সকালটা ছিল যেন একেবারে ছবির মতো। ১লা বৈশাখ। ঢাকার পুরান শহরের সরু গলিতে ঘুরে বেড়াচ্ছিল রঙিন মানুষের ঢল। পাঞ্জাবি-পায়জামার বাহার, নারকেল পাতায় সাজানো গেট, ঢোলের তালে ছন্দ মিলিয়ে হাসছিল শহরটা।
তিন বছর পর দেশে ফিরেছে আরিশ। বইমেলা মিস করেছে, ঈদ গেছে চোখের আড়ালে, কিন্তু পহেলা বৈশাখ— এটা কিছুতেই হাতছাড়া করতে চায়নি। তাই ভোর হতেই বেরিয়ে পড়েছিল সে— পুরান ঢাকার প্রাণে, সেই চেনা গলিতে, যেখানে একসময় এক জোড়া চোখ তার পৃথিবী পাল্টে দিয়েছিল।
রঙতুলির মতো রঙিন সেই চোখের নাম— নীলা। নীলার সাথে শেষ দেখা তিন বছর আগে, বিদায়বেলায় কেবল একফোঁটা কান্না আর একটা “ভালো থাকিস”। তাদের সম্পর্কটা নাম পায়নি কখনো, শুধু একটা অসমাপ্ত গল্পের মতো থেকে গিয়েছিল।
হঠাৎ ভিড়ের মধ্যে তাকে দেখল আরিশ। ঠিক সেই আগের মতো— সাদা শাড়িতে লাল পাড়, কপালে টিপ, আর সেই চোখ দুটো… কিছুই বদলায়নি। নীলা তাকিয়ে রইল, কিছু বলল না। আরিশ এগিয়ে গেল। “নীলা?” তিন বছর পুরনো নামটা নতুন করে জেগে উঠল বাতাসে।
তারা পাশাপাশি হাঁটতে লাগল, কথা বলছিল না কেউ। কিন্তু নিঃশব্দে চলছিল কথোপকথন— তোমার এখন কেমন দিন কাটে? তোমার হাতটা এখন কেউ ধরে রাখে কি?
ঠিক তখনই হঠাৎ আকাশ বদলে গেল। এক চিলতে রোদ হারিয়ে গিয়ে নামল অদ্ভুত নিঃশব্দ বৃষ্টি। মেলা ছুটে গেল আশ্রয়ের খোঁজে, আলপনা ভিজে গেল, আরিশ আর নীলা ছুটল না।
তারা দাঁড়িয়ে থাকল— একটা পুরনো পানির ট্যাংকের নিচে, ঝুপঝুপ করে বৃষ্টির শব্দে ঢাকা পড়ল তিন বছরের সব নীরবতা। আর তখনই নীলা বলল, “জানিস, তুই চলে যাওয়ার পরও আমি প্রতি পহেলা বৈশাখ এই রাস্তায় হাঁটি… ভাবি, যদি ফিরে আসিস।”
আরিশ তাকিয়ে রইল ওর দিকে— ভেজা কপালে একফোঁটা পানি গড়িয়ে পড়ছিল। সে জানত, এ মুহূর্তটায় কোনো শব্দের দরকার নেই। এই বৃষ্টিই যেন বলে দিচ্ছে সব কথা।
আস্তে করে সে বলল, “তুই জানিস না, আমি এই দিনটার জন্যই ফিরেছি।”
বৃষ্টি ততক্ষণে আরও জোরে পড়ছে, চারপাশে কেবল ছাতা, প্লাস্টিক আর দৌড়াদৌড়ি— কিন্তু ওই দুইজনে দাঁড়িয়ে রইল এক জায়গায়, যেন এই হঠাৎ বৃষ্টি হয়ে উঠল তাদের গল্পের নতুন শুরু।
আর শহরটা… সে জানে, এই বৈশাখে আরও এক অসমাপ্ত গল্প পেয়েছে নতুন পাতা।
(পরবর্তী লেখা পড়তে চোখ রাখুন বুলেটিন নিউজে)
লেখক পরিচিতি-
কবি খাদিজা আক্তার মিলি। তিনি ১৯৮৫ সালের ৫ই সেপ্টেম্বর এক মুসলিম পরিবারে জন্মগ্রহন করেন। কবি মধ্যবিত্ত পরিবারে বড় হন।বাবা আব্দুল মান্নান খান। মা জরিনা বেগম।কবি মোড়েলগন্জ এস এম কলেজ থেকে বি বি এস স্নাতক পাস করেন। তিঁনি তার অবসর সময়ে লেখালেখি করেন এবং লেখালেখির পাশাপাশি আবৃত্তি চর্চা করেন।কবি বুলেটিন নিউজে নিয়মিত লেখেন। তিনি অসংখ্য সাহিত্য সম্মাননা অর্জন করেছেন।