উপন্যাস “অদৃশ্য আহুতি”
(১ম পর্ব)
পৃথিবীর প্রতিটি কোণেই রহস্য লুকিয়ে আছে। কেউ সেই রহস্যের জট খুলতে পারে, কেউ শুধু দিগ্ভ্রান্ত হয়ে ঘুরে বেড়ায়। আমিও সেই পথিকদের একজন। নিজের জীবনের রহস্যের জট খোলার নেশায় ছুটতে ছুটতে পরিচয় হয় এক রহস্যময় পরিবারের সঙ্গে।
ঘটনাটির সাথে আমার পরিচয় ২০২৩ সালের জুন মাসে। আমি তখন নার্সিং ভর্তি পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হয়ে সরকারি নার্সিং কলেজে পড়ার সুযোগ পেয়েছি। ক্লাস শুরু হবে জুলাইতে। এর মধ্যেই বাবার এক ডাক্তার বন্ধু, আমাকে তার চেম্বারে কিছুদিন কাজ শেখার জন্য ডাকলেন। আমি রাজি হয়ে গেলাম। ব্লাড প্রেসার চেক করা, পালস দেখা, ইনজেকশন দেওয়া—ধীরে ধীরে এসব আয়ত্তে আসতে লাগল।
সব ঠিকঠাকই চলছিল, কিন্তু এক সন্ধ্যায় অদ্ভুত কিছু ঘটল।
একজন মধ্যবয়সী লোক চেম্বারে এলেন, হাতে ঘুমের ইনজেকশনের প্যাকেট। আমি প্রথম দেখাতেই বুঝতে পারলাম, ওটা খুব শক্তিশালী ওষুধ। লোকটিকে অপেক্ষা করতে বলে ইনজেকশন প্রস্তুত করার সময় জিজ্ঞেস করলাম, “আপনার বয়স তো বেশি হয়নি, ঘুমের ওষুধ খেলেও তো চলবে।”
লোকটি শান্ত গলায় বললেন, “এটা আমার জন্য নয়, আমার মেয়ের জন্য।”
আমি বিস্মিত হয়ে জানতে চাইলাম, “বয়স কত?”
—“২৩ বছর।”
আমি অবাক হয়ে বললাম, “তাহলে তাকে এখানে নিয়ে আসুন। খুব খারাপ হলে চেম্বারে শুইয়ে দিন।”
লোকটি তখন বললেন, “সে বাড়িতে আছে, নিয়ে আসার মতো অবস্থায় নেই।”
ভেতরে গিয়ে আংকেলকে ডেকে আনলাম। তিনি জানতে চাইলেন, “এখন কেমন আছে? কথা বলতে পারে?”
লোকটি কান্নায় ভেঙে পড়লেন। আংকেল আশ্বস্ত করে বললেন, “রোগী দেখা শেষ হলে যাবো।”
রাত ৮টার দিকে আমি আর আংকেল রওনা দিলাম সেই বাড়ির উদ্দেশ্যে।
বাড়ির দরজায় পা রাখতেই শোনা গেল অদ্ভুত চিৎকার, সঙ্গে পবিত্র কোরআন তেলাওয়াতের আওয়াজ। ভেতরে ঢুকে দেখলাম, ২৩-২৪ বছরের এক মেয়ে জীর্ন শীর্ন শরীর দেখেই বোঝা যাচ্ছে অনেকদিন ঠিক মতো খাইনি। শরীরের চামড়া এমন ভাবে হাড়ের সঙ্গে লেগে গেছে যেনো চামড়া আর হাড়ের মাঝে মাংসের কোনো আস্তরন নেই। মাথার চুলে যেন জট পেকে গেছে, রক্তশুন্যতায় চেহারা অ্যানিমিয়া রোগির মতো ফ্যাকাসে হয়ে গেছে। চোখ দুটো কোটরে ঢুকে গেছে।
উফ! বিভৎস রুপ!
এই শরীর আর এই পরিনতিতে একটা মানুষের শরীরে এত শক্তি যে তাকে চারজন মানুষ মিলে সামলাতে হিমসিম খেয়ে যাচ্ছে৷
প্রায় ৪০ মিনিট পর সে নিস্তেজ হয়ে বিছানায় পড়ে গেল। আংকেল দ্রুত ঘুমের ইনজেকশন আর স্যালাইন দিলেন। আমি তখনো স্তব্ধ হয়ে তাকিয়ে আছি।
ফিরে আসার পর রাতে ঘুমাতে পারলাম না। এতকিছু দেখে বুঝতে পারছিলাম, এটা নিছক মানসিক সমস্যা নয়, কিছু ভয়ংকর আছে এর পেছনে।
পরদিন আংকেলকে জিজ্ঞেস করলাম, “মিলির আপুর আসলে কি হয়েছে? এটা কি নিছকই কোনো মানসিক সমস্যা?”
চলবে…..
(লেখক সুমির অদৃশ্য আহুতি উপন্যাস ২য় পর্ব আগামি ২৭ তারিখে বুলেটিন নিউজ ২৪.কমে প্রকাশ করা হবে)
লেখক পরিচিতি-
লেখক সুমি কায়সার রাজশাহী জেলাউ বাগমারা উপজেলা হরিপুর গ্রামে ২১শে সেপ্টেম্বর ২০০৩ এক মুসলিম পরিবারে জন্মগ্রহণ করেন। পিতা: মো: শাফিকুল ইসলাম মাতা: মোছা: নাসিমা। তিনি একজন নিয়মিত ছাত্রী। তার উপন্যাসের প্রতি তীব্র আবেগ থেকেই লেখার প্রতি আগ্রহ। তিনি বুলেটিন নিউজ ও ভোরের পাতায় নিয়মিত লেখালেখি করেন।