ফিচার

বেশি বেশি গাছ লাগান সারা বছর ফল খান

বাংলাদেশে জৈষ্ঠমাস মধুমাস হিসাবে খ্যাত। এ মাসে সবচেয়ে বেশী ফল পাওয়া যায়। তবে সারা বছরেই আমাদের দেশে কোন কোন জাতের ফল পাওয়া যায়। কিন্তু ব্যাপক ভাবে ফল গাছ ধংস করার কারনে এবং নতুন গাছ রোপন না করায় দেশী ফলের অভাব এখন প্রকট হয়ে উঠেছ্।ে সেসব স্থানে বিদেশী রাসায়নিক পদার্থ ব্যবহার করে আমদানী করা ক্ষতিকর ফল বাজার দখল করেছে। অথচ একটু সচেতন হলেই আমরা সারা বছর দেশে উৎপাদিত তাজা ফল খেতে পারি। ইদানিং আমাদের দেশে জ্বালানী, ঘর দরজা নির্মাণ এবং আসবাবপত্র তৈরীর জন্য প্রচুর কাঠের প্রয়োজন হচ্ছে। কাঠের এ চাহিদা পুরনের জন্য ইউক্যালিপটাস সহ নানা প্রজাতির গাছের বানিজ্যিক ভিত্তিতে চাষ করা হচ্ছে। এসব গাছ কোন উপকারী ফুল-ফল দেয়না। ওষধি তো নয়ই। পরিবেশ বান্ধব নয়। আবহাওয়ায় বিরূপ প্রভাব সৃষ্টি করে। আশপাশের ফলদ গাছে ফল ধরেনা। অথচ আমাদের দেশের অধিকাংশ ফলগাছ থেকে উন্নত মানের কাঠ উৎপাদিত হয়। এসব কাঠ ইউক্যালিপটাস থেকে অনেক দামী। সব ফলই উন্নত প্রোটিন এবং ভিটামিন সমৃদ্ধ। এর শিকড় বাকড় পাতা ছাল প্রভৃতিও ওষধি গুন সমৃদ্ধ। ফলে রয়েছে নানা রোগের প্রতিষেধক এবং প্রতিরোধ ক্ষমতা। এছাড়া বনজ কাঠ গুলো শুধু উন্নত মানের কাঠেরই জোগান দেয়না, এর ফল ফুল, ছাল, পাতা সবই ওষধি গুন সমৃদ্ধ। ওষধ তৈরীতে এসব দ্রব্য ব্যবহার করা হয়। আর এমন সব গাছ গাছলি রয়েছে যেগুলো থেকে তেমন কাঠ হয়না কিন্তু অসাধারণ ওষধ গুন সম্পন্ন। আবার বনজঙ্গলে প্রচুর লতা, গুল্ম জন্মে যার ওষধি গুন রয়েছে। বর্তমানে বনজঙ্গলের অস্তিত্ব বিলীন হওয়ার এসব গাছ গাছাড়ী দু¯প্রাপ্য হয়ে পড়েছে। তবে সৌখিন ব্যক্তি এবং কবিরাজগন নিজেদের বাগবাগিচায় এগুলোর চাষ করে অস্তিত্ব টিকিয়ে রেখেছেন আমার বর্তমান নিবন্ধে গাছ গাছালী নিয়ে বিস্তারীত বিবরণ না দিয়ে শুধু প্রচলিত কয়েকটি ফল নিয়ে আলোচনা করতে চাই। কেননা হাজার রকমের গাছ নিয়ে গবেষনা করার যোগ্যতা আমার নেই।

আম হচ্ছে আমের রাজা। প্রাচীন কাল থেকেই আম আমাদের দেশে ফল হিসাবে সমাদত। বর্তমানে নানা গবেষনার মাধ্যমে আমের নতুন নতুন জাত উদ্ভাবন করা হচ্ছে। বর্তমানে অন্তত: আশি প্রজাতির আম আমাদের দেশে পাওয়া যায়। কোন কোন জাতের আম বছরে দু অথবা তিনবার ফলন দেয়। পরিকল্পিত ভাবে চাষ করলে বছরে অন্তত: সাত মাস সুমিষ্ট আম পাওয়া যাবে। আম গাছের কাঠ টেকসই এবং মূল্যবান। আম থেকে চাটনি, আচার, আমচুর, আমসত্ব, মোরব্বা জুস, জেলি ইত্যাদি তৈরী করাে যায়। পাকা আম ক্যারটিন সমৃদ্ধ। পাকা ফল ল্যাকজেটিভ, রোচক, টনিক বা বলকারক। আম লিডার বা যকৃতের জন্য উপকারী। রাতকানা এবং অনত্ব রোধে কাঁচাÑপাকা আম মহোষধ। রক্তপড়া বন্ধকরন প্রভূতি দূরী করনে, দাঁতের ব্যধা উপশমে, আমাশা, পাতলা পায়খানা, প্রস্রাবের জ্বালা দূরী করনে আম গাছের বিভিন্ন অঙ্গেঁর রগ উপকারী। জ্বর, বুকের ব্যথা, বহুমূত্র রোগের জন্য আমপাতা চুর্ন এবং গাছের আঠা পা ফাটা এবং চর্মরোগের অব্যর্থ ওষুধ। কাঁঠাল আমাদের জাতীয় ফল। সারা বছরেই এ ফল উৎপাদিত হয়। তবে মধু মাসে এ ফল বেশি পাওয়া যায়। সারা বছরে উৎপাদনের জন্য নানা প্রজাতির কাঠাঁল ফল চাষ করা যায়। কাঠাঁলে প্রচুর শর্করা, আমিষ ও ভিটামিন এ রয়েছে। কাঁচা ফল তরকারী হিসাবে ব্যবহার করা যায়। বীজ ময়দা এবং সজ্বি হিসাবে ব্যবহার করা যায়। বেজে অথবা পুড়ে সিদ্ধ করে খাওয়া যায়। কাঁঠালের শাঁস অত্যন্ত পুষ্টিকারক। কাঁঠালর পাতার ছাইয়ের সাথে ভ্ট্টুা এবং নারকেলের খোসার ছাই মিেিয় নারকেল তেলের সাথে মিশিয়ে ক্ষতস্থানে লাগালে ঘা শুকিয়ে যায়। শিকড়ের রস জ্বর এবং পাতলা পায়খানা নিরাময়ে উপকারী। কাঁঠালেরর কাঠ উন্নত মানের এবং দামী। লিচু অত্যন্ত সুস্বাদু এবং সুমিষ্ট ফল। এটি প্রোটিন সমৃদ্ধ এবং নানা ভেষজ গুনে সমৃদ্ধ। বোলতা, বিচ্ছু কামড়ালে এর পাতা রস ব্যবহার করলে উপকার পাওয়া যায়। কাসি, পেটব্যথা, টিউমার, গ্লান্ডের বৃদ্ধি দমনে লিচু পল কার্যকর। চর্মরোগে লিচু বীজের পেষ্ট উপকারে লাগে। পানিতে সিদ্ধ করা শিকড়, বাকল, বীজ, ফুল গলার ঘা নিরাময় করে। কচি লিচু বসন্ত রোগে এবং বীজ অম্ল ও স্নাযুবিক যন্ত্রনার ওষুধ। বাকল এবং শিকড়ের কাথ দিয়ে কুলি করলে গলা ব্যথা দুর হয়। লিচুর কাঠ অত্যন্ত শক্ত। ঘরের খুটি, দরজা, জানালা তৈরীতে ব্যবহার করা যায়। পেয়ারা নানা জাতের। গাছ ছোট আকারের কিন্তু শক্ত। জ্বালানী হিসাবে ভাল। সারা বছরই পাওয়া যায়। পুষ্টিমানে আপেলের চেয়ে উৎকৃষ্ট। শিকড়, গাছের ছাল, পাতা কলেরা, আমাশাসহ বিভিন্ন পেটের পীড়া উপশম করে। ঘায়ে থেতলানো পাতার প্রলেপ দিলে উপকার পাওয়া যায়। পাতা চিবালে দাতের ব্যথা কমে যায়।কুল স্বাদ ও পুষ্টি মানের বিচারে বাংলাদেশের একটি উৎকৃষ্ট ফল। নানা জাতের, ভিন্ন স্বাদের কুল রয়েছে আমাদের দেশে। বর্তমানে গবেষনার মাধ্যমে বড় আকারের কুলের উদ্ভব ঘটানো হয়েছে। কুলের ফল এবং পাতা বাটা বাত রোগে উপকারী। ফল রক্ত পরিস্কার ও হজম শক্তি বাড়ায়। ফুল থেকে তৈরী ওষুধ পেটের গ্যাস, অরুচি, প্রফর প্রভৃতি রোগের কাজ করে। শুকনো কুলের গুড়া আমের গুড় মিশিয়ে খেলে মেয়েদের সাদাস্রাবের উপকার হয়। পুলের মধু উৎকৃষ্ট। লেবু ভিটামিন সি সমৃদ্ধ ফল। এটি টক এবং নানা জাতের গাছ ছোট। তবে বাদামী এবং কমলা লেবুর গাছ কিছুটা বড় হয়। পাতি ও কাগজি লেবুর গাছ আরো ছোট এবং কান্ড চিকন, ডাল পালা বেশী। গায়ে কাঁটা আছে। গবেষনার মাধ্যমে বর্তমানে উন্নত জাতের ওষধি গুন সম্পন্ন লেবুর উদ্ভব ঘটানো হয়েছে। লেবুর রস মধুর সাথে মিশিয়ে অথবা লবন অথবা আদার সাথে মিশিয়ে পান করলে ঠান্ডা ও সর্দিকার্শির উপকার হয়। বাতাবী লেবুর পাতা, ফুল, কোসা সিদ্ধ করে ঐ পানি পান করলে মৃগী রোগীর উপশম হয়। জাম এর পরিচিতি খুব বেশী দেয়ার দরকার নেই। আমের পরই এর স্থান। এর দুটি উপজাত রয়েছ্ েকালো জাম এবং খুদি জাম। খুদি জাম সাধারণ: জঙ্গঁলে জন্মে। তাজা ফল হিসাবে জাম খাওয়া হয়। এ থেকে সুন্দর রস, সস, স্কোয়াশ প্রভূতি তৈরী করা যায়। জাম পুষ্টিকর ফল। কাচি পাতার রস পেটের পীড়া নিরাময় করে। জামের বীজ যায়বেটিস রোগের ওষুধ। পাকা জামের সাথে সৈন্ধব লবন চটকিয়ে কয়েক ঘন্টা ন্যাকড়ার পুটলিতে বেঁধে টাঙ্গিয়ে রাখার পর নির্গত রস পাতলা পায়খানা বমি অরুচি দূর করে। জাম ও আমের রস একত্রে পান করলে বহুমূত্র রোগীর উপকার হয়। জামের কাঠ শক্ত এবং টেকসই। এ দামী কাঠ ফার্নিচার ও খর দরজা তৈরীতে ব্যবহার হয়। বেল বাংলাদেশের একটি অতি পরিচিত ফল। নানা গুন ও পুষ্টি উপাদানে সমৃদ্ধ বেল কোষ্টকাঠিন্য দূর করে এবং আমাশয় রোগে কার্যকরী। হজমশক্তি বাড়িয়ে বলবর্ধক হিসাবে কাজ করে। পাতার রস মধু এবং গোলমরিচের গুড়াসহ সেবন করলে জন্ডিস রোগ নিরাময় হয়। কাঠ শক্তি এবং উন্নমানের গৃহস্থলী কাজে ব্যবহৃত হয়। কতবেল নানা পুস্টি উপাদানে ভরপুর। যকৃত এবং হৃদপিন্ডের বলবর্ধক হিসাবে কাজ করে। বিষাক্ত পোকামাকড় কামড়ালে ফলের শাঁষ এবং খোসার প্রলেপ দিলে উপকার হয়। কচি পাতার রস দুধ ও মিছরি সহযোগে পান করলে পিত্ত রোগ ও পেটের অসুখ ভাল হয়। কামরাঙ্গা সাড়া বছর ধরেই পাওয়া যায়। ভিটামিন-সি সমৃদ্ধ একটি পুষ্টিকর ফল। কামরাঙ্গা দিয়ে জামে, জেলি, মোরাব্বা, টাকনি, আচার প্রভৃতি তৈরী করা যায়। পাকা কামারাঙ্গা রক্তক্ষরণ বন্ধ করে। ফল ও পাতা সিদ্ধ করে পানি পান করলে বমি বন্ধ হয়। পাতার গুড়া সেবনে জল বসন্ত এবং কৃমি রোগ আরোগ্য হয়। কাঠ শক্ত ও উন্নত মানের। নানা গৃহস্থলী কাজে ব্যবহার করা হয়। ডালিম গাছ চোট আকারের। কিন্তু ফল সুস্বাদু এবং উপকারী। ডালিম রোগীর পথ্য বিশেষ করে কুষ্ট রোগীদের জন্য বিশেষ ফলপ্রদ। কাঁচা ডালিম, গাছের পাতা, ছালের রস পাতলা পায়খানা আমাশয় এবং রক্তক্ষরন বন্ধ করে। গাছ ছোট হলেও কাঠ শক্ত। আতা ও শরিফা প্রায় একই শ্রেনীর গাছ। ফল দেখতে ভিন্ন রকমের হলেও স্বাদ পায় অভিন্ন। কাঠ চিমড়া। গৃহস্থলীর নানা কাজে ব্যবহার করা হয়।। শরিফা এবং আতাফল বলকারক, বাত ও পিত্তনাশক, বমননাশক, রক্ত ও মাংস বৃদ্ধি কারক। শিকড়ের রস আমাশয় রোগে উপকারী। আমড়া কাঁচা আমের বিকল্প হিসাবে বেশ পরিচিত। গাছ আকারে বড় হলেও শক্ত নয়। জালানী হিসাবে ব্যবহার করা যায়। ভিটামিন-সি সমৃদ্ধ এফলে প্রচুর পুষ্টি উপাদান রয়েছে। পিত্ত ও কফ নিবারক, আমাশয় প্রতিরোধক এবং কন্ঠস্বর পরিস্কারক। অরুচি ও পত্তিবমন দূর করে। বর্তমানে এর বার মাসই জাত আবিস্কৃত হয়েছে। গাছ দ্রুত বর্ধনশীল। সফেদা একটি সুস্বাদু ফল। এটি ও পুষ্টি সমৃদ্ধ। জÍ নাশক হিসাবে কাজ করে। ফলের খোশা শরীরের ত্বক ও রক্তনালী সুদৃঢ় করে। কাঠ নরম। জ্বালানী হিসাবে ব্যবহার হয়। গাছ দ্রুত বর্ধনশীল। তবে আকারে বেশী বড় হয়না। জামরুল রসালো ফল। ভিটামিন-বি-২ সহ নানা পুষ্টি গুনে সমৃদ্ধ। বহুমুত্র রোগীর তৃষ্ণা নিবারনে সহায়ক। কাঠ শক্ত এবং উন্নত মানের। নারিকেল অত্যান্ত উপদেও ফল। কাঁচা নারিকেল বা ডাবের পানিতে রয়েছে ক্যালসিয়াম, ফসফরাস। পেটের নানা রোগে গ্লুকোজ, স্যালাইনের বিকল্প হিসাবে ডাবের পানি উপযোগী। পাতলা পায়খানা এবং বমির কারণে শরীরে পানির অভাব দেখা দিলে তা দূর করে। পিত্ত নাশক। ফলের মালার ছাই পাথরবাটি দিয়ে চাপা দিলে পাথরের গায়ে যে গাম হয় তা দাদ রোগ নিরাময় করে। পাকা নারিকেল খেতে সুস্বাদু এবং তা দিয়ে নানা রকমের পিঠা সহ মুখরোচক খাদ্য তৈরী হয়। গাছের কান্ড দিয়ে ঘর তৈরীর সরঞ্জাম প্রস্তুত করা যায়। জলপাই কাঁচা পাকা দু প্রকারেই খাওয়া যায়। এর চাটনি ও আচার খেতে মজাদার। পাকা ফলে এর থাকে। বীজেও তেল থাকে। জলপাইয়ের তেল ম্যাসেজ ভয়েল প্রলেপ এবং রোচক হিসাবে ব্যবহার করা হয়। কাছ শক্ত ও মজবুত। চালতা একটি বুনো ফল। এতেও রয়েছে প্রচুর পুষ্টি উপাদান। কচিফল পেটের গ্যাস, কফ, বাত ও পিত্তনাশক পাকা ফলের রস চিনি দিয়ে খেলে সর্দিজ্বরের উপশম হয়। তেঁতুল একটি আকর্ষনীয় ফল। এতে ভেষজ এবং নানা পুষ্টি উপাদান রয়েছে। পেটের বায়ু, হাত পা জালায় তেতুলের শরবত উপকারী। তেতুল হজমে সহায়তা করে এবং মাথা ব্যাথা, কচু ও ধুতপর বিষাক্ততা নিরাময় করে। প্যারালাইসিস রোগে উপকার। গাছের ছাল চূর্ণ ব্যবহার দাত ব্যাথা হাপানী, চোখের জ্বালা পড়া কমাতে কার্যকর। কাঠ অত্যান্ত শক্ত এবং উৎকৃষ্ট জালানী। লটকন একটি পরিচিত বুনো ফল। বর্তমানে বাগান করে চাষ করা হচ্ছে। এটি খাদ্য মানে সমৃদ্ধ অম্ল মধুর ফল। ফল খেলে বমি উপশম হয় ও তৃষ্ণা দূর হয়। পাতা গুড়ো করে খেলে ডায়রিয়া উপশম হয়। কাঠ মধ্যম মানের। ফার্নিচার তৈরীতে ব্যবহার করা চলে। আমলকি, হরিতকী, বহেড়া বা ত্রিফলা সর্ব রোগের মহৌষধ বলে প্রমানিত। এসব ফলে ভিটামিন প্রচুর। যকৃত, পেটের পীড়া, হাপানী, কাশি, বহুমুত্র, অর্জীর্ণ, জ্বর, জন্ডিস, বদ হজম প্রভৃতি রোগের উপশম হয়। এসব গাছে ফুল, ফল, শিকড় পাতা সবই কাজে লাগে। কাঠ উন্নতমানের নানা কাজে ব্যবহার করা যায়। তাল আমাদের অতি পরিচিত ফল। তালের রস দিয়ে নানা ধরনের পিঠা তৈরী করা যায়। রস জ্বাল দিয়ে দুধের সাথে খাওয়া যায়। কচি তালের শাঁস মিষ্টি ও সুস্বাদু। পাঁকা তালে পুষ্টি উপাদান প্রচুর। তাল গাছের রস শ্লেষ্ঠা নাশক, প্রস্রাবের জ্বালাপোড়া দূর করে ও শোষ নিবারণ করে। রস থেকে তৈরী তাল মিছরি সর্দি কাশির ওষুধ এবং পিত্তনাশক। যকৃতের দোষ নিবারক। তাল গাছের কাঠ দিয়ে ঘর তৈরীর সরঞ্জাম এবং নৌকা তৈরী করা হয়। খেজুর পুষ্টি উপাদানে সমৃদ্ধ। রস উপাদেয় পানীর এবং কৃমিনাশক। খেজুরের ফল হৃদ রোগ, জ্বর, পেটের পীড়ায় উপকারী এবং বণবর্ধক। কান্ড থেকে নির্গত আঠা পাতলা পায়খানা এবং প্রস্রাবের দোষ দুর করে। কাঠ দিয়ে ঘর তৈরীর সরঞ্জাম করা হয়। গাব একটি বুনোফল। ফল হিসাবে ব্যবহার কম। তবে টেকসই করার জন্য মাছ ধরার ঝাল এবং নৌকায় লাগানো হয় কাঁচা গাবের রস। পাকা ফলে পুষ্টি উপাদান রয়েছে। খোশার গুড়া আমাশয় রোগ নিরাময় করে চর্মরোগ দূর করে। খোসা সিদ্ধ করে ঐ পানি পান করলে পাতলা পায়খানা ও ডায়রিয়া নিরাময় হয়। পাতা ও ছাল সিদ্ধ করে পানি পান করলে কৃমি আমাশয় এবং প্রস্রাবের দোষ দূর করে। কাঠ অত্যান্ত শক্ত। জ্বালানী হিসাবে অতি উৎকৃষ্ট। বিলাতি গাব অত্যান্ত সুস্বাদু ফল এবং পুষ্টিকর। বেলের মত উপকারী। রক্ত আমাশয় এবং উদরাময় রোগে ফলপ্রদ। মুখ ও গলার ঘা পরিস্কার কাজে ব্যবহার করা যায়। কাঠ শক্ত এবং যে কোন কাজে ব্যবহারের উপযোগী। ডেওয়া গাছ মধ্য আকারের। ফল খাদ্যমান সমৃদ্ধ। ফলের ভিতরে কাঠালের মতো কোষ আছে। পাকা ফল পিত্ত এবং যকৃত রোগে উপকারী। ছালের গুড়া চামড়ার রুক্ষতা এবং ব্রনের জন্য উপকার দেয় গাছ বিভিন্ন কাজে ব্যবহার করা যায়। করমচা ছোট অথচ আকর্ষনীয় ফল। খাদ্য প্রানে অত্যান্ত সমৃদ্ধ। এতে রয়েছে ভিটামিন-সি, পটাশ, ক্যালশিয়াম ও ফসফরাস। কাচা ফল গায়ের ত্বক ও রক্তনালী শক্ত এবং রক্তক্ষরন বন্ধ করে। পাতা গরম পানিতে সেদ্ধ করে পান করলে পালাজ্বর নিরাময় হয়। শিকড়ের রস চুলকানি ও কৃমি দমনে সহায়ক। গোলাপ জাম একটি রসালো ফল। সব ধরনের পুষ্টিগুন রয়েছে এতে। পাকা ফল সেন্দুব লবন দিয়ে মেনে চটদিয়ে রেখে দেয়ার পর নির্গত রস পাতলা দাস্ত, অরুচি ও বমি ভাব দূর করে। গাছের ছাল ও পাতা বহূমুত্র রোগে উপকারী। কাঠ শক্ত। যে কোন কাজের ব্যবহার করা যায়। অরবরই ভিটামিনÑসি এবং নানা পুষ্টি উপাদানে সমৃদ্ধ। এর রস যকৃত পেটের পীড়া, হাপানী, কাশি, বহুমূত্র, অজীর্ণ এবং জ্বর নিরাময় করে। পাতার রস আমাশয় থেকে মুক্তি দেয়। এর ফল এবং বীচি সবই কাজে লাগে। কাঠ মধ্যমানের। বিভিন্ন কাজে ব্যবহার করা যায়। সাতকরা সিলেট অঞ্চলের একটি জনপ্রিয় ফল। গাছ উচু এবং কাটাযুক্ত। কাঠ শক্ত। ফল চ্যাপ্টা এবং গোলাকার। এর শাস খাওয়া হয়পুরু খোসা সবজি হিসাবে ব্যবহার করা হয়। খোসা দিয়ে উৎকৃষ্ট আচার হয়। শুকিয়ে রাখা যায়। জগডুমুর একটি বুনো ছোট আকারের ফল হলেও পুষ্টি মানে সমৃদ্ধ এবং ভেষজগুনে ভরপুর। ডুমুর ফল এবং পাতা টিউমার সহ শরীরের অস্বাভাবিক বৃদ্ধি রোধ করে। বহুমূত্র প্রতিষেধক ও প্রতিরোধক এবং যকৃত ও বৃক্কের পাথর নিরাময় করে। কাঠ মাঝারী মানের বিভিন্ন কাজে ব্যবহার করা যায়।তৈকর আসাম এবং সিলেট অঞ্চলের আদি ফল। এর রয়েছে প্রচুর ওষধি গুন। কাচা ও পাকা অবস্থায় ব্যবহার যোগ্য। স্বাদে টক। তরকারী এবং আচার জ্যাম জেলি প্রভৃতি তৈরীতে ব্যবহার করা যায়। বিদেশে প্রচুর চাহিদা রয়েছে।আশফল কাঠলিচু নামে পরিচিত। ছোট আকারের এ ফল থেকে সুস্বাদু। এফল উদরাময় নিবারক ও কৃমিনাশক ইন্দোচীনে এ ফল থেকে ব্রেনটনিক তৈরী করা হয়। এ ফল অত্যান্ত বলকারক। বাংলাদেশ কৃষি গবেষনা ইন্সটিটিউট রফতানী যোগ্য এ ফলের নতুন জাত উদ্ভাবন করেছে। কাঠ ব্যবহার যোগ্য। কাউ একটি জংলী ফল। ফল টক এবং টাটকা অবস্থায় খাওয়া যায়। শাসের পরিমাণ কম। কিন্তু স-গন্ধিযুক্ত। এতে নানা ভেষজ উপাদান রয়েছে। গাছ আকারে বড়। কাঠ ব্যবহার করা যায়। এছাড়া বাংলাদেশে পেঁপে, আনারস, কলা, পানিফল, শাপলা, সিঙ্গ্ড়াা, সজনে, ডাটাসহ সবজী জাতীয় নানা ফল জন্মে। বনজ গাছের মধ্যে রয়েছে শাল, সেগুন, গজারী, আগর, পিতরাজ, সুন্দরী, রিঠা, গরান, পাইয়া, হিজল, নিম, জারুল, অর্জূন, সড়া, পিঠাকরা, পিপুলটি, ছাগনাদি, ছাতিম, সোনালু, বওলা, বওসা, ঝাউ, বাশ, দেবদারু, কুটরাজ, শিমুল, পলাশ, মেহদি, জিগা, জিগনি, মেহগনি, বাবলা, খয়ের, বট, পাকুড়, সহ নানা রকমের চেনা অচেনা গাছ। এসব গাছের ফল খাওয়া না গেলেও ফুল, ফল, পাতা, লতা, শিকড় সবই ঔষধি গুন সম্পন্ন। কাঠ মজবুত। এছাড়াও রয়েছে নানা ধরনের গুল্ম ও লতা জাতীয় গাছ। যারফুল, ফল, কান্ড, কোন কিছুই ফেলনা নয়। সব কিছু মিলিয়ে বাংলার জল, বাংলার ফল, এর প্রতিটি ধূলিকণা বিচ্ছুরিত আলো বাতাস জীবনকে সুস্থ সবল রাখতে খুবই কার্যকর ভূমিকা পালন করতে পারে। কিন্তু আমরা দেশি গাছ না লাগিয়ে পরিচর্যা না করে বিদেশী পরিবেশ বিদেশী গাছ লালন করে আবহাওয়ার উপর বিরুপ প্রভাব ফেলছে। যা আমাদের বেঁচে থাকার জন্য হুমকি হয়ে দাড়িয়েছে। তাই আমরা যেন দেশি গাছ লাগাই, দেশি ফল খাই। দেশি গাছ ব্যবহার করি। আর সুস্থ্য সবল জীবন যাপন করি। প্রমাণ করি গাছের অপর নাম জীবন। আবার এভাবেই স্লোগান তুলে সবুজ বিপ্লব সফল করতে পারি।

দেশী ফলের রসগুন নেই তুলনা তার স্বাদ গন্ধ পুষ্টিমান কত রংঙের বাহার।

তাই খাদ্য পুষ্টি স্বাস্থ্য চান,

দেশী ফল বেশী খান।

ফল খেলে রোগমুক্ত থাকবেন।

লেখক : রফিকুল আলম খান, সিরাজগঞ্জ।

image_print
Spread the love
0 0 votes
Article Rating
Subscribe
Notify of
guest
0 Comments
Inline Feedbacks
View all comments