কানাডা বাংলাদেশে স্বাস্থ্যসেবা উন্নত করতে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ : কানাডার হাইকমিশনার ড. লিলি নিকোলস
[আন্তর্জাতিক ডেস্ক] ২৫ জুন, ২০২৪ [বুলেটিন নিউজ ২৪.কম] : ৬০ লাখ শিশু এবং প্রায় ২০ লাখ নারীর অপরিহার্য স্বাস্থ্যসেবা উন্নত করতে বাংলাদেশ সরকারের সঙ্গে ইউনিসেফ, ইউএনএফপিএ ও কানাডার অংশীদারিত্ব। পাঁচ বছর ব্যাপী এই প্রকল্পের লক্ষ্য মাতৃ ও শিশু মৃত্যুহার উল্লেখযোগ্যভাবে কমানো এবং অনুন্নত অঞ্চলগুলোতে স্বাস্থ্যসেবা উন্নত করা।
কানাডা ইউনিসেফ ও ইউএনএফপি এর সঙ্গে অংশীদারিত্বের মাধ্যমে নারী, শিশু ও কিশোরীদের জন্য প্রাথমিক স্বাস্থ্যসেবা ব্যবস্থা উন্নত করতে বাংলাদেশকে সহায়তা করছে।
“প্রাথমিক স্বাস্থ্যসেবার জন্য স্বাস্থ্য ব্যবস্থা শক্তিশালীকরণ” শীর্ষক পাঁচ বছর মেয়াদি এই প্রকল্প, বিশেষ করে পাঁচটি অনুন্নত গ্রামীণ এলাকায় (কুড়িগ্রাম, ভোলা, খাগড়াছড়ি, শেরপুর ও সুনামগঞ্জ) স্বাস্থ্যসেবা ব্যবস্থার গুরুতর ঘাটতি পূরণ করবে এবং লিঙ্গ সমতা ও মানসম্পন্ন স্বাস্থ্যসেবা প্রাপ্তির বিষয়গুলোকে তুলে ধরার পাশাপাশি মা ও শিশুর মৃত্যুহার কমাবে।
গত এক দশকে অগ্রগতি সত্ত্বেও বাংলাদেশে মাতৃমৃত্যু হার উল্লেখযোগ্য মাত্রায় উদ্বেগ হিসেবে রয়ে গেছে। এই হার ২০১০ সালের প্রতি ১ লাখ জীবিত জন্ম নেওয়া শিশুর মধ্যে ১৯৪ জনের মৃত্যু থেকে ২০২৩ সালে কমে ১৩৬ জন হয়েছে, অর্থাৎ প্রায় ৩০শতাংশ কমেছে। তবে শিশুমৃত্যুর এই হার ২০৩০ সালের মধ্যে প্রতি ১ লাখ জীবিত জন্ম নেওয়া শিশুর মধ্যে ৭০ জনে নামিয়ে আনার যে টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রা (এসডিজি) রয়েছে, তা থেকে অনেক দূরে। এসব মৃত্যুর অনেকগুলোই হয় রক্তক্ষরণ ও খিঁচুনির মতো প্রতিরোধযোগ্য কারণে।
কানাডীয় অর্থায়নে এই প্রকল্পের মাধ্যমে প্রজনন বয়সী ১৯ লাখের বেশি নারী, যাদের দুই তৃতীয়াংশ কিশোরী এবং নবজাতক ও ৫ বছরের কম বয়সী শিশুসহ প্রায় ৬০ লাখ শিশু যাতে তাদের অপরিহার্য স্বাস্থ্যসেবা পায় তা নিশ্চিত করা হবে।
কানাডার হাইকমিশনার ড. লিলি নিকোলস বলেন, “কানাডা বাংলাদেশে স্বাস্থ্যসেবা উন্নত করতে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ, বিশেষ করে নারী ও মেয়েদের উপকারের জন্য। এই প্রকল্পের লক্ষ্য শুধু স্বাস্থ্যগত দিক দিয়ে খারাপ অবস্থানে থাকা পাঁচ জেলার মানুষের স্বাস্থ্যের উন্নতি ঘটানো নয়, একইসঙ্গে স্বাস্থ্য ব্যবস্থাকে শক্তিশালী করা, বাজেট ও মানবসম্পদ নিয়ে আরও ভালো পরিকল্পনা এবং সেবার মান উন্নত করাও এই প্রকল্পের লক্ষ্য। আমরা আশা করি এই প্রকল্প অন্য জেলাগুলোর জন্য একটি মডেল হিসেবে কাজ করবে।’’
শিশুবিয়ের উচ্চ হার, লিঙ্গ-ভিত্তিক সহিংসতা, অপুষ্টি এবং যৌন ও প্রজনন স্বাস্থ্যসেবার অভাবের কারণে কিশোরীরা বড় ধরনের ঝুঁকিতে রয়ে গেছে। উদ্বেগজনকভাবে এখনো দক্ষ ধাত্রী বা পরিচর্যাকারী ছাড়া বাড়িতেই ৩৫ শতাংশ শিশুর জন্ম হয়, যা মা ও নবজাতক উভয়ের জন্যই ঝুঁকি বাড়ায়।
বাংলাদেশে ইউনিসেফের প্রতিনিধি শেলডন ইয়েট বলেন, “এই প্রকল্প শুধু শিশু ও নারীদের জীবনই বাঁচাবে না, একইসঙ্গে নিরাপদ একটি পরিবেশ তৈরির মাধ্যমে আরও টেকসই স্বাস্থ্যসেবা ব্যবস্থা গড়ে তুলবে, যেখানে শিশু ও নারী, বিশেষ করে কিশোরীরা সুন্দরভাবে বেড়ে উঠতে ও উন্নতি করতে পারবে। মাতৃমৃত্যুর হার কমানো কঠিন বলে প্রমাণিত হয়েছে, আমাদের যৌথ কার্যক্রম নারীর স্বাস্থ্যের জন্য এই গুরুত্বপূর্ণ এসডিজির মূল চালিকা শক্তিগুলোকে সরাসরি চিহ্নিত করবে।”
প্রকল্পের গুরুত্বপূর্ণ বিষয়গুলোর মধ্যে রয়েছে স্বাস্থ্যসেবা ব্যবস্থাকে শক্তিশালী করা এবং জাতীয়, জেলা ও স্থানীয় পর্যায়ে স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রণালয়ের সক্ষমতা বৃদ্ধি করা। এটি যৌন, প্রজনন, মাতৃ, নবজাতক, শিশু ও কিশোরী স্বাস্থ্যের ক্ষেত্রে লিঙ্গ ও অধিকার-ভিত্তিক সেবাগুলোর প্রতিও নজর দেবে। সবশেষে স্বাস্থ্য পরিকল্পনা ও সেবা প্রদানে স্থানীয় সম্প্রদায়কে সম্পৃক্ত করার মাধ্যমে প্রকল্পটি আরও জবাবদিহিমূলক ও দ্রুত সাড়া প্রদানকারী স্বাস্থ্যসেবা ব্যবস্থা তৈরি করবে।
ইউএনএফপিএ বাংলাদেশের প্রতিনিধি ক্রিস্টিন ব্লকহাস বলেন, “কয়েক দশক আগের তুলনায় বর্তমানে বাংলাদেশে একজন সন্তান সম্ভবা নারী হওয়া অনেক বেশি নিরাপদ, কিন্তু আমাদের থেমে যাওয়ার সময় এখনও আসেনি। এই প্রকল্পের মাধ্যমে আমরা সম্মিলিতভাবে সরকারি স্বাস্থ্য ব্যবস্থাকে তার চূড়ান্ত গন্তব্যে পৌঁছাতে সহায়তা করবো। বাংলাদেশে মাতৃমৃত্যুর হার কমানোর যে টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রা রয়েছে তা অর্জন করা সম্ভব, তবে এর জন্য প্রতিটি গর্ভাবস্থাই যাতে কাঙ্খিত এবং প্রতিটি প্রসবই নিরাপদ হয় তা নিশ্চিত করতে আমাদের সমন্বিত প্রচেষ্টার প্রয়োজন।’’
প্রকল্পের একটি তাৎক্ষণিক প্রাপ্তি হবে প্রাথমিক স্বাস্থ্যসেবা এবং যৌন, প্রজনন, মাতৃ, নবজাতক, শিশু ও কিশোরী স্বাস্থ্যের উন্নত মান, আওতা বৃদ্ধি ও লিঙ্গ-সংবেদনশীলতা। এটি নারীর ক্ষমতায়ন এবং নারী, কিশোরী ও শিশুদের অধিকার পূরণে সম্প্রদায়ের অংশগ্রহণের বিষয়গুলো তুলে ধরার মাধ্যমে প্রান্তিক ও অনুন্নত জনগোষ্ঠীর জন্য সমন্বিত স্বাস্থ্যসেবা বা পরিচর্যা নিশ্চিত করবে।
প্রকল্পটি ইউএনএফপি এর পরিবেশবান্ধব উপকরণ সংগ্রহের কৌশল ও ইউনিসেফের টেকসই উন্নয়নের প্রতিশ্রুতির সঙ্গে সঙ্গতি রেখে পরিবেশগত প্রভাব ও জৈব চিকিৎসা-বর্জ্য কমানোর প্রতিও মনোনিবেশ করবে। [সূত্র : ইউনিসেফ বাংলাদেশ]