“ধারাবাহিক ৪র্থ পর্ব: অজানা এক টান”
হালকা বাতাসে তানিশার চুলগুলো উড়ে যাচ্ছিল, বিকেলের শেষ আলো যেন তার মুখে এক মায়াবি আভা ছড়িয়ে দিয়েছে। আবির চুপচাপ দাঁড়িয়ে ছিল, কিন্তু তার হৃদয় যেন দিগন্ত ছুঁতে চাইছে।
একটা অজানা অনুভূতি ধীরে ধীরে তার মধ্যে বাসা বাঁধছে, এক অদ্ভুত টান, যা সে বুঝতে পারছে না, অথচ অস্বীকারও করতে পারছে না।
“তুমি কি কখনো ভেবেছো, কিছু মানুষ আসলে আমাদের জীবনের বিশেষ অংশ হয়ে যায়?” তানিশা আচমকা বলে উঠল, তার কণ্ঠে ছিল এক অদ্ভুত কোমলতা।
আবির চমকে তাকাল।
“মানে?”
তানিশা একটু হাসল। “যেমন ধরো, আকাশ আর চাঁদের সম্পর্ক, নদী আর তটের সম্পর্ক… তারা একে অপরের থেকে দূরেও থাকে, আবার কখনো আলাদা হয় না।”
আবির এক মুহূর্তের জন্য স্তব্ধ হয়ে গেল।
সে কি তানিশার কথার মধ্যে কোনো ইঙ্গিত খুঁজে পাচ্ছে?
তার মনে হলো, তানিশার প্রতিটি শব্দ যেন তার বুকের ভেতর ঢেউ তুলছে।
বাতাস তখন গোধূলির রঙ নিয়ে এসেছে, গাছে গাছে পাখির ডাক—সবকিছু যেন মিশে গেছে এক মায়াবি সুরে।
আবির মনে মনে ভাবল, “তানিশা… তুমি কি জানো? তুমিই তো সেই নদীর মতো, যে আমার বুকের ভেতর অবিরত বয়ে চলেছে!”
কিন্তু সে কি কখনো তার মনের এই কথা তানিশাকে বলতে পারবে?
নাকি সে চিরদিন এই অনুভূতি নিজের মধ্যে লুকিয়ে রাখবে?
আবিরের কাছে দিনগুলো এখন যেন নতুন রঙে রাঙা। তানিশার সঙ্গে কাটানো প্রতিটি মুহূর্ত যেন একটা গল্প হয়ে যায়, প্রতিটি কথা যেন কবিতার মতো শোনায়।
একদিন বিকেলে স্কুল শেষে, তানিশা আর আবির একসাথে গেট দিয়ে বের হচ্ছিল। আকাশটা তখন কমলা রঙে ঢেকে গেছে, যেন সূর্য বিদায়ের আগে ভালোবাসার রঙ ছড়িয়ে দিতে চাইছে।
“আবির, জানো? কখনো কখনো আমার মনে হয়, কিছু মানুষ চিরদিন কাছেই থাকে, এমনকি দূর থেকেও,” তানিশা ধীরে ধীরে বলল।
আবির কৌতূহল নিয়ে তাকাল, “মানে?”
তানিশা হেসে বলল, “তুমি কি কখনো গোধূলির আকাশ দেখেছ? দিনের আলো চলে যায়, কিন্তু কিছুক্ষণ রঙ রেখে যায়… যেমন কিছু মানুষ আমাদের জীবনে আসে, চলে যায় না, শুধু তাদের ছোঁয়া রেখে যায়!”
আবির বুঝতে পারছিল, তানিশার প্রতিটি কথা তার হৃদয়ের গহীনে গিয়ে বাজছে।
কিন্তু সে কি কখনো বলতে পারবে—
“তানিশা, যদি গোধূলি আলো হয়, তাহলে তুমি আমার সেই শেষ আলো, যা অন্ধকারেও পথ দেখায়!”
হয়তো সময় এখনো আসেনি।
কিন্তু আবিরের মনে একটাই প্রশ্ন, এই অনুভূতি কি শুধু বন্ধুত্ব, নাকি এর চেয়েও বেশি কিছু?
সেদিন রাতে ঘুমোতে গিয়ে আবির জানলার পাশে দাঁড়িয়ে আকাশের চাঁদের দিকে তাকিয়ে থাকল।
একটা শীতল বাতাস বয়ে গেল, তার কানে যেন এক মায়াবি সুর ভেসে এল—
“আবির, তুমি কি জানো, কিছু অনুভূতি শুধু অনুভব করলেই হয়, বলার দরকার হয় না?”
সে ধীরে ধীরে চোখ বন্ধ করল। হয়তো সত্যিই, কিছু অনুভূতি বলা হয় না, শুধু হৃদয়ের গভীরে লেখা থাকে!
লেখক পরিচিতি-
মোঃ পারভেজ ইসলাম (কলম নাম: অনন্ত) ২০০৫ সালের ৮ই জুন চুয়াডাঙ্গা জেলার বড় শলুয়া গ্রামে এক মুসলিম পরিবারে জন্মগ্রহণ করেন। পিতার নাম মোঃ রাসেল মিয়া এবং মাতার নাম পারুলা খাতুন। বর্তমানে তিনি বড়শালুয়া নিউ মডেল ডিগ্রী কলেজে অধ্যয়নরত। ছোটবেলা থেকেই কবিতা ও সাহিত্যের প্রতি তার গভীর অনুরাগ। তার লেখায় প্রেম, প্রকৃতি, জীবন ও আবেগের এক অপূর্ব সমন্বয় ফুটে ওঠে, যা পাঠকদের হৃদয় ছুঁয়ে যায়।