আন্তর্জাতিক সংবাদ

নয়াচীন প্রতিষ্ঠার পর চীন সর্বদা মাদকের প্রতি শূন্য-সহনশীলতা নীতি বজায় রেখেছে

আন্তর্জাতিক ডেস্ক : ফেন্টানাইল এবং শুল্কের মধ্যে ‘যৌক্তিক সম্পর্ক’ কী? এই অযৌক্তিক সমস্যার সমাধান পৃথিবীর কেউ করতে পারবে না। ফেন্টানাইল ইস্যুর কারণে সম্প্রতি যুক্তরাষ্ট্রে রপ্তানি করা চীনা পণ্যের উপর ১০% শুল্ক বৃদ্ধির ঘোষণা দিয়েছেন দেশটির নতুন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। এর পেছনের উদ্দেশ্য কী?

প্রকৃতপক্ষে, যারা চীন-মার্কিন সম্পর্কের দিকে নজর রাখেন, তারা দেখতে পাবেন যে, সাম্প্রতিক বছরগুলোতে ফেন্টানাইল যুক্তরাষ্ট্রে একটি আলোচিত বিষয় হয়ে উঠেছে। চায়না ফরেন অ্যাফেয়ার্স ইউনিভার্সিটির অধ্যাপক লি হাই তুং বলেন, যুক্তরাষ্ট্র ভালোভাবেই জানে যে, ফেন্টানাইল অপব্যবহারের সমস্যা মৌলিকভাবে সমাধান করা কঠিন, তাই তারা চীন, মেক্সিকো এবং অন্যান্য দেশের উপর দোষ চাপাচ্ছে, এমনটি তারা করেছে, কঠোর অবস্থান দেখানোর এবং জনসমর্থন বাড়ানোর প্রচেষ্টায়।
পর্যবেক্ষকরা যেমন উল্লেখ করেছেন, যুক্তরাষ্ট্রে ফেন্টানাইল সংকটের মূল কারণ অপব্যবহারের কারণে এর বিশাল চাহিদা এবং নিয়ন্ত্রণ ত্রুটিগুলোর মধ্যে নিহিত।
আন্তর্জাতিক মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ বোর্ডের পরিসংখ্যান অনুসারে, যুক্তরাষ্ট্র বিশ্বের বৃহত্তম ফেন্টানাইল ওষুধের উৎপাদক এবং ভোক্তা, যা বিশ্বের জনসংখ্যার ৫% হলেও বিশ্বের ৮০% ওপিওয়েড ব্যবহার করে।

মার্কিন ড্রাগ এনফোর্সমেন্ট অ্যাডমিনিস্ট্রেশনের তথ্য থেকে দেখা যায় যে, ১৮ থেকে ৪৫ বছর বয়সী আমেরিকানদের মধ্যে ফেন্টানাইলের অতিরিক্ত মাত্রা মৃত্যুর প্রধান কারণ এবং এটি ‘যুক্তরাষ্ট্রের জন্য এখন পর্যন্ত সবচেয়ে মারাত্মক মাদক হুমকি হয়ে উঠেছে।

যুক্তরাষ্ট্রে কেন ফেন্টানাইলের এত খারাপ ব্যবহার হচ্ছে? একদিকে, স্বার্থের বশে, বৃহৎ ওষুধ কোম্পানিগুলো নীতিগত সুরক্ষা প্রদানের জন্য রাজনীতিবিদদের কাছে তদবির করে, চিকিৎসা প্রতিনিধিরা ডাক্তারদের আরও ওষুধ লিখে দেওয়ার জন্য উৎসাহিত করার বিভিন্ন উপায় ব্যবহার করে, এবং ফার্মেসিগুলোও সেগুলো জোরেশোরে বিক্রি করে, স্বার্থের একটি সম্পূর্ণ শৃঙ্খল তৈরি করে।

অন্যদিকে, রাজনৈতিক মেরুকরণের প্রেক্ষাপটে, যদিও আমেরিকান রাজনীতিবিদরা বলেন যে, তারা ফেন্টানাইল ইস্যুকে গুরুত্ব দেন, তারা আসলে দ্বিদলীয় সংগ্রামের জন্য এটিকে একটি হাতিয়ার হিসেবে ব্যবহার করেন।

অন্যান্য বিশ্লেষণে উল্লেখ করা হয়েছে যে, যুক্তরাষ্ট্রে সামাজিক অবিচার, আয় বৈষম্য এবং বর্ণবাদ ক্রমশ গুরুতর হয়ে উঠছে, তরুণরা ভবিষ্যতের প্রতি আস্থা হারিয়ে ফেলেছে, জীবনকে কঠিন বলে মনে করছে এবং মানসিক চাপ কমাতে ওষুধের দিকে ঝুঁকছে।

অন্যদিকে, তুলনামূলকভাবে, চীন বিশ্বের অন্যতম কঠোর এবং সবচেয়ে পূর্ণাঙ্গ মাদক নিয়ন্ত্রণ নীতিমালা সম্পন্ন দেশ। ঐতিহাসিকভাবে, চীন মাদকের দ্বারা মারাত্মকভাবে প্রভাবিত হয়েছিল। নয়াচীন প্রতিষ্ঠার পর থেকে, সর্বদা মাদকের প্রতি শূন্য-সহনশীলতা নীতি বজায় রেখেছে এবং মাদক উৎপাদন ও পাচারসহ সকল ধরণের মাদক অপরাধ কঠোরভাবে দমন করেছে। যুক্তরাষ্ট্রের অনুরোধে, চীন ২০১৯ সালে ঘোষণা করেছিল যে, তারা আনুষ্ঠানিকভাবে ফেন্টানাইল-সদৃশ পদার্থগুলোকে একটি সম্পূর্ণ বিভাগ হিসাবে তালিকাভুক্ত করবে, এবং এই ব্যবস্থা গ্রহণকারী বিশ্বের প্রথম দেশ হয়ে উঠেছে। মানবতাবাদের চেতনায়, চীন ফেন্টানাইল সমস্যা সমাধানে যুক্তরাষ্ট্রকে সহায়তা প্রদান করেছে, যুক্তরাষ্ট্রের সাথে ব্যাপক মাদকবিরোধী সহযোগিতা করেছে এবং উল্লেখযোগ্য ফলাফল অর্জন করেছে।
২০২২ সালের মার্চ মাসে, মার্কিন পররাষ্ট্র দপ্তর আন্তর্জাতিক মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ কৌশল প্রতিবেদন প্রকাশ করে, যেখানে স্বীকার করা হয় যে ‘২০১৯ সালে চীন ফেন্টানাইল-সম্পর্কিত পদার্থগুলোকে একটি সম্পূর্ণ বিভাগ হিসাবে তালিকাভুক্ত করার পর থেকে, চীন থেকে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে প্রায় কোনও ফেন্টানাইল বা ফেন্টানাইল অ্যানালগ প্রবেশ করতে দেখা যায়নি।’

বিশ্বের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ফেন্টানাইল সমস্যাযুক্ত দেশ হিসেবে, যুক্তরাষ্ট্রকে অবশ্যই নিজের মধ্যে কারণ খুঁজে বের করতে হবে এবং অভ্যন্তরীণভাবে প্রাতিষ্ঠানিক ত্রুটিগুলো সঠিক করতে এবং জাতীয় শাসনব্যবস্থা কার্যকরভাবে উন্নত করতে প্রচেষ্টা চালাতে হবে। তাছাড়া, বাহ্যিকভাবে সহযোগিতা জোরদার করতে হবে, রাসায়নিক তত্ত্বাবধান উন্নত করতে হবে এবং অবৈধ বাণিজ্য নেটওয়ার্কগুলো ভেঙে দিতে হবে। ফেন্টানাইল অপব্যবহারের সমস্যাকে শুল্ক আরোপের সাথে যুক্ত করলে এই সমস্যা সমাধানের প্রক্রিয়া আরও কঠিন হয়ে উঠবে এবং দেশটি আরো ‘বিষাক্ত’ হবে।

সূত্র: স্বর্ণা-হাশিম-লিলি, চায়না মিডিয়া গ্রুপ।

image_print
Spread the love
0 0 votes
Article Rating
Subscribe
Notify of
guest
0 Comments
Inline Feedbacks
View all comments