“ঈদ মোবারক ঈদের দিন সামনে আসছে খুশির দিন”
এই স্লোগানে চারদিকে ছোটদের আনন্দময় কলরব, মনে হচ্ছে ঈদের আগেই আরেকটি ঈদ এসে গেছে। আতশবাজি, ফানুস উড়ানো, আর নানান রঙিন আলোয় সেজেছে পুরো গ্রাম। আত্মীয়স্বজনদের জন্য ইফতার বিতরণ যেন উৎসবের আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ অংশ।
সকাল প্রায় নয়টা বা দশটা হবে। আমি তখন মাঠে খেলতে যাওয়ার প্রস্তুতি নিচ্ছি। এমন সময় মা এসে বললেন, “এই নে ব্যাগ আর কিছু টাকা, বিকেলে তোর ফুপুর বাসায় ইফতার নিয়ে যেতে হবে। বাজার থেকে কিছু ইফতার কিনে আন।”
মায়ের কথা শুনে মনে যেন আনন্দের জোয়ার বইতে লাগল। খেলার মাঠে যাওয়ার কথা কখন যে ভুলেই গেছি- আর খেয়ালই করলাম না । তাড়াতাড়ি ব্যাগ হাতে নিয়ে বাজারের দিকে ছুটলাম। বাজার থেকে ফিরেই সোজা চলে গেলাম ফুপুর বাসায়।
ফুপুর বাসার পাশেই বয়ে যায় একটি ছোট নদী। বিকেল গড়িয়ে সন্ধ্যা নামে, আকাশজুড়ে তখন সূর্যের শেষ রশ্মি লাল আভা ছড়িয়ে দিচ্ছে। ফুফাতো ভাই মাসুমের সাথে নদীর ধারে বসে গল্প করছিলাম। বাতাসে ঈদের খুশির সুবাস, নদীর কলতান মনের মধ্যে এক প্রশান্তির অনুভূতি এনে দিচ্ছিল। চারপাশে তখন গ্রামের ছেলেরা হইচই করছে, কেউ গরম গরম জিলাপি খাচ্ছে, কেউবা মিষ্টির হাঁড়ি হাতে নিয়ে ঘুরে বেড়াচ্ছে। ঈদের আনন্দ যেন সবার চোখেমুখে ফুটে উঠেছে।
হঠাৎ কেমন যেন এক অদ্ভুত আওয়াজ কানে এলো! থমকে গেলাম দুজনেই। প্রথমে মনে হলো, হয়তো নদীর পাড়ের গাছের ডাল ভেঙে পড়েছে। কিন্তু না, আওয়াজটা আবার এলো, এবার একটু জোরে! আমরা কৌতূহলী হয়ে আওয়াজের উৎস খুঁজতে এগিয়ে গেলাম।
নদীর ধারে কিছু দূর গিয়ে দেখি, পানির মধ্যে কিছু একটা নড়ছে! আমরা ধীরে ধীরে কাছে গিয়ে দেখি, একটা ছোট্ট বাচ্চা পানিতে ভেসে আসছে! হাত-পা ছুঁড়ছে বাঁচার জন্য! মুহূর্তের মধ্যে চারপাশের উৎসবমুখর পরিবেশ বদলে গেল আতঙ্কে।
দেরি না করে মাসুম পানিতে ঝাঁপ দিল, আমি আশেপাশের লোকজনকে ডাকতে দৌড় দিলাম। মুহূর্তের মধ্যেই সবাই ছুটে এলো। অনেক চেষ্টার পর বাচ্চাটাকে নিরাপদে তোলা গেল। ভিজে কাপড়ে কাঁপতে থাকা শিশুটির চোখে তখনও ভয়। ওর মাকে ডেকে আনতে চাইলে চারদিকে খোঁজ করেও কাউকে পাওয়া গেল না! কারও হারিয়ে যাওয়া সন্তান নাকি ভাগ্যের পরিহাসে এভাবেই নদীর জলে ভেসে এসেছে, বোঝা কঠিন হয়ে পড়ল।
সবাই বিস্ময়ের মধ্যে পড়ে গেলেও আমি আর আবু নাঈম একে সহজভাবে নিতে পারছিলাম না। কী করা উচিত? বাচ্চাটিকে কোথায় রাখা হবে? এই প্রশ্নের উত্তর খুঁজতে গিয়ে বুঝতে পারলাম, আমাদেরই কিছু করতে হবে।
কিন্তু কোথায় রাখব? ফুফুর বাসায় রাখা যাবে না, বাড়িতে নিলে ধরা পড়ে যাব। তারা যদি ওকে রাখার অনুমতি না দেয়..!! ভাবতে ভাবতে মাথায় একটা উপায় এলো—বনের ধারে পুরোনো পরিত্যক্ত একটা কুঁড়েঘর আছে, যেটা অনেকদিন ধরে ফাঁকা পড়ে আছে। ছোটবেলায় আমরা সেখানে লুকোচুরি খেলতাম। ওখানে একেবারেই কেউ যায় না। আপাতত সেখানেই ওকে রাখার সিদ্ধান্ত নিলাম।
রাত তখন ঘনিয়ে আসছে। মাসুম আর আমি সন্তর্পণে বাচ্চাটিকে কোলে তুলে নিয়ে সেই কুঁড়েঘরের দিকে হাঁটতে লাগলাম। পথে বাতাসে ঈদের খুশির আমেজ থাকলেও আমাদের মনে একটা অজানা শঙ্কা কাজ করছিল—এভাবে কতদিন লুকিয়ে রাখা যাবে? এই শিশুর আসল পরিচয়ই বা কী?
লেখক পরিচিতি-
মোঃ কামরুজ্জামান কাজল বাংলাদেশের একজন তরুণ কবি, যিনি কবিতার মাধ্যমে জীবনের বাস্তবতা, মানবিক মূল্যবোধ, এবং সমাজের নানা দিক তুলে ধরেন। তিনি ২০০৮ সালের ১৭ অক্টোবর রংপুর বিভাগের নীলফামারী জেলার কিশোরগঞ্জ উপজেলার পুঁটিমারী গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন। তাঁর পিতা ছিলেন মরহুম মোঃ মনছের আলী এবং মাতা মোছাঃ কোহিনুর বেগম।
শিক্ষাজীবনে তিনি ২০২৪ সালে পানিয়াল পুকুর মডেল স্কুল এন্ড কলেজ থেকে দিনাজপুর শিক্ষা বোর্ডের অধীনে এসএসসি পাস করেন এবং বর্তমানে ধনতলা রেয়াজ উদ্দীন স্কুল এন্ড কলেজে একাদশ শ্রেণিতে অধ্যয়নরত।
তাঁর কবিতায় সংগ্রাম, সাফল্য, মানব অস্তিত্বের অনুসন্ধান, সমাজের বৈষম্য এবং পরিবেশের প্রতি দায়বদ্ধতার প্রতিফলন দেখা যায়। বাস্তবতার কঠোরতার সঙ্গে আশার আলো এবং প্রেরণার মিশ্রণে তাঁর কবিতা পাঠকের হৃদয়ে গভীর রেখাপাত করে।
তাঁর উল্লেখযোগ্য কবিতাগুলোর মধ্যে রয়েছে— “বৈপরীত্যের মূল্য”, “মানব পরিচয়”, “ভাবনার সীমা”, “মানব বাঁচে কীসে?”, “একটি শব্দের তরে”, “পরিবেশ দূষণ” এবং “জীবন জয়ের গান”।
তাঁর সাহিত্যকর্ম পাঠকদের চিন্তার নতুন দিগন্ত উন্মোচন করতে সহায়তা করে এবং ভবিষ্যতে তিনি আরও সাহিত্যকর্মের মাধ্যমে পাঠক সমাজকে সমৃদ্ধ করার স্বপ্ন দেখেন।
যোগাযোগ:
লেখকের সঙ্গে সরাসরি যোগাযোগ করতে ইমেইল পাঠাতে পারেন smkkajolislam@gmail.com অথবা ফোনে যোগাযোগ করতে পারেন 01605340951 নম্বরে।