ঋতুরাজ বসন্তকে নানা আয়োজনে বরণ করলো বাংলাদেশ শিল্পকলা একাডেমি
নিজস্ব প্রতিবেদক : বর্ণাঢ্য শোভাযাত্রা ও ঢাকের তালে নৃত্য ছন্দে বসন্তকে বরণ করলো বাংলাদেশ শিল্পকলা একাডেমি। গৃহায়ন ও গণপূর্ত মন্ত্রী র আ ম উবায়দুল মোকতাদির চৌধুরী বলেন, আজকে যদি শেখ হাসিনা না থাকেন তাহলে বসন্ত উৎসবও থাকবে না। বাংলাদেশের অস্তিত্বে যারা বিশ্বাস করে তাদের নিয়ে এগিয়ে নিয়ে যেতে হবে।
বাংলাদেশ শিল্পকলা একাডেমির মহাপরিচালক লিয়াকত আলী লাকী বলেন, আমাদের বৈশাখ, আমাদের ফাল্গুন, চৈত্র সংক্রান্তি বাঙালির আনন্দ উল্লাসের ভাষা, বাঙালির হাজার বছরের ঐতিহ্যের ধারা। আমরা কোনভাবেই তা হারাতে দেবো না। আমাদের এই প্রজন্মই তা প্রজন্ম থেকে প্রজন্মে ছড়িয়ে দিবে।
দখিনা বাতাস, নাতিশীতোষ্ণ আবহাওয়ায় প্রকৃতির রঙ রস নিয়ে আগমন হলো বসন্তের। আজ পহেলা ফাল্গুন, ঢাকের তালে বসন্ত নৃত্যের রঙিন পরিবেশনা ও শোভাযাত্রার মাধ্যমে ঋতুরাজকে বরণের উৎসব পালন করে বাংলাদেশ শিল্পকলা একাডেমি। শীতের নির্জীব প্রকৃতি ছেড়ে সহসা জেগে ওঠা প্রকৃতির রূপ, রস, বর্ণ, গন্ধ, স্পর্শ আর সৌন্দর্যের সাথে তাল মিলিয়ে বাংলাদেশ শিল্পকলা একাডেমির শিল্পীরা সেজেছিলো বসন্তের সাজে।
ঋতুরাজ বসন্তকে বরণের আয়োজন শুরু হয় রমনা পার্কে, ঢাকের তালে বসন্ত নৃত্যের মাধ্যমে।
রমনায় শতায়ু অঙ্গণের পাশে ২২৫ জন নৃত্যশিল্পীর পরিবেশনার মধ্য দিয়ে শুরু হয় বসন্তবরণের আয়োজন। রমনার প্রাণ প্রকৃতির রঙ আর শিশু শিল্পী ও নৃত্য শিল্পীদের পরিবেশনা যেন মিলে মিশে একাকার।
আয়োজনে প্রধান অতিথি হিসেবে ছিলেন গৃহায়ন ও গণপূর্ত মন্ত্রণালয়ের মাননীয় মন্ত্রী র আ ম উবায়দুল মোকতাদির চৌধুরী, এমপি। রমনার এ আয়োজনে তাকে স্বাগত জানান বাংলাদেশ বাংলাদেশ শিল্পকলা একাডেমির মহাপরিচালক। অনুষ্ঠানে সংক্ষিপ্ত বক্তব্যে তিনি বলেন, `আজকের বসন্ত উৎসব আমরা যেন যুগ যুগান্তর ধরে উদযাপন করতে পারি। আমাদের পরবর্তী বংশধররা যাতে এই বসন্ত উৎসব উদযাপন করতে পারে, উপভোগ করতে পারে সেই দায় আমরা পরবর্তী প্রজন্মরে উপর রেখে যাচ্ছি। জীবনের মূল্যে পাওয়া দেশটিকে ভালোবাসতে হবে। আজকে যদি শেখ হাসিনা না থাকেন তাহলে বসন্ত উৎসবও থাকবে না। বাংলাদেশের অস্তিত্বে যারা বিশ্বাস করে তাদের নিয়ে এগিয়ে নিয়ে যেতে হবে।’
সংস্কৃতি ক্ষেত্রে বাংলাদেশ শিল্পকলা একাডেমি ও মহাপরিচালকের নানামুখী কার্যক্রমের প্রসংশা করেন তিনি।
অনুষ্ঠানে স্বাগত বক্তব্য প্রদান করেন একাডেমির সচিব সালাহউদ্দিন আহাম্মদ।
সভাপতির বক্তব্যে একাডেমির মহাপরিচালক লিয়াকত আলী লাকী বলেন, “আমাদের এই প্রজন্মরাই সংস্কৃতির আলো ঘরে ঘরে পৌছে দিবে। এই ফাল্গুন বাঙালির ঐতিহ্যের অংশ। আমরা বাঙালি সংস্কৃতিকে বিশ্ব দরবারে তুলে ধরছি। আমাদের বৈশাখ, আমাদের ফাল্গুন, চৈত্র সংক্রান্তি বাঙালির আনন্দ উল্লাসের ভাষা, বাঙালির হাজার বছরের ঐতিহ্যের ধারা। আমরা কোনভাবেই তা হারাতে দেবো না। আমাদের এই প্রজন্মই তা প্রজন্ম থেকে প্রজন্মে ছড়িয়ে দিবে।’
বসন্ত নৃত্য পরিবেশনার পর ঢাকের তালে শুরু হয় বর্ণাঢ্য শোভাযাত্রা। রমনা থেকে বাংলাদেশ শিল্পকলা একাডেমি পর্যন্ত প্রায় ৩ শতাধিক শিল্পী এই শোভাযাত্রায় অংশ নেয়। রমনা পার্ক প্রদক্ষিণ করে মৎস্য ভবন হয়ে শোভাযাত্রা বাংলাদেশ শিল্পকলা একাডেমিতে এসে শেষ হয়।
২য় পর্যায়ে আয়োজন ৪.৩০ মিনিটে বসন্ত নৃত্য পরিবেশিত হয় একাডেমি প্রাঙ্গণে।
এরপর পরিবেশিত হয় সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান। সঙ্গীত, নৃত্যের ধারাবাহিক পরিবেশনার মধ্যে দিয়ে শেষ হয় সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান।
বিকেলের সাংস্কৃতিক পরিবেশনা অনুষ্ঠিত হয়। উন্মুক্ত মঞ্চের এ আয়োজনে শুরুতেই পরিবেশিত হয় দলীয় নৃত্য ‘ঢাক নৃত্য’। পরিবেশন করে বাংলাদেশ শিল্পকলা একাডেমি প্রতিশ্রুতিশীল নৃত্যদল। এরপর বাংলাদেশ শিল্পকলা একাডেমি নৃত্যদল পরিবেশন করে দলীয় নৃত্য ‘শুভেচ্ছা ও ভালোবাসা’। এরপর দলীয় সংগীত ‘আনন্দ লোকে’ পরিবেশন করে বাংলাদেশ শিল্পকলা একাডেমি শিশু সংগীত দল। দ্বৈত আবৃত্তি ‘রুমঝুম কে বাজায়’পরিবেশন করে ডালিয়া আহমেদ ও জয়ন্ত চট্টোপাধ্যায়। একক সংগীত ‘যেথা রামধনু উঠে হেসে’ পরিবেশন করে মেহরিন মাহমুদ।
এরপর দ্বৈত সংগীত পরিবেশন করে নওশিন তাবাসসুম স্মরণ এবং মোমিন বিশ্বাস। ধারাবাহিক পরিবেশনায় থাকবে দলীয় নৃত্য ‘সুন্দরের অত্যন্ত প্রহরী’ পরিবেশন করে বাংলাদেশ শিল্পকলা একাডেমি শিশু নৃত্য দল। এরপর দ্বৈত নৃত্য ‘আজি দক্ষিণ পবনে’ পরিবেশন করে আবু নাইম এবং আনন্দিতা খান। দ্বৈত সংগীত পরিবেশন করে সারমিন সাথী ইসলাম এবং বুলবুল ইসলাম। এরপর আবার দলীয় সংগীত ‘মন শুধু মন ছুয়েছে’ পরিবেশন করবে ঢাকা সাংস্কৃতিক দল। দ্বৈত আবৃত্তি করবেন তামান্না তিথি ও মাহিদূল ইসলাম। দলীয় নৃত্য ‘বসন্ত মুখর আজি’/ ‘নীল দিগন্তে’ পরিবেশন করে রেওয়াজ পারফর্মার্স স্কুল। নৃত্য পরিচালনা করেছেন মুনমুন আহমেদ। দ্বৈত নৃত্য ‘বিশ্ববীণা রবে/ আজু সখি’ পরিবেশন করে সামিনা হোসেন এবং মাহতাব মেহেদী। এরপর একক সংগীত ‘চেনা চেনা লাগে’ পরিবেশন করে মো: ইউসুফ আহমেদ খান। দ্বৈত সংগীত পরিবেশন করে কিরণ চন্দ্র রায় এবং চন্দনা মজুমদার। দ্বৈত নৃত্য ‘ফাগুন লেগেছে শাখে শাখে’পরিবেশন করে জুয়েইরিয়াহ মৌলি এবং মারিয়া ফারিহ উপমা। এরপর দলীয় ক্ষুদ্র-নৃ-গোষ্ঠী নৃত্য পরিবেশন করে তপস্যা নৃত্যদল। পরিচালনা করেছেন নৃত্য পরিচালক- ফিফা চাকমা। এরপর দ্বৈত আবৃত্তি করে শিমুল মোস্তফা এবং রুপা চক্রবর্তী। দ্বৈত নৃত্য ‘একটুকু ছোঁয়া লাগে’ পরিবেশন করে অনিক বোস এবং কস্তুরী মুখার্জী। এরপর দলীয় নৃত্য ‘অবাক চোখে’ পরিবেশন করে কথক নৃত্য সম্প্রদায়। নৃত্য পরিচালনা করেছেন নৃত্য পরিচালক সাজু আহমেদ। আবার পরিবেশিত হবে দ্বৈত নৃত্য ‘বাগিচায় বুলবুলি’ পরিবেশন করে আরোহী ইসলাম (আরিফুল ইসলাম অর্ণব) এবং হেনা হোসেন। সবশেষ বাংলাদেশ শিল্পকলা একাডেমির নৃত্যদলের অংশগ্রহণে পরিবেশিত হয় ফ্যাশন ডান্স প্যারেড। অনুষ্ঠান সঞ্চালনা করেন সংগীতা চৌধুরী এবং আব্দুল্লাহ বিপ্লব।