ছোট গল্প “আমি অবহেলিত একটি ফুল”
লোকের কথা তো লোকজন বলবেই, সাকিরা মেয়েটা খুব কালো, কানে ও শুনতে পায় না ভাল করে লোকের মুখে এসব কথা শুনে সাকিরা খুব কষ্ট পায়।সাকিরা তার মাকে বলে, মা আমি কি দেখতে এতটাই বাজে। নারে মা তুই আমার কলিজার টুকরা, তোকে লোকে কালো বললে মন খারাপ করিস না। তোর মুখে মায়া আছে। সাকিরা তার মায়ের কাছ থেকে বিদায় নিয়ে স্কুলের পথে হাঁটে। পিছন থেকে তার সমবয়সী ছেলে মেয়েরা তাকে ডাকে, আমাকে সাকিরা সাকিরা বলে তোমরা ডাকছো কেন?সাকিরা তুই তো কানে শুনতে পাসনে, আমরা যে তোকে ডাকছি শুনলি কি করে। আচ্ছা আমাদের কাছে যেহেতু এসে গেছত আমাদের সবার নাম বল, আর তুই যদি নাম বলতে না পারস তোকে আজকে সবাই মিলে ইচ্ছে মত মারব।মারিস না আমাকে সিসি,পলি,সাকী, শান্ত, তুহিন। নামগুলো তো বলতে পারলি কিন্তু, তুই আমাদের ধারে কাছে আসবি না কোনোদিন, তোর যা চেহারা আর গায়ের রং। তুই তো কানেও শুনছ না বয়ড়া নোংরা জামা কাপড় পড়ে স্কুলে আসছত।তুই আজকে আমাদের স্কুলে ব্যাগগুলো সবার বাসায় দিয়ে আসবি। এটা হল তোর শাস্তি, আচ্ছা আমি তোমাদের ব্যাগগুলো সবার বাসায় দিয়ে আসব। সাকিরা ব্যাগগুলো কারো বাসায় না দিয়ে স্কুলের পিছনে রেখে গেছে। সাকিরা কোনোদিন নিজেকে অবহেলা করেনি বা তার পরিবার তাকে অবহেলা করেনি। মা তাকে খুব ভালোবাসে। মায়ের একটিমাত্র মেয়ে। সন্ধ্যায় যখন সবাই পড়তে বসবে দেখে কারোর বাসায় স্কুল ব্যাগ নেই। সিসি, পলি, সাকী, শান্ত, তুহিন সাকিরার কাছে এসে স্কুল ব্যাগ নিতে আসছে।কী তোমরা আমার মত কালো বয়ড়া নোংরা জামা পড়া মানুষের কাছে আসছো কেন? এই যে সিমি, পলি, সাকী,শান্ত , তুহিন নিজেকে কি ভাব তোমরা, আমাকে কি এতই বোকা ভাবছো, যা এখন এই রাতে গিয়ে স্কুলের পিছন থেকে ব্যাগ নিয়ে আয়। আমি কি মানুষ না তোমরা আমার সাথে এমন আচরণ করছো, যে আমি মানুষই না।আগামী কাল স্কুলে তোমাদের সাথে দেখা হবে। স্যারের কাছে সব বলব। আমরা একই স্কুলে পড়ে যদি মানুষকে মানুষ হিসেবে গ্রহণ না করি তাহলে স্কুলে যাব কেন? সাকিরা তুই আমাদের সাথে এমন করিস না, বাসায় এবং স্কুলে মার খেলে বাঁচব না রে।তোর সাথে আর এম৷ করব না। সকালে ঘুম থেকে ওঠে সাকিরা স্কুলে গিয়ে স্যারের কাছে সব বলে। স্কুল থেকে বাসায় ফেরার পথে ওরা সবাই আবার সাকিরা কে ভিন্ন কথা বলে ভেঙ্গাচ্ছে। নিচের দিকে তাকিয়ে সাকিরা বাসায় চলে আসে। তোমরা কোনোদিন ভাল মানুষ হবি না। বাসার আশেপাশে সব আত্মীয় সাকিরা কে নিয়ে খুব হাসাহাসি করে, কালো কানে শুনে না, বিয়ে করবে কে এসব কথা শুনে সাকিরা খুব কান্না করে। সব আত্মীয়রা ভিন্ন কথা শুনায় হাসাহাসি করে অন্য লোকের কাছে বদনাম করে সাকিরা কে নিয়ে। সাকিরা সবার সাথে কথা বলা বন্ধ করে দেয়, একা একা থাকে সারাদিন বই পড়ে, সংসারের সব কাজ করে তাও কারো কাছে যায় না।কিছু দিন পর সাকিরার পরীক্ষার ফলাফল প্রকাশ হয়েছে সাকিরা সবচেয়ে বেশি নাম্বার পেলে পাস করছে।সবাই হিংসা করে সাকিরাকে দেখে। সিমি, পলি, সাকী, শান্ত, তুহিন পিছন থেকে জোরে জোরে ডাকে সাকিরা, এই সাকিরা পিছন ফিরে বলে আমাকে এভাবে ডাকছো কেন? তোকে ডাকিনি বয়ড়া, এই শোন আমি কানে শুনতে পাই বয়ড়া না। সাকিরা , সাকিরা বলে ডাকছে কে?সাকিরা আমি তোর ফুফুরে তুই তো কানে শুনতে পাসনা, তোকে নিয়ে টেনশন হয়। কে করবে তোকে বিয়ে। পড়ালেখার তো তুই খুব ভাল, চাকরি করবি কিন্তু সুন্দর হওয়ার ক্রীম ব্যবহার কর তাহলে বিয়ে করা হলেও হতে পারে। সাকিরা আজ প্রতিষ্ঠিত কিন্তু মানুষ তাকে বলা কথাগুলো সাকিরা খুব মনে পড়ছে। চোখ দিয়ে একফোঁটা অশ্রু তার হাতে পড়তে সে চমকে ওঠল তার কান্না টা জয়ে কান্না, আনন্দের কান্না।
( সীমা কবির পরবর্তী লেখা পেতে চোখ রাখুন বুলেটিন নিউজ ২৪.কমে)
কবি পরিচিতি :
আউলিয়া আক্তার সীমা, ছদ্মনাম ( শুভ্রতা) তিনি সিলেট বিভাগের হবিগঞ্জ জেলার এক সম্ভ্রান্ত মধ্যবিত্ত মুসলিম পরিবারে জন্মগ্রহণ করেন।তার পিতার নাম মো: ফরিদ মিয়া, মাতার নাম মোছা : ফরিদা আক্তার। তিনি বর্তমানে পড়াশোনা করছেন চুনারুঘাট সরকারি কলেজে। অর্নাস দ্বিতীয় বর্ষে ইতিহাস বিভাগে পড়াশোনা করেন । ছোট বেলা থেকে কবি বই পড়া এবং লেখালেখি প্রতি প্রবল আগ্রহ। কয়েকটি যৌথ কাব্যগ্রন্থে ও বিভিন্ন ম্যাগাজিন বা পত্রিকায় কবি লেখা প্রকাশ হয়েছে। নারীর জয়যাত্রা নামে একটি যৌথ কাব্যগ্রন্থ কবি সম্পাদিত করেছেন । এছাড়াও তিনি সমাজের উন্নয়নমূলক, সংস্করণ বিভিন্ন কাজের জড়িত আছেন। তিনি একজন সেচ্ছাসেবী হয়ে কাজ করছে বিভিন্ন ফাউন্ডেশনে। অসহায় সুবিধা বঞ্চিত মানুষের মুখে হাসি ফুটানো কাজেই বেঁচে থাকার অনুপ্রেরণা খুঁজে পান।