বুলেটিন নিউজ ২৪.কম

Home » মরুভূমিকে একটি মরূদ্যানে পরিণত করার সাহস

মরুভূমিকে একটি মরূদ্যানে পরিণত করার সাহস

by বুলেটিননিউজ২৪
০ comments

আন্তর্জাতিক : চীনের চতুর্থ বৃহত্তম মরুভূমি টেংগার মরুভূমির দক্ষিণ প্রান্তে একসময় স্থানীয়দের কাছে ‘মৃত্যুর সাগর’ নামে একটি বালুর সমুদ্র ছিল ‘বাবুশা’। ৪০ বছরেরও বেশি সময় আগে, এখানকার হলুদ বালি সূর্যের আলোকে আটকে রেখেছিল, উর্বর ক্ষেতগুলোকে গ্রাস করেছিল ও গ্রামগুলোকে পিছিয়ে থাকতে বাধ্য করেছিল। ৪০ বছরেরও বেশি সময় পরে, তিন প্রজন্মের প্রচেষ্টায়, উত্তর থেকে দক্ষিণে ১০ কিলোমিটার ও পূর্ব থেকে পশ্চিমে ৮ কিলোমিটার বিস্তৃত বায়ু-বিরতি এবং বালি স্থিরকরণের জন্য একটি সবুজ করিডোর নির্মিত হয়েছে। এই করিডোরে বন ও ঘাসের আচ্ছাদনের হার ৭০ শতাংশেরও বেশি। গোবি মরুভূমিতে সবুজ অলৌকিক ঘটনা কীভাবে সৃষ্টি হয়েছিল?

উত্তর-পশ্চিম চীনের কানসু প্রদেশের কুলাং জেলায় হান, হুই ও চাংসহ ৩১টি জাতির বাসিন্দারা বসবাস করেন। এখানে উত্তরে টেংগার মরুভূমির সীমানা ঘেঁষে, ১.৬ হেক্টর এলাকাজুড়ে মরুভূমি এবং ১৩২ কিলোমিটার দীর্ঘ বায়ু ও বালির লাইন রয়েছে। ৪০ বছরেরও বেশি সময় আগে, টেংগার মরুভূমি প্রতিবছর ৭.৫ মিটার বেগে দক্ষিণ দিকে সরে যেত। যার ফলে আশেপাশের গ্রাম, কৃষিজমি ও মানুষের জীবন-জীবিকা ব্যাপকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হতো। অসংখ্য মানুষ তাদের বাড়িঘর ফেলে মরুভূমি ছেড়ে পালাতে বাধ্য হতেন। বালিঝড়ের সবচেয়ে বড় উৎস ছিল ‘বাবুশা’, একটি অনুর্বর ভূমি।

১৯৮১ সাল কুলাং জেলার কুও চাও মিং, হে ফা লিন, শি মান, লুও ইউয়ান খুই, ছেং হাই ও চাং রুন ইয়ান এই ৫০ বছর বয়সী ছয় জন কৃষক যৌথ ইজারা, উৎপাদন ও ব্যবস্থাপনার আওতায়, বাবুশা যৌথ বন খামার প্রতিষ্ঠা করেন। স্থানীয়রা তাদের ‘ছয় বৃদ্ধ’ বলে ডাকত এবং এইভাবে মরুভূমি থেকে তাদের মাতৃভূমি পুনরুদ্ধারের কাজ শুরু করেন তাঁরা।

বালি নিয়ন্ত্রণ ও বনায়নের প্রাথমিক দিকে পরিস্থিতি ও সুযোগ-সুবিধা সহজ-সরল ছিল। কেবল একটি গাধা, একটি গাড়ি, একটি বড় বালতি এবং কয়েকটি বেলচা ছিল তাদের সম্বল। মরুভূমিতে গাছ লাগানো কঠিন এবং তাদের রক্ষণাবেক্ষণ ততোধিক কঠিন। গাছ সুরক্ষার জন্য তাঁরা মরুভূমিতে খেতেন ও ঘুমাতেন। যদিও প্রাথমিক পর্যায়ে চারাগাছের বেঁচে থাকার হার কম ছিল, তাঁরা দৃঢ়ভাবে বিশ্বাস করতেন যে, যতক্ষণ জীবিত গাছ থাকবে, ততক্ষণ এই বালি নিয়ন্ত্রণ করা যাবে। প্রথম বছরে রোপণ করা চারাগাছের ৭০ শতাংশ বালিঝড়ে ধ্বংস হয়ে যায়।
পর্যবেক্ষণের মাধ্যমে তারা আবিষ্কার করেন যে, যেখানে ঘাস আছে, সেখানে গাছ টিকে থাকতে পারে। তাই তারা চোরাবালি স্থিতিশীল করার জন্য গমের খড়কে চৌকো করে বেঁধে দেন এবং চারাগাছের বেঁচে থাকার হার ৩০ থেকে বেড়ে ৭৬ শতাংশে উন্নীত হয়। ২৭০০ হেক্টরেরও বেশি বালির টিলা সবুজে ঢাকা দিতে ছয় জন বৃদ্ধের দশ বছর সময় লেগেছে এবং আশেপাশের চারটি গ্রাম ও শহর তখন আবার জনবহুল হয়ে ওঠে।

নব্বইয়ের দশকে যখন বালি নিয়ন্ত্রণকর্মীদের প্রথম প্রজন্ম হে ও শি একের পর এক মারা যান, তখন ছয়টি পরিবারের সন্তানরা বালি নিয়ন্ত্রণের কাজ উত্তরাধিকারসূত্রে পান। দ্বিতীয় প্রজন্মের বালি নিয়ন্ত্রণকর্মীদের প্রচেষ্টায় বাবুশার ৫০০০ হেক্টর জমি নিয়ন্ত্রণের কাজ ২০০৩ সালে সম্পন্ন হয়। বাবুশা মরুভুমি ভালোভাবে নিয়ন্ত্রিত হওয়ার পর, তাঁরা টেংগার মরুভূমির হাইগাংশা, ডাকাওশা ও মোমিশা বালুকাময় এলাকায় স্বেচ্ছায় গাছ লাগানোর কাজ শুরু করেন, যেগুলো বন খামার থেকে ২৫ কিলোমিটার দূরে অবস্থিত এবং যেখানে বালিঝড়ের ক্ষয়ক্ষতি সবচেয়ে বেশি। এসব জায়গায় বছরের প্রায় এক-তৃতীয়াংশ সময় ধরে ৮ স্তর বা তারচেয়ে বেশি তীব্র বাতাস বইতে থাকে। বালিনিয়ন্ত্রণকর্মীরা ১৬ বছর সময় দিয়ে ৪০০০ হেক্টরেরও বেশি চলমান বালির টিলা আটকাতে ঘাসের গ্রিড ব্যবহার করেন, যার ফলে ২ কোটি ঝাউ ও স্যাক্সৌল গাছ এখানে শিকড় গজাতে সক্ষম হয়।

২০১৬ সাল থেকে কুও সির প্রতিনিধিত্বকারী তৃতীয় প্রজন্মের বালিনিয়ন্ত্রণকর্মীরা বাবুশা বন খামারে আসেন। গড়ে ৩৫ বছর বয়সী এই দলের মধ্যে ১২ জন বিশ্ববিদ্যালয়ের বনবিদ্যা বিভাগ থেকে স্নাতক হয়েছেন। পূর্বসূরীদের চেতনা উত্তরাধিকার করার পাশাপাশি, তাঁরা বৈজ্ঞানিক ও দক্ষতার সাথে বালি নিয়ন্ত্রণ ও পুনর্বনায়নের নতুন উপায় অন্বেষণ করে চলেছেন। মরুকরণ নিয়ন্ত্রণের সময় তাঁরা বালি শিল্পের বিকাশ শুরু করেন। মরুভূমির জিনসেং নামে পরিচিত সিস্তানচে ডেজার্টিকোলাকে হ্যালোক্সিলন অ্যামোডেনড্রন গাছের উপর গ্রাফট করে, স্থানীয় জনগণের ধনী হওয়ার পথকে প্রশস্ত করেন।

২০১৯ সালে যখন চীনের প্রেসিডেন্ট সি চিন পিং বাবুশা বন পরিদর্শন করছিলেন, তখন তিনি ছয় জন বৃদ্ধের তিন প্রজন্মের পরিশ্রমের স্বীকৃতি দেন এবং বলেন, ‘কঠিনতার মুখে মাথা নত করেননি এবং মরুভূমিকে একটি মরূদ্যানে পরিণত করার সাহস করেছিলেন তাঁরা।‘

সূত্র: ছাই-আলিম-ওয়াং হাইমান, চায়না মিডিয়া গ্রুপ।

image_print
Spread the love

You may also like

0 0 votes
Article Rating
Subscribe
Notify of
guest
0 Comments
Inline Feedbacks
View all comments

সম্পাদক ও প্রকাশক মো. মনজুরুল ইসলাম (মনজু)

সম্পাদক ও প্রকাশক মো. মনজুরুল ইসলাম (মনজু)

©2022 Bulletinnews24. All Right Reserved. Designed and Developed by bulletinnews24.com