ হয়ে আছে। পিঠার নামে যেমন বৈচিত্র রয়েছে তেমনি স্বাদে-গন্ধেও রয়েছে বিশেষত্ব। এক সময় পাড়ায়-পাড়ায়, মহল্লায়-মহল্লায় ছোট- বড় সকলেই পিঠা খাওয়ার আনন্দে মেতে উঠত। তাই আমাদের কাছে পিঠা শুধু একটি খাবার নয়। এটি রন্ধন শিল্প, ঐতিহ্য এবং আনন্দের সংমিশ্রণ।

সংস্কৃতির অন্যতম অনুষঙ্গ পিঠাকে জাতীয় পর্যায়ে আরো প্রসারিত করতে সংস্কৃতি বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের পৃষ্ঠপোষকতায়, বাংলাদেশ শিল্পকলা একাডেমির আয়োজনে দেশের ৬৪ জেলায় জাতীয় পিঠা উৎসব-২০২৪ আয়োজনের উদ্যোগ গ্রহণ করা হয়েছে। এ উপলক্ষ্যে আজ সোমবার বিকাল ৩ টায় বাংলাদেশ শিল্পকলা একাডেমির জাতীয় নাট্যশালা মিলনায়তনের সেমিনার কক্ষে সংবাদ সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়। এতে উপস্থিত ছিলেন বাংলাদেশ শিল্পকলা একাডেমির মহাপরিচালক লিয়াকত আলী লাকী। বক্তব্যে এবং সাংবাদিকদের প্রশ্নোত্তরে তিনি বলেন, “গ্রামীণ পর্যায় থেকে আমরা পিঠাশিল্পীদের তুলে আনার চেষ্টা করছি। জাতীয় পর্যায়ে বড় পরিসরে এ পিঠার আয়োজন আমরা করছি। পরিবারের সদস্যদের জন্য ঘরে ঘরে আমাদের মায়েরা যত্ন করে যে পিঠা তৈরী করেন লোকজ সেই আদি পিঠাগুলোকে বাঁচিয়ে রাখতে চাই আমরা।”

“মাছে ভাতে বাঙালি, ঐতিহ্যমন্ডিত পিঠাপুলি রন্ধন আর পিঠার বাহারে শিল্পী আছে ঘরে ঘরে” প্রতিপাদ্যে “পারিবারিক ঐতিহ্য পরম্পরার আদি পিঠাগুলোকে বাঁচিয়ে রাখতে চাই আমরা”- লিয়াকত আলী লাকী, মহাপরিচালক, বাংলাদেশ শিল্পকলা একাডেমি।

 ‍‌“মাছে ভাতে বাঙালি, ঐতিহ্যমন্ডিত পিঠাপুলি, রন্ধন আর পিঠার বাহারে শিল্পী আছে ঘরে ঘরে” এই প্রতিপাদ্যে ৩১ জানুয়ারি থেকে ১০ ফেব্রুয়ারি ২০২৪ পর্যন্ত শুরু হতে যাচ্ছে জাতীয় পিঠা উৎসব । উৎসবে বিভিন্ন জেলার প্রান্তিক পর্যায় থেকে অংশগ্রহণ করবেন পিঠাশিল্পীরা। এবার উৎসবে খানিকটা ভিন্নতা যোগ করা হয়েছে। যারা পারিবারিক ঐতিহ্য ধরে পরিবারের জন্য পিঠা তৈরী করেন এবং লুপ্ত প্রায় পিঠাকে বংশ পরম্পরায় ধরে রেখেছেন তাদের অগ্রাধিকার দেয়া হয়েছে। প্রতিদিন ২ জন করে শিল্পী পিঠা উৎসবে একটি স্টলে একদিন অংশগ্রহণ করবেন এবং মূল্যায়ন কমিটি পিঠার গুণগত, ভিন্নতা এবং স্বাদ যাচাই করে নম্বর প্রদান করবেন। তার মাধ্যমেই ১ম, ২য় এবং ৩য় জন পুরস্কৃত হবেন। এবার পিঠা উৎসবে অংশ নেবে ৫০টির অধিক স্টল। অংশগ্রহণকারী প্রত্যেককে বাংলাদেশ শিল্পকলা একাডেমির সনদ প্রদান করা হবে।

এছাড়াও দেশব্যাপী ৬৪ জেলায় একযোগে ৩১ জানুয়ারি থেকে ২ ফেব্রুয়ারি ২০২৪ পর্যন্ত অনুষ্ঠিত হবে পিঠা উৎসব । জেলা শিল্পকলা একাডেমির ব্যবস্থাপনায় অঞ্চল ভিত্তিক পিঠাশিল্পীরা এতে অংশগ্রহণ করবেন।

জাতীয় পিঠা উৎসব ২০২৪-এর উদ্বোধনী অনুষ্ঠান ৩১ জানুয়ারি ২০২৪, বিকাল ৫টায় বাংলাদেশ শিল্পকলা একাডেমিতে অনুষ্ঠিত হবে। অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে থাকবেন মন্ত্রিপরিষদ সচিব মোঃ মাহবুব হোসেন। বিশেষ অতিথি হিসেবে থাকবেন সংস্কৃতি বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের সচিব খলিল আহমদ এবং সম্মানিত অতিথি হিসেবে থাকবেন মঞ্চসারথি আতাউর রহমান। প্রবন্ধ পাঠ করবেন লেখক ও গবেষক বাশার খান। স্বাগত বক্তব্য প্রদান করবেন সালাহউদ্দিন আহাম্মদ, সচিব (উপসচিব), বাংলাদেশ শিল্পকলা একাডেমি এবং সভাপতিত্ব করবেন বাংলাদেশ শিল্পকলা একাডেমির মহাপরিচালক লিয়াকত আলী লাকী।

এছাড়াও পিঠা উৎসবে প্রতিদিন বিকেল ৫টায় থাকবে লোক-সাংস্কৃতিক পরিবেশনা।

উল্লেখ্য যে বাংলাদেশে ভৌগোলিক নির্দেশক পণ্য (নিবন্ধন ও সুরক্ষা) আইন পাস হয় ২০১৩ সালে। এর পর গত ১১ বছরে মিষ্টান্নের মধ্যে জিআই স্বীকৃতি পেয়েছে- নাটোরের কাঁচাগোল্লা, বগুড়ার দই, ‘টাঙ্গাইলের পোড়াবাড়ির চমচম’ কুমিল্লার রসমালাই এবং কুষ্টিয়ার রসমালাই।

image_print
Spread the love
0 0 votes
Article Rating
Subscribe
Notify of
guest
0 Comments
Inline Feedbacks
View all comments