বুলেটিন নিউজমফস্বল সংবাদ

পুকুরে মুক্তা চাষ করে সফল কবির হোসেন

আত্রাই উপজেলার পাঁচুপুর ইউনিয়নের প্রত্যন্ত এলাকা জগদাস গ্রামের উদ্যোমী যুবক কবির হোসেন পুকুরে ঝিনুকে মুক্তা চাষ করে সাফল্য পেয়েছেন। পুকুরে মাছ চাষের পাশাপাশি মুক্তা চাষে ব্যাপক সাড়া পেয়েছেন পুরো উপজেলা জুড়ে। এই উদ্যোক্তাকে এলাকাবাসী প্রথমে পাগল হিসেবে আঙ্খায়িত করলেও পরে তার এই সাফল্য দেখে ঝিনুকে মুক্তা চাষে আগ্রহী হচ্ছেন অনেক বেকার যুবক। মুক্তা চাষে ঝুকি কম ও লাভজনক। মুক্তাচাষে আগ্রহী উদ্যোক্তাদের সার্বিক সহযোগিতা দেয়ার কথা জানিয়েছেন মৎস্য অফিসার।

কবির হোসেন ফ্রি-লান্সার হিসেবে কাজ করতেন। করোনা ভাইরাসের প্রার্দুভাবে তিনি কাজ হারিয়ে দিশেহার হয়ে পড়েন। বাড়িতে বসে অলস দিন যাপন করেছিলেন। এ সময় ইউটিউবে ঝিনুকে মুক্তা চাষের একটা সাফল্যময় গল্প দেখে তিনিও উৎসাহিত হয়ে পড়েন। প্রয়োজনীয় প্রশিক্ষণ গ্রহণ করে জগদাশ গ্রামেই একটি পুকুর লীজ নিয়ে মাছ চাষের পাশাপশি ঝিনুকে মুক্তা চাষের প্রকল্প হাতে নেন।  তার এই পুকুরে গিয়ে দেখা যায় পুকুরের পানিতে তিন ফুট পরপর ভাসছে ফাঁকা প্লাস্টিকের বোতল। সেখানে পানির  এক ফুট নিচে রয়েছে একটি করে প্লাস্টিকের ডালা। সে ডালার প্রতিটিতে রয়েছে ২০টি করে জীবন্ত ঝিনুক। এভাবে তিনি ওই পুকুরে প্রায় ৮ হাজার ঝিনুক বিশেষ প্রক্রিয়ায় চাষ করছেন। ঝিনুকের মধ্য প্রতিটিতে কমপক্ষে দুটি করে বিভিন্ন  ডিজাইনে নিউক্লিয়াস প্রতিস্থাপন করা হয়েছে। একটি নিদ্দিষ্ট সময়ের ব্যবধানে এসব ঝিনুক থেকেই উৎপাদন হচ্ছে বিভিন্ন  ডিজাইনের মুক্তা।

কবির হোসেন জানান, এই ৮ হাজার ঝিনুকের মধ্যে বিভিন্ন ডিজাইনের প্রায় ১৫ হাজার নিউক্লিয়াস প্রতিস্থাপন করেছে। প্রায় এক বছরে এসব ঝিনুক থেকে পাওয়া যাবে কমপক্ষে ১৫ হাজার মুক্তা। পুকুর লিজ নিয়ে ঝিনুক সংগ্রহ পরিচর্যা, নিউক্লিয়াস ক্রয় ও স্থাপন ইত্যাদি বাবদ মোট খরচ হয়েছে প্রায় ১৫ লাখ টাকা। এই এক বছরে ওই ঝিনুক থেকে উৎপাদিত মুক্তা থেকে ২২-২৫ লাখ টাকায় বিক্রি হবে বলে তিনি প্রত্যাশা করছেন। ইতোমধ্যে ঝিনুক সংগ্রহের সময় হয়ে গেছে। এসব মুক্তার বাজার রয়েছে ভারতের কলকাতায় এবং বাংলাদেশে আড়ং নামের একটি প্রতিষ্ঠানে। কবিরের সাফল্য দেখে তার সাথে মুক্তা চাষে যোগদেন গ্রামের মোঃ সহিদুল, আবুল বাসার, রিপন, মুক্তার, মেহেদী , রাজুসহ আরও  ২০-২৫ জন বেকার যুবক। ইতোমধ্যেই গ্রামটি এখন মুক্তা চষিগ্রাম হিসেবে পরিচিতি পেয়েছেন। জগদাশ গ্রামের আবু সুফিয়ান ও মকলেছ নামের দুই উদ্যেক্তা জানিয়েছেন কবিরের সাফল্য তাদের মুক্তা চাষের দিকে আকৃষ্ট করেছেন। ইতো মধ্যে ওই দুই যুবক সহ গ্রামের প্রায় ৩০ জন বেকার যুবক ঝিনুকে মুক্তা চাষের ছোট-ছোট প্রকল্প হাতে নিয়েছেন। তারাও আর্থিকভাবে লাভবান হওয়ার স্বপ্ন দেখছেন। এদিকে সিনিয়র উপজেলা মৎস্য অফিসার শ্রী পলাশ চন্দ্র দেবনাথ বলেছেন- নওগাঁর আত্রাইয়ে মুক্তাচাষের সম্ভবনা উজ্জল হয়ে উঠেছে। ব্যাপকভাবে সাড়া  পরিলক্ষিত হয়েছে। মুক্তা চাষে ঝঁকি কম ও লাভজনক। মানসম্মত মুক্তা চাষ করতে পারলে অধিক লাভবান হওয়া সম্ভব। তাই মানসম্মত মুক্তা চাষে আগ্রহী উদ্যোক্তাদের সার্বিক সহযোগিতা দেয়ার কথা জানালেন এই সিনিয়র উপজেলা মৎস্য অফিসার।

প্রতিবেদন : কামাল উদ্দিন টগর, ক্যামেরায়-আসিফ হাসান।

image_print
Spread the love
0 0 votes
Article Rating
Subscribe
Notify of
guest
0 Comments
Inline Feedbacks
View all comments