আন্তর্জাতিক সংবাদ

চীন-মার্কিন অর্থনৈতিক ও বাণিজ্যিক সম্পর্ক সংক্রান্ত চীনের অবস্থানগত শ্বেতপত্র প্রকাশ

আন্তর্জাতিক ডেস্ক : চীনের জাতীয় পরিষদের তথ্য কার্যালয় গত বুধবার ‘চীন-মার্কিন অর্থনৈতিক ও বাণিজ্যিক সম্পর্কের কিছু ইস্যুতে চীনের অবস্থানগত’ শ্বেতপত্র প্রকাশ করেছে, যা চীন-মার্কিন অর্থনৈতিক সম্পর্কের সত্যতা স্পষ্ট করে এবং সংশ্লিষ্ট ইস্যুতে চীনের নীতি-অবস্থান ব্যাখ্যা করেছে।

শ্বেতপত্রের কাঠামো:শ্বেতপত্রটি ভূমিকা ও সমাপ্তি ছাড়া ছয়টি অংশে বিভক্ত:
১. চীন-মার্কিন অর্থনৈতিক সম্পর্কের প্রকৃতি হলো পারস্পরিক সুবিধা ও সমৃদ্ধি
২. চীন, চীন-মার্কিন প্রথম ধাপের অর্থনৈতিক চুক্তি সততার সাথে বাস্তবায়ন করেছে
৩. মার্কিন পক্ষ চীন-মার্কিন প্রথম ধাপের অর্থনৈতিক চুক্তির দায়িত্ব লঙ্ঘন করেছে
৪. চীন মুক্ত বাণিজ্যের ধারণা অনুশীলন করে এবং বিশ্ব বাণিজ্য সংস্থার নিয়ম কঠোরভাবে মেনে চলে
৫.একতরফাবাদ ও সংরক্ষণবাদ দ্বিপাক্ষিক অর্থনৈতিক সম্পর্কের উন্নয়নে ক্ষতি করে
৬.সমতার ভিত্তিতে সংলাপ ও পারস্পরিক সুবিধামূলক সহযোগিতার মাধ্যমে চীন-মার্কিন অর্থনৈতিক মতপার্থক্য সমাধান সম্ভব।

প্রধান বিবরণ: শ্বেতপত্রে উল্লেখ করা হয়েছে যে, চীন-মার্কিন কূটনৈতিক সম্পর্ক প্রতিষ্ঠার ৪৬ বছরে দ্বিপাক্ষিক অর্থনৈতিক সম্পর্ক অব্যাহতভাবে উন্নত হয়েছে। ১৯৭৯ সালে ২৫০ কোটি ডলারেরও কম বাণিজ্য পরিমাণ ২০২৪ সালে ৬৮ হাজার ৮৩০ কোটি ডলারে পৌঁছেছে। তবে সাম্প্রতিক বছরগুলোতে মার্কিন একতরফাবাদ ও সংরক্ষণবাদের উত্থান চীন-মার্কিন স্বাভাবিক অর্থনৈতিক সহযোগিতাকে ব্যাহত করেছে। ২০১৮ সাল থেকে চীন-মার্কিন বাণিজ্য সংঘাতে মার্কিন পক্ষ ৫০ হাজার কোটি ডলারেরও বেশি চীনা পণ্যের উপর উচ্চশুল্ক আরোপ করেছে এবং চীন-বিরোধী নিষেধাজ্ঞা নীতি অব্যাহত রেখেছে। জাতীয় স্বার্থ রক্ষায় দৃঢ়প্রতিজ্ঞ চীন কঠোর পাল্টা ব্যবস্থা নিতে বাধ্য হয়েছে। একই সাথে, চীন সর্বদা সংলাপ ও আলোচনার মাধ্যমে বিরোধ সমাধানের মৌলিক অবস্থান বজায় রেখেছে এবং মার্কিন পক্ষের সাথে বহু দফা অর্থনৈতিক আলোচনা চালিয়ে গেছে।

মার্কিন নীতির সমালোচনা: শ্বেতপত্রে উল্লেখ করা হয়েছে যে, মার্কিন পক্ষ সাম্প্রতিককালে ‘আমেরিকা প্রথম’ বাণিজ্য ও বিনিয়োগ নীতি স্মারক এবং ‘আমেরিকা প্রথম’ বাণিজ্য নীতি প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে, যাতে চীনা পণ্যের উপর সম্পূর্ণ অতিরিক্ত শুল্ক আরোপ করা হয়েছে। এ ছাড়াও ফেন্টানিল ইস্যুকে অজুহাত দেখিয়ে চীনের উপর শুল্ক আরোপ, ‘সমতুল্য শুল্ক’ প্রণয়ন এবং অতিরিক্ত ৫০% শুল্ক বৃদ্ধি করা হয়েছে। পাশাপাশি চীনের সামুদ্রিক, লজিস্টিক ও জাহাজ নির্মাণ শিল্পের বিরুদ্ধে বন্দর ফি আরোপসহ ৩০১ তদন্তের নিষেধাজ্ঞা জারি করা হয়েছে। এসব শুল্ক হুমকি ও চাপের নীতি মার্কিন পক্ষের একতরফাবাদী ও উৎপীড়নের স্বরূপ উন্মোচন করেছে, যা বাজার অর্থনীতির নিয়মের পরিপন্থী এবং বহুপাক্ষিকতাবাদের সাথে সাংঘর্ষিক। চীন আন্তর্জাতিক আইনের মৌলিক নীতিমালা ও আইন-কানুন অনুযায়ী প্রয়োজনীয় পাল্টা ব্যবস্থা নিয়েছে।

চীনের সমাধান প্রস্তাব: শ্বেতপত্রে বলা হয়েছে, চীন সর্বদা বিশ্বাস করে যে চীন-মার্কিন অর্থনৈতিক সম্পর্কের প্রকৃতি হলো পারস্পরিক সুবিধা ও সমৃদ্ধি। দু’টি বৃহৎ রাষ্ট্র হিসেবে যাদের উন্নয়নের স্তর ও অর্থনৈতিক ব্যবস্থা ভিন্ন, তাদের মধ্যে মতপার্থক্য ও সংঘাত স্বাভাবিক। তবে একে অপরের মৌলিক স্বার্থ ও গুরুত্বপূর্ণ উদ্বেগের প্রতি সম্মান প্রদর্শন এবং সংলাপের মাধ্যমে সমাধান খোঁজা অপরিহার্য। বাণিজ্য যুদ্ধে কেউ জয়ী হয় না এবং সংরক্ষণবাদের কোনো ভবিষ্যৎ নেই।

চীন ও মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সাফল্য একে অপরের জন্য হুমকি নয়, বরং সুযোগ। চীন আশা করে যে মার্কিন পক্ষ চীনের সাথে একই দিকে এগিয়ে আসবে, উভয় রাষ্ট্রের নেতাদের টেলিফোন আলোচনার নির্দেশিত পথে পারস্পরিক সম্মান, শান্তিপূর্ণ সহাবস্থান ও সহযোগিতামূলক সমৃদ্ধির নীতিতে সমতার ভিত্তিতে আলোচনার মাধ্যমে উভয়পক্ষের উদ্বেগের সমাধান করবে এবং চীন-মার্কিন অর্থনৈতিক সম্পর্কের সুস্থ, স্থিতিশীল ও টেকসই উন্নয়নে একত্রে কাজ করবে।

সূত্র : স্বর্ণা-হাশিম-লিলি, চায়না মিডিয়া গ্রুপ।

image_print
Spread the love
0 0 votes
Article Rating
Subscribe
Notify of
guest
0 Comments
Inline Feedbacks
View all comments