নিলা,মিলা, অবন্তী তিন বান্ধবীর জুটি গড়ে ওঠেছিল প্রাথমিক বিদ্যালয় হতে।তাদের বন্ধুত্ব মাধ্যমিকের গন্ডী পেরিয়ে কলেজ পর্যন্ত গিয়েছিল।উচ্চ মাধ্যমিকে প্রথম বর্ষে পড়ার সময় অবন্তীর বিয়ে হয়ে যায়।নিলা আর মিলা রাজজোটক হয়ে ভার্সিটি পর্যন্ত তাদের বন্ধুত্ব টিকিয়ে রাখে।দুজন মিলে মাঝে মাঝে অবম্তীর শ্বশুড় বাড়ীতে যায়।তখন তিনজনের খুনসুটি চলতে থাকে। পাভেল অবন্তীর চাচাতো দেবর।পড়ে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে নীলা আর মিলার সাথে। একই বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ার সুবাদে নীলা আর মিলার সাথে বেশ ভাব জমে।ভার্সিটি চত্বরে তাদের মধ্যে এক ধরনের হৃদ্যতা সৃষ্টি হয়।অবন্তীর খোঁজও পাওয়া যায় পাভেলের কাছ হতে।চারজনের বন্ধুত্ব বেশ জমে উঠেছিল।বন্ধুত্বের মাঝে হঠাৎ পাভেল বুঝতে পারে সে মিলাকে ভালোবেসে ফেলেছে।মিলাকে মনের কথা জানালে সে পাভেলকে ফিরিয়ে দিতে পারেনি।পাভেলের ব্যক্তিত্ব তাকে প্রবলভাবে আকর্ষণ করে।তারা দুজন চমৎকার সময় পার করতে লাগলো।কিন্তু বিপত্তি ঘটে নীলাকে নিয়ে।কারণ নীলাও পাভেলকে ভালোবেসে ফেলে।নীলা ব্যাপারটা অবম্তীকে জানায়।অবন্তী পাভেলকে জানালে পাভেল দোটানায় পড়ে যায়।মিলা ব্যাপারটা জানার পর পাভেলকে ডেকে বলে, “তোমাকে নীলা সত্যিই খুব ভালোবাসে,আমি ভালোবাসিনা,আমি তোমার সাথে দুস্টুমী করেছি”।এই বলে মিলা অট্ট হাসি দিয়ে চলে যায়।সে নীলাকে বলে,” আমি তোর মনের ভাষা বুঝতে পারি।আমি জানতাম তুই পাভেলকে ভালোবাসিস,এ ক’দিন ওর সাথে মিশে তোকে একটু পরীক্ষা করলাম”।তারপর মিলা নীলা আর পাভেলের হাত এক করে দিয়ে দ্রুত স্থান ত্যাগ করলো।পাভেল-নীলা গভীর প্রেমে মজে রইলো।মিলা সব ভুলে স্বাভাবিক হতে চাইলো।কিন্তু পারলোনা।প্রথম প্রেম ভুলবে কী করে! সে আস্তে আস্তে নেশায় জড়িয়ে গেলো।মাস্টার্স পাশ করার পর পরই বেশ ধুমধাম করেই নিলা আর পাভেলের বিয়ে হয়ে গেলো।এদিকে মিলা তখন মাদকাসক্ত সেন্টারে।ওখান হতে ফেরার পর সে স্বাভাবিক জীবনে ফিরতে চাইলেও অতিরিক্ত মাদক সেবনের ফলস্বরুপ জন্ম নেয়া রোগ হতে সে মুক্তি পেলোনা।হার্ট প্রায় অকেজো।ফুসফুসে ক্যান্সার বাসা বেঁধেছে।হাসপাতালের বেডে শুয়ে প্রমাদ গুনছে মৃত্যুর।খবর পেয়ে নীলা আর পাভেল দেখতে যায়।কিন্তু এ কোন মিলা!চেনাই যাচ্ছে না।ওদের দেখে মিলা খুব খুশি হয়।পাভেল হাসপাতালে ডাক্তার হতে জানতে পারে মিলা সেদিন সব মিথ্যা বলেছিল।আসলেই সে পাভেলকে ভালোবাসতো।বন্ধু নিলার জন্য তার আত্মত্যাগই আজ কাল হয়ে দাঁড়িয়েছে।পাভেল নিজেকে অপরাধী ভাবতে থাকে।দুইমাস চিকিৎসাধীন থাকার পর হাসপাতালেই মিলা মৃত্যুর কোলে ঢলে পড়ে।পাভেল ওর মৃত্যুর জন্য নিজেকে দায়ী মনে করে।কাজকর্মে খুব একটা মন দিতে পারে না।সারাদিন উদাস হয়ে বসে থাকে।নীলা কিছু জিজ্ঞেস করলেও বলে না।আস্তে আস্তে সে ও নেশাগ্রস্ত হয়ে পড়ে।অবন্তীর কাছ হতে নীলা মিলার মৃত্যুর কারণ জানতে পেরে হতাশ হয়ে পড়ে।এর মধ্যে সে পাভেলের নেশাগ্রস্ত হবার ব্যপারটা বুঝতে পেরে তাকে সংশোধন কেন্দ্রে পাঠিয়ে দেয়।দীর্ঘ তিনমাস চিকিৎসা শেষে তাকে ঘরে আনা হয়।পাভেল সুস্থ হওয়ার পর তাদের কোল জুড়ে কন্যা সন্তানের জন্ম হয়।নীলা পাভেল সে কন্যার নাম রাখে মিলা।কন্যা মিলাকে নিয়ে বন্ধু মিলার স্মৃতি নিয়ে তাদের বাকী জীবন সুখে শান্তিতে কেটে যায়।
লেখক পরিচিতি-
কবি নাঈমা হক চট্টগ্রাম জেলার রাউজান উপজেলার কদলপুর গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন।তাঁর পিতা এম,মোজাম্মেল হক এবং মাতা তাহেরা হক।তিনি কুসুম কুমারী সিটি কর্পোরেশন বালিকা উচ্চ বিদ্যালয় হতে এস.এস.সি,চট্টগ্রাম সরকারি কলেজ হতে এইচ.এস.সিএবং চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় হতে সমাজতত্ত্ব বিষয়ে বিএসএস(সম্মান),এমএসএস ডিগ্রী লাভ করেন।বর্তমানে তিনি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে ‘প্রধান শিক্ষক ‘পদে কর্মরত আছেন।