বুলেটিন নিউজস্থানীয় সংবাদ

পোস্টারে জুলাই অভ্যুত্থান লাইভ ও এ আর-ভি আর ইন্টারঅ্যাকটিভ প্রদর্শনীর উদ্বোধন

নিজস্ব প্রতিবেদক : বাংলাদেশ শিল্পকলা একাডেমির আয়োজনে এবং প্রযোজনা বিভাগের ব্যবস্থপনায় শিল্পী দেবাশিস চক্রবর্তীর জুলাই অভ্যুত্থানের শিল্পকর্ম নিয়ে “পোস্টারে জুলাই অভ্যুত্থান” লাইভ ও এআর-ভি আর (অগমেন্টেড-ভারচুয়াল রিয়েলিটি) ইন্টারঅ্যাকটিভ প্রদর্শনীর শুরু হয়। আজ ৭ জানুয়ারি (মঙ্গলবার) বিকাল ৪ টায় জাতীয় চিত্রশালা মিলনায়তনে উদ্বোধনী অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়।

অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকারের আইন, বিচার ও সংসদ বিষয়ক মন্ত্রণালয় এবং প্রবাসী কল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা ড. আসিফ নজরুল।

অনুষ্ঠান সভাপতিত্ব করেন বাংলাদেশ শিল্পকলা একাডেমির মহাপরিচালক (সচিব পদমর্যাদা) ড. সৈয়দ জামিল আহমেদ।

উপস্থিত ছিলেন বরেণ্য আলোকচিত্রী, কিউরেটর ও এক্টিভিস্ট ড. শহিদুল আলম; লেখক, সাংবাদিক ও বাংলাদেশ সংবাদ সংস্থার ব্যবস্থাপনা পরিচালক মাহাবুব মোর্শেদ এবং বাংলাদেশ শিল্পকলা একাডেমির চারুকলা বিভাগের পরিচালক মোস্তফা জামান। আমস্টারডাম থেকে সরাসরি অনলাইনে যুক্ত হয়েছিলেন লেখক ও গবেষক পারভেজ আলম এবং যুক্তরাষ্ট্র থেকে সরাসরি অনলাইনে যুক্ত হয়েছিলেন শিল্পী দেবাশিস চক্রবর্তী। অনুষ্ঠানে স্বাগত বক্তব্য প্রদান করেন বাংলাদেশ শিল্পকলা একাডেমির প্রযোজনা বিভাগের পরিচালক আব্দুল হালিম চঞ্চল।

প্রধান অতিথির বক্তব্যে আইন, বিচার ও সংসদ বিষয়ক মন্ত্রণালয় এবং প্রবাসী কল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা ড. আসিফ নজরুল বলেন, “বিভিন্ন বয়ান তৈরির কৌশল কত নোংরা হতে পারে তা আমরা গত ১৫ বছরে ফ্যাসিস্ট সরকারের ক্ষেত্রে দেখেছি। উন্নয়ন অগ্রগতি নিয়ে অনেক বয়ান তৈরী করা হয়েছে। একটা ছোট্ট পোস্টার নতুন বয়ান তৈরির ক্ষেত্রে অনেক বড় ভূমিকা পালন করতে পারে। ওই সময়ের আন্দোলনকে বেগবান করার ক্ষেত্রেও ভূমিকা রেখেছে পোস্টার”।

জুলাই আন্দোলনের আর্ট গ্রাফিতি প্রসঙ্গে উপদেষ্টা বলেন, “গ্রাফিতি যে একটা শক্তিশালী মাধ্যম হতে পারে তা আমরা গত ১৫ বছরের রাজনৈতিক প্রেক্ষাপটে দেখি নাই। গ্রাফিতি হয়তো একটা সময় থাকবে না কিন্তু প্রকাশনা হলে সেটা থেকে যাবে। সেই জায়গা থেকে বাংলাদেশ শিল্পকলা একাডেমির উদ্যোগ ভালো লেগেছে”।

সভাপতির বক্তব্যে বাংলাদেশ শিল্পকলা একাডেমির মহাপরিচালক (সচিব পদমর্যাদা) ড. সৈয়দ জামিল আহমেদ বলেন, ‘শিল্পী দেবাশিস চক্রবর্তী ঈর্ষণীয়ভাবে দেখিয়ে দিয়েছেন যে, শিল্প কীভাবে সঠিকভাবে রাজনৈতিক হাতিয়ার হতে পারে এবং একইসাথে শিল্পকর্ম হতে পারে। এ বিষয়ে কোনো দ্বিধা-দ্বন্দ্ব নেই। শিল্পের কাজটা কী সেটা পরিস্কারভাবে দেখিয়ে দিয়েছেন। বিপ্লব ও গণঅভ্যুত্থানের ভেতরে পরিস্কারভাবে শিল্পকর্ম নিয়ে দাঁড়াতে পারার জন্য শিল্পীকে অভিনন্দন।’

মহাপরিচালক আরও বলেন, ‘শিল্পীর নিকট থেকে অনেক কিছু শেখার আছে নতুন প্রজন্মের। নন্দনতত্ত্ব বলতে আমরা যেটা বুঝি- তা হলো সুন্দর কী? তাকে তছনছ করে দিয়ে ভেঙে ফেলে আপনি কেবল রং, রেখায় খুব পরিস্কারভাবে এবং স্পষ্ট ভাষায় উচ্চারণ করেছেন, যা মানুষের হৃদয় ছুঁয়ে গেছে। মানুষকে আলোড়িত করেছে এবং মানুষকে একেবারে আন্দোলনের মুখের দিকে এগিয়ে নিয়ে গেছে। পপুলার আর্টকে পপুলিস্ট না করে একেবারে পলিটিক্যাল আর্ট করেছেন। যে পলিটিক্যাল আর্ট একেবারে শিল্পকর্ম।”

প্রযোজনা বিভাগ এআর-ভি আর এর মাধ্যমে এই কাজটা আরো বেশি এবং ব্যাপকভাবে জনগণের মধ্যে ছড়িয়ে দেবে, এটাই শিল্পকলার কাজ, শিল্পকলা একাডেমিতে এরকম নতুন নতুন কাজ হবে বলেও জানান মহাপরিচালক।

“পোস্টারে জুলাই অভ্যুত্থান” : বৈষম্যবিরোধী ছাত্রআন্দোলন ও জুলাই গণঅভ্যুত্থানে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছাত্র-জনতা, শিল্পী, বুদ্ধিজীবীসহ নানা পেশাজীবীরা সক্রিয় ভূমিকা পালন করেছিল। ৭১ এ মুক্তিযুদ্ধে যেমন বাংলাদেশের শিল্পীদের অসামান্য অংশগ্রহণ ছিল, মুক্তিযুদ্ধের সময়ে প্রচারিত পোস্টারগুলো যেমন আমাদের ইতিহাসের অসামান্য দলিল হয়ে আছে তেমনি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে জুলাই অভ্যুত্থানে প্রচারিত বিভিন্ন শিল্পীর কার্টুন, পোস্টার ও ইতিহাসের অংশ হয়ে উঠেছে। এরমধ্যে উল্লেখাযোগ্য শিল্পী দেবাশিস চক্রবর্তী। বিগত কয়েক বছর যাবত তিনি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে তার আঁকা পোস্টার নিয়ে প্রতিবাদ করেছেন, নানা গুরত্বপুর্ণ সামাজিক-রাজনৈতিক বিষয়ে পোস্টারের মধ্যে নিজের রাজনৈতিক ভাষ্য হাজির করেছেন যা দ্রুতই গণমানুষের ভাষ্য হয়ে উঠত। গণমানুষের আকাঙ্ক্ষা যেমন তার পোস্টারে জেগে উঠেছে তেমনি পোস্টার শিল্পের শৈলীগত দিক থেকেও তা অনন্য হয়ে উঠেছে বাংলাদেশের শিল্পের ইতিহাসে।

বাংলাদেশের শিল্প ও গণঅভ্যুত্থানের গুরুত্ব বিবেচনায় শিল্পী দেবাশিস চক্রবর্তীর জুলাই অভ্যুত্থানে করা শতাধিক পোস্টারের মধ্য থেকে বাছাইকৃত ২০টি পোস্টার নিয়ে লাইভ ও এআর-ভিআর প্রদর্শনীর আয়োজন করা হয়েছে। যা বাংলাদেশ শিল্পকলা একাডেমির ভিআর গ্যালারীতে স্থায়ীভাবে সংরক্ষিত হবে তেমনি বিভিন্ন জেলায় প্রযোজনা বিভাগের তত্ত্বাবধানে ভিআর প্রদর্শনীর ব্যবস্থা থাকবে। শিল্পীর পোস্টারের বিষয়ের নানা পরিপ্রেক্ষিত ও কন্টেক্সট এআর-ভিআর এর মাধ্যেমে উপস্থাপন করা হবে। যেখানে নির্দিষ্ট পোস্টারের কন্টেক্স ও পরিপ্রেক্ষিতের নানা গঠনা, তথ্যচিত্র, অডিও, ভিডিও ভিআর কন্ট্রোলারের মাধ্যেমে দর্শক ইন্টারেক্টিভ পদ্ধতিতে দেখার প্রয়াস পাবে।

প্রদর্শনী চলবে ৭-১৯ জানুয়ারি ২০২৫ তারিখ প্রতিদিন সকাল ১১টা থেকে রাত ৮টা পর্যন্ত জাতীয় চিত্রশালা ভবনের ৫ নং গ্যালারিতে।

image_print
Spread the love
0 0 votes
Article Rating
Subscribe
Notify of
guest
0 Comments
Inline Feedbacks
View all comments