সাহিত্য আসর

এক মুঠো রোদ্দুর

– ব্যস্ত?

– কিছু বলবে?অফিসের কিছু কাজ বাকি আছে তো…

– আচ্ছা,তাহলে পরে বলি।

– আরে না না।ঠিকই ম্যানেজ করে নিবো।বসো।তো

  আমার মহারানী কি বলবে শুনি তো একটু!

– আজকে আমাকে একটা প্রমিস করতে হবে।করবে

  তো?

– বলবে তো আগে!তারপর সিদ্ধান্ত নিবো। এখন যদি বলো চাঁদের দেশে নিয়ে যেতে সেই প্রমিস তো করতে

  পারবো না,তাই না বলো? হা হা হা।

হেসে উঠলেন রিহান চৌধুরী।

ছলছল চোখে ফারিহা চৌধুরী রিহান চৌধুরীর দিকে তাকিয়ে বললেন, বিষয়টা সিরিয়াস।

– আচ্ছা স্যরি। হ্যাঁ,বলো কি বলবে।

– এই যে তোমার আমার ছোট্ট সংসার!আমাদের সংসার জীবনের প্রায় পনেরো বছর হতে চললো

অথচ তোমাকে বাবা ডাক শোনাতে পারলাম না। আমি ক্লান্ত,আমি ব্যর্থ।আমি সত্যিই আর পারছি না।তুমি

আমাকে ডিভোর্স দিয়ে আরেকটা বিয়ে করে নাও, প্লিজ।প্রমিস করো বিয়েটা তুমি করবে?

কথাটা শোনা মাত্রই রিহান চৌধুরীর হাসিমাখা মুখটা ম্লান হয়ে গেল। কিছু না বলে ল্যাপটপ অফ করে রুমের বাইরে চলে গেলেন।কিছুক্ষণ পর সাদা রঙের একটি গোলাপ হাতে তিনি রুমে প্রবেশ করলেন। মেঝেতে হাঁটু গেড়ে বসে ফুলটা ফারিহা চৌধুরীর হাতে দিয়ে বললেন, “পুনর্জন্ম বলে যদি কিছু থেকে থাকে তাহলে সেই জন্মেও স্ত্রী হিসেবে আমি তোমাকেই চাইবো। জীবনের শেষ নিঃশ্বাস অবধি তোমাকে আগলে রাখবো। নাও, করে দিলাম প্রমিস!”

ফারিহা চৌধুরীর দুচোখ বেয়ে শুধু অশ্রু ঝরে পড়ছে।

তাকে বুকের সাথে জড়িয়ে নিয়ে রিহান চৌধুরী বললেন,”এমন করে কেঁদো না,প্লিজ। আমার কষ্ট হয়। সেই তখন থেকে একটানা অফিসের কাজ করে যাচ্ছি একটু চা করে আনতেও তো পারো!”

চোখের পানি মুছে ফারিহা চৌধুরী বললেন, “আচ্ছা,একটু ওয়েট করো।চা করে আনছি।”

গ্যাসের চুলায় চা বসিয়ে তিনি ভাবতে থাকেন, একটা মানুষ এতটা ভালো কি করে হয়? সংসার জীবনের এত বছর কেটে গেল অথচ রাগ করে উচ্চস্বরে কখনো কথা বলে নি সে।বরং যেকোনো পরিস্থিতিতে স্বান্ত্বনা দিয়ে এসেছে। তার কথা,যা হয় সৃষ্টিকর্তার ইচ্ছেতেই হয়।সৃষ্টিকর্তাকেই বরং খুশি রাখো।আসলে পৃথিবীতে সব পুরুষ এক হয় না। এই যে,আমি পৃথিবীর সবচেয়ে ভাগ্যবতী একজন নারী। ভাগ্য করে এমন একজন স্বামী পেয়েছি।

এসব ভাবতে ভাবতে তার ঠোঁটের কোণে মুচকি হাসি ফুটে ওঠে।

আজ ১২ই এপ্রিল। স্বামী-স্ত্রী দুজনে ডাইনিং টেবিলে বসে একসাথে খাবার খাচ্ছে।রিহান চৌধুরী খেয়াল করলেন তার স্ত্রীর মন খারাপ।

– কি হলো মহারানী?মন খারাপ কেন?

– আজকের দিনটি তুমি এভাবে ভুলতে পারলে!

– আজকে…ওহো,স্যরি স্যরি।আমি খুব স্যরি।আজ

  তো আমার মহারানীর জন্মদিন। কি খাবে বলো?

  আইসক্রিম? নাকি চকলেট?

– যাও,তোমার সাথে কথা নেই।আড়ি আড়ি আড়ি।

– এভাবে রাগ করো না লক্ষ্মীটি। লাভ ইউ সো মাচ।

– কচু। উইশও করলে না আবার গিফটও দিলে না, হুহ।

হঠাৎ কলিং বেলের শব্দ।ফারিহা চৌধুরী দরজা খুলে দেখলেন একজন বৃদ্ধা একটি ছোট্ট মেয়ে শিশুকে কোলে নিয়ে দাঁড়িয়ে আছে। কিছু জিজ্ঞাসা করতে যাবে ঠিক তখনই রিহান চৌধুরী বাচ্চাটিকে নিজের কোলে নিয়ে তার স্ত্রীকে বললেন,”জানো তো,এই ছোট্ট পরীটার একজন মায়ের প্রয়োজন আর তোমার প্রয়োজন এমন একটা ছোট্ট পরীর”

-কি বলছো তুমি?কিছুই বুঝতে পারছি না। একটু ক্লিয়ার করে বলো, প্লিজ।

ওর বয়স যখন দুমাস তখন ওর মা দুনিয়া থেকে বিদায় নিয়েছেন। এই যে বৃদ্ধাকে দেখছো, তিনি এই ছোট্ট পরীটার দাদি। কষ্টের জীবনযাপন তাদের।তাই আমি সিদ্ধান্ত নিয়েছি তাদের সকল দায়িত্ব এখন আমার। তখন তোমার শূন্য কোল পূর্ণ আর তাদের কষ্ট হবে শূন্য। এই ছোট্ট পরীটার মা হবে তুমি?

ছলছল চোখে ছোট্ট বেবিটাকে কোলে নিয়ে পরম আদরে তার কপালে চুমু এঁকে দিলেন।

বললেন,”হুম,একদম।আজ থেকে আমি ওর মা।”

এই যে,মহারানী!আমি কি তোমার বার্থডে ভুলে যেতে পারি?সব মনে ছিলো আমার।এই ছোট্ট পরীটাই ছিলো

তোমার বার্থডে গিফট!শান্ত কন্ঠে বললেন রিহান চৌধুরী।

রাতে ঘুমানোর পূর্বে রিহান চৌধুরীর বই পড়ার অভ্যাস। আজকেও এর ব্যতিক্রম নয়।অন্যদিকে ফারিহা চৌধুরী ছোট্ট পরীটাকে ঘুম পাড়িয়ে তার স্বামীকে একটা চিঠি দিয়ে বলল,সময় করে পড়ো কিন্তু!চিঠিটা হাতে পেয়ে বই পড়া বাদ দিয়ে চিঠিটা পড়তে শুরু করলেন তিনি।

প্রিয় তুমি,

সামনাসামনি সব কথা হয়তো বলা হয়ে ওঠে না।ভালোবাসি প্রিয়।অনেক ভালোবাসি তোমাকে। তুমি আমার জীবনে এসেছিলে এক মুঠো রোদ্দুর হয়ে! এই এক মুঠো রোদ্দুর যেন আমার জীবনের সমস্ত আঁধারকে নিমিষেই নিশ্চিহ্ন করে দিয়েছে। জীবনের শেষ অবধি থাকবে তো আমার এক মুঠো রোদ্দুর হয়ে?

ইতি

তোমার মহারানী

চিঠিটা পড়া শেষে রিহান চৌধুরী মুচকি হাসলেন। আলতো করে বাঁ পাশের বুক পকেটে চিঠিটা গুঁজে রাখলেন। উত্তরটা হয়তো কোনো এক গোধূলি লগ্নে তার প্রিয়তমা স্ত্রীকে জানিয়ে দিবেন।

[লেখক : জেসমিন আক্তার বৃষ্টি

image_print
Spread the love
0 0 votes
Article Rating
Subscribe
Notify of
guest
0 Comments
Inline Feedbacks
View all comments