বিশ্ব পরিবেশ দিবসে ধরা ও ওয়াটারকিপার্স-এর উদ্যোগে গোলটেবিল বৈঠক
মো. মনজুরুল ইসলাম (মনজু) : বিশ্ব পরিবেশ দিবসে ধরা ও ওয়াটারকিপার্স বাংলাদেশ-এর যৌথ উদ্যোগে “সিলেটের বন্যা : নাগরিক অভিজ্ঞতা ও করণীয়” শীর্ষক গোলটেবিল বৈঠক অনুষ্ঠিত হয় আজ ৫ জুন (বুধবার) স্থানীয় একটি হোটেলের সম্মেলন কক্ষে।
গোলটেবিল বৈঠকের সূচনা বক্তব্য রাখেন সুরমা রিভার ওয়াটারকিপার আব্দুল করিম চৌধুরী কিম।
বৈঠকে আলোচক হিসেবে অংশগ্রহণ করেন সিলেট সিটি কর্পোরেশনের সাবেক মেয়র আরিফুল হক চৌধুরী, বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের সাবেক কেন্দ্রীয় সাংগঠনিক সম্পাদক এডভোকেট মিসবাহ উদ্দিন সিরাজ, প্রবীন রাজনীতিবিদ অধ্যাপক মোহাম্মদ সফিক, পরিবেশ ও ঐতিহ্য সংরক্ষণ ট্রাস্ট-এর সভাপতি মোস্তফা শাহাজান চৌধুরী, সিলেট মেট্রোপলিটন চেম্বার অব কমার্স-এর সিনিয়র সহ-সভাপতি মো আব্দুল জব্বার জলিল, শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়-এর অধ্যাপক ড. জফির সেতু, ড. মোহাম্মদ ফারুক উদ্দিন, ডঃ তাহমিনা ইসলাম, সিলেট প্রেস ক্লাবের সাধারণ সম্পাদক মোহাম্মদ সিরাজুল ইসলাম, সাংস্কৃতিক সংগঠক এনামুল মুনীর, নাগরিক মৈত্রী সিলেট-এর সভাপতি এডভোকেট সমর বিজয় সী শেখর, বাংলাদেশ পরিবেশ আন্দোলন (বাপা) সিলেট-এর যুগ্ম সম্পাদক আব্দুল হাই আল হাদী ও নির্বাহী সদস্য মাহমুদুর রহমান ওয়েছ, ইউকে বাংলা এডুলেশনাল ট্রাস্ট-এর সিইও মোহাম্মদ আছাদুজ্জামান সায়েম, সমাজসেবী রোটারিয়ান জাকির আহমেদ চৌধুরী, বাংলাদেশ যুব ইউনিয়ন সিলেট জেলা শাখার সাধারণ সম্পাদক মতিউর রহমান, প্রকাশক রাজিব চৌধুরী, মেঠোসুর সম্পাদক বিমান তালুকদার, সমাজকর্মী অরূপ শ্যাম বাপ্পী ও রেজাউল কিবরিয়া, পরিবেশকর্মী রোমেনা বেগম রোজী ও আমীন তাহমীদ, শিশু-কিশোর বিষয়ক সংগঠন উষা-এর পরিচালক নিঘাত সাদিয়া প্রমুখ।
সাবেক মেয়র আরিফুল হক চৌধুরী বলেন, প্রকল্প প্রণয়ন ও বাস্তবায়ন করে আমলারা দোষ হয় রাজনীতিবিদদের। আমলাতান্ত্রিক জটিলতার কারণে সিলেটের উন্নয়ন পরিকল্পনা যথাযথভাবে বাস্তবায়ন করা যাচ্ছে না বলে তিনি অভিমত ব্যক্ত করেন। তিনি একাধিক ঘটনার বর্ণনা দিয়ে বলেন, সিলেট এখন অভিভাবক শূণ্য।
এডভোকেট মিসবাহ উদ্দিন সিরাজ বলেন, বড় প্রকল্প যথাযথভাবে বাস্তবায়ন করতে সচেতন নাগরিকদের সম্পৃক্ত করতে হবে। তিনি সিলেটের ব্যাপারে মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর আন্তরিকতার কথা উল্ল্যেখ করেন।
শরীফ জামিল বলেন, সিলেটে কখনও বন্যা হবার কথা না। যা হচ্ছে কিংবা হবে, সব জলাবদ্ধতা। অপরিকল্পিত নগরায়ন গ্রাস করেছে পুকুর, খাল, নদী ও জলাশয়। তার সাথে যোগ হয়েছে অনিয়ন্ত্রিত শিল্পায়ণ ও হাওর ধ্বংসের অভিঘাত। সিলেটে বসবাস করতে হলে এর নাগরিকদের ঐক্যবদ্ধ সামাজিক আন্দোলনের কোন বিকল্প নাই।
অধ্যাপক মোহাম্মদ সফিক বলেন, দায়িত্বপালন কালে ভুল্ভ্রান্তি হয়। ৫০ বছর পূর্বে সিলেট পৌরসভার দায়িত্ব পালনের সুযোগ পেয়েছিলাম। সে সময় পরিবেশ বিষয়ে সচেতনতা না থাকায় কিছু ভুল সিদ্ধান্ত নিয়েছিলাম।
অধ্যাপক ডক্টর জফির সেতু বলেন, জলবায়ু পরিবর্তনজনিত বন্যার মতো প্রাকৃতিক বিপর্যয় যতটা না প্রাকৃতিক তারচেয়ে বেশি মানবসৃষ্ট এবং এটা যতটা না স্থানীয় সমস্যা ততটাই জাতীয় ও আন্তর্জাতিক সমস্যা।
প্রফেসর ড. মোহাম্মদ ফারুক উদ্দিন, শাবিপ্রবি, “বন্যার ক্ষয়ক্ষতি থেকে রক্ষা পেতে স্বল্পমেয়াদী ও দীর্ঘমেয়াদী পরিকল্পনা প্রয়োজন। সিলেটের বন্যা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রনে শাহজালাল বিশ্ববিদ্যালয়ের পরিবেশ অধ্যয়ন সম্পর্কিত বিভাগসমূহের গ্রাজুয়েটদের সমন্বয়ে নাগরিক কমিটি গঠন করে টেকসই সমাধানের ব্যবস্থা গ্রহণ করা উচিত।”
প্রফেসর তাহমিনা ইসলাম বিগত ২০২২ এর বন্যার ভয়াবহ অভিজ্ঞতার কথা,শেয়ার করার সাথে তিনি এর অন্যতম কারণ হিসাবে অপরিকল্পিত ভাবে উন্নয়েনের কথা, আর প্রকল্পের নামে যা বরাদ্দ হয় তার বড় একটা অংশ হরিলুট হয়, তিনি বন্যা পরবর্তী পুনরবাসন কাজে সঠিক ভাবে সমন্বয়, এ ক্ষেত্রে বন্যার সময় বিশেষ সেল গঠনের কথা বলেন।
নাগরিকেরা বলেন, বন্যা ও জলাবদ্ধতা দূর করার নামে বহু আশার বাণী শোনানো হলেও সব অসার প্রমাণিত হয়েছে। সিলেট জেলার বন্যা ও মহানগরীর জলাবদ্ধতা নিরসনে বিজ্ঞানভিত্তিক উন্নয়ন পরিকল্পনা গ্রহণ করতে হবে। প্রাকৃতিক ছড়া ও খালকে ড্রেনে পরিণত করার খেসারত নাগরিকদের ভোগ করতে হচ্ছে। নাগরিকেরা সুরমা নদী খননের নামে বরাদ্ধকৃত ৫০ কোটি টাকা ব্যায়ের শ্বেতপত্র প্রকাশের দাবি জানান।