কভারেজ নিউজস্থানীয় সংবাদ

নারীর প্রতি সহিংসতা বন্ধে প্রতিবাদ সমাবেশ ও ৭ দফা দাবি

নিজস্ব প্রতিবেদক : নারীর প্রতি চলমান সহিংসতা, একের পর এক লাগাতার ধর্ষণের প্রতিবাদে আজ ১৪ মার্চ (শুক্রবার) সকাল ১০ টায় জাতীয় প্রেসক্লাবের সামনে ৭ দফা দাবী নিয়ে প্রতিবাদ সমাবেশ করেছে “মুক্তচিন্তা পরিষদ বাংলাদেশ”।

প্রতিবাদ সমাবেশে উপস্থিত ছিলেন মুক্তচিন্তা পরিষদ বাংলাদেশের সদস্যবৃন্দ, প্রগতিশীল ও ধর্ষণ বিরোধী সচেতন ব্যক্তিবর্গ। উক্ত প্রতিবাদ সমাবেশে সংগঠনের সদস্য সচিব ফারুক হোসেন সাদীর সঞ্চালনায় বক্তব্য রাখেন লেখক ও গবেষক মজিব রহমান, লেখক হুজ্জাতুল ইসলাম, কমরেড জসিম উদ্দিন, মুক্তচিন্তা পরিষদের আহবায়ক মোতালেব দেওয়ান ও সদস্য রাইহান কবির রনো, মধুসূদন রায়, আলেকজান্ডার হিমেল, নয়ন সরকার, আবুল হোসেন মুরাদ, মিজানুর রহমান ও নুসমা খান সহ প্রমুখ।

সমাবেশে বক্তারা বলেন, আজ আমরা এখানে এক অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ও বেদনাদায়ক বাস্তবতার বিরুদ্ধে প্রতিবাদ জানাতে একত্রিত হয়েছি—সেটি হলো নারীর প্রতি সহিংসতা। এই সহিংসতা এখন কেবল শারীরিক বা যৌন নির্যাতনের মধ্যে সীমাবদ্ধ নয়; এটি মানসিক, সামাজিক এবং অর্থনৈতিকভাবে নারীদের দমিয়ে রাখার একটি ধারাবাহিক পদ্ধতি হয়ে দাঁড়িয়েছে।

আজ আমাদের হৃদয় ভেঙে গেছে—কারণ, মাত্র আট বছর বয়সী একটি শিশু, আছিয়া, ধর্ষণের শিকার হয়ে গতকাল মারা গেছে। আট বছর! এই বয়সে যেখানে তার বই হাতে স্কুলে যাওয়ার কথা ছিল, রঙিন স্বপ্ন দেখার কথা ছিল, সেখানে সে ধর্ষণের মতো নিষ্ঠুর পাশবিকতার শিকার হয়ে চলে গেল পৃথিবী ছেড়ে। আমরা কী করে চুপ থাকতে পারি? আমরা কী করে এই সমাজের অংশ হয়ে নিজেকে মানুষ বলি?

এই ঘটনাটি কেবল একটি সংখ্যায় পরিণত হবার নয়। আছিয়া কোনো সংবাদপত্রের শেষ পাতার খবর নয়—সে আমাদেরই মেয়ে, আমাদেরই বোন, আমাদের ভবিষ্যতের প্রতিচ্ছবি।

বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর (BBS) সাম্প্রতিক তথ্য বলছে, প্রতি তিন জন নারীর মধ্যে এক জন জীবনের কোনো না কোনো সময় পারিবারিক সহিংসতার শিকার হন। আর এই সহিংসতার অধিকাংশই ঘটে স্বজন, স্বামী বা ঘনিষ্ঠ মানুষের হাতে। ভিকটিমের মুখ বন্ধ করে রাখা হয় ‘পরিবারের মান-ইজ্জত’-এর নামে।

আমরা যদি আরও গভীরে তাকাই, তাহলে দেখি—গ্রামে হোক বা শহরে, কর্মক্ষেত্রে হোক বা শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে—নারীরা প্রতিনিয়ত হেনস্তা, বৈষম্য ও হয়রানির শিকার হচ্ছেন। ধর্ষণ, অ্যাসিড নিক্ষেপ, যৌতুকের জন্য নির্যাতন কিংবা খুন—এই তালিকা যেন থামছেই না।

কিন্তু প্রশ্ন হচ্ছে—আমরা কি আর চুপ করে বসে থাকবো?না, আমরা আর চুপ থাকবো না। আমরা এখানে আজ দাঁড়িয়েছি এই অন্যায়ের বিরুদ্ধে আওয়াজ তুলতে। আমরা বলছি: “নারীর প্রতি সহিংসতা বন্ধ করো, ন্যায়বিচার নিশ্চিত করো!”

মনে রাখতে হবে, একটি জাতি তখনই উন্নত হতে পারে যখন সেই জাতির নারীরা নিরাপদ, স্বাধীন এবং মর্যাদাসম্পন্ন জীবনযাপন করতে পারেন।

শেষে একটি কথা বলতে চাই—
প্রতিটি প্রতিবাদ যেন একটি পরিবর্তনের বীজ বপন করে। আমাদের কণ্ঠস্বর যেন নিপীড়নের দেয়াল ভেঙে ফেলে। আমরা যেন এমন এক বাংলাদেশ গড়তে পারি, যেখানে কোনো নারীকে আর চোখের পানি গোপন করে বাঁচতে না হয়।

সমাবেশের শেষে ৭ দফা দাবি পেশ করা হয়-
১. ধর্ষিতার নাম পরিচয় ছবি কোন অবস্হাতেই প্রকাশ করা যাবে না এবং আইন প্রয়োগকারী সংস্হাগুলো স্বপ্রণোদিত হয়ে এটি কঠোরভাবে নিয়ন্ত্রণ করবে।
২. প্রতিটি ইমার্জেন্সি হেলথ সার্ভিস সেন্টারে (এসওএস) রেপ ভিক্টিমের শারীরিক পরীক্ষার জন্য নারী চিকিৎসক নিয়োগ দিতে হবে।
৩. ধর্ষিতার আইনি খরচ, চিকিৎসা খরচ এবং পুনর্বাসনের পূর্ণ দায়িত্ব সরকারের নিতে হবে।
৪. সামাজিক সালিশির মাধ্যমে ধর্ষণ মামলা দফা রফার সুযোগ রহিত করতে হবে।
৫. ধর্ষণ মামলা পরিচালনায় পুলিশ বাহিনীকে বিশেষ প্রশিক্ষণ দিতে হবে। ধর্ষিতার বয়ান অবশ্যই একজন নারী পুলিশ রেকর্ড করবেন।
৬. নারীবিদ্বেষী বক্তব্য, ধর্ষকের পক্ষ নিয়ে ধর্ষিতাকে দোষারোপ ধর্ষণের উসকানি হিসেবে গণ্য করে আইন দ্বারা নিষিদ্ধ করতে হবে।
৭. ছেলে শিশু বলাৎকার ধর্ষণ মামলার অধীনে আনতে হবে।

image_print
Spread the love
0 0 votes
Article Rating
Subscribe
Notify of
guest
0 Comments
Inline Feedbacks
View all comments