এক্সক্লুসিভকভারেজ নিউজমফস্বল সংবাদ

নতুন বাংলাদেশ তরুণদের বাংলাদেশ : প্রধান উপদেষ্টা  ড. মুহাম্মদ ইউনূস

[রংপুর] ১০ আগস্ট, ২০২৪ [বুলেটিন নিউজ ২৪.কম] : প্রধান উপদেষ্টা  ড. মুহাম্মদ ইউনূস বলেন, নতুন বাংলাদেশ তরুণদের বাংলাদেশ। তরুণদের এখন কেউ টেনে রাখতে পারবে না। পথ পরিষ্কার করতে হবে। আবু সাঈদ প্রসঙ্গে তিনি বলেন, আমরা মহাকাব্য পড়ে থাকি। আবু সাঈদকে নিয়ে মহাকাব্য লেখা হবে। আবু সাঈদ মহাকাব্যের নায়ক। ভবিষ্যতে তাকে নিয়ে কবিতা, গল্প ও সাহিত্য লেখা হবে। তার গুলি খাওয়ার যে ছবি মানুষ দেখল। এর পরে মানুষকে আর থামানো যায়নি। আবু সাঈদ বিশ্বকে চমকে দিয়েছে।

আজ ১০ আগস্ট (শনিবার) বেলা সোয়া ১১টার দিকে রংপুরের পীরগঞ্জ উপজেলার বাবনপাড়া গ্রামে আবু সাঈদের কবর জিয়ারত ও তার পরিবারের সদস্যদের সঙ্গে কথা বলা শেষে সাংবাদিকদের তিনি এসব কথা বলেন।

প্রধান উপদেষ্টা  ড. মুহাম্মদ ইউনূস বলেন, এটা  আবু সাঈদের বাংলাদেশ। এই আবু সাঈদের বাংলাদেশে কোনো ভেদাভেদ নেই। তাই যে যেখানে আছেন আবু সাঈদের মা-বাবা, ভাইবোনদের বা যারা যেখানে আছেন তাদের রক্ষা করুন। কোনো গোলযোগ করতে দেবেন না। আবু সাঈদের মতো আর কাউকে যাতে মৃত্যুবরণ করতে না হয়।

প্রধান উপদেষ্টা  ড. মুহাম্মদ ইউনূস বলেন, আবু সাঈদ যেভাবে অন্যায়ের বিরুদ্ধে দাঁড়িয়েছেন, আমাদেরও সেভাবে দাঁড়াতে হবে। আবু সাঈদ এখন ঘরে ঘরে। জাতি-ধর্ম নির্বিশেষে সবারই সন্তান। এখানে হিন্দু-মুসলমান, খ্রিস্টান-বৌদ্ধ পরিবার সবার ঘরের সন্তান এই আবু সাঈদ। কাজেই আপনারা খেয়াল রাখবেন, কোথাও যেন কোনো গোলোযোগ না হয়। কেউ যেন ধর্ম নিয়ে কথা-বার্তা না বলে। কারণ, আমরা এই মাটিরই সন্তান, সবাই আবু সাঈদ। বাংলাদেশে যত পরিবার আছে সব পরিবারের সন্তান। শিক্ষার্থীরা স্কুলে পড়বে আবু সাঈদের কথা। নিজে নিজে বুঝে যাবে আমিও ন্যায়ের জন্য লড়ব, আমিও বুক পেতে দেব।

প্রধান উপদেষ্টা  ড. মুহাম্মদ ইউনূস বলেন, জাতি-ধর্ম নির্বিশেষে এই মাটির সন্তানদের রক্ষা করা আমাদের কর্তব্য। আমরা যেন এটি নিশ্চিত করি। আবু সাঈদ যেমন দাঁড়িয়েছে, আমাদেরও সেভাবে দাঁড়াতে হবে। যারা পার্থক্য করে, এ রকম সন্তান ও রকম সন্তান- এ রকম না। আমরা সবাই বাংলাদেশি, আমরা বাংলাদেশেরই সন্তান। আবু সাঈদের মা সবার মা এবং সবার মা আবু সাঈদের মা। কাজেই তাকে রক্ষা করতে হবে, তাদের বোনদের রক্ষা করতে হবে, তাদের ভাইদের রক্ষা করতে হবে। সবাই মিলে এটি করতে হবে।

কবর জিয়ারতের পর আবু সাঈদের বাড়িতে যান প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস। প্রধান উপদেষ্টাকে দেখে কান্নায় ভেঙে পড়েন আবু সাঈদের বাবা মকবুল হোসেন। আবু সাঈদের বাড়ির আঙিনায় বেশ কিছু সময় বসেন এবং তার বাবা-মা, পরিবারের সদস্যদের সঙ্গে কথা বলেন ও তাদের সান্ত্বনা দেন। আবু সাঈদের বাবা-মাকে সঙ্গে নিয়ে তাদের বাড়ির আঙিনায় দাঁড়িয়ে জাতীয় পতাকা তুলে ধরেন প্রধান উপদেষ্টা। পরে জাতীয় পতাকাটি সাঈদের পরিবারের হাতে দিয়ে বলেন, এই পতাকার জন্য আবু সাঈদ প্রাণ দিয়েছেন। এই পতাকা ঠিকমতো রাখবেন। এ সময় তিনি পরিবারকে আবু সাঈদের হত্যার বিচারের আশ্বাস দেন। এ সময় পীরগঞ্জের রাস্তার দুই পাশে হাজার হাজার মানুষ উপস্থিত হয়ে প্রধান উপদেষ্টাকে স্বাগত জানান।

এর পূর্বে সকাল ১০টা ৪২ মিনিটে সেনাবাহিনীর হেলিকপ্টারে প্রধান উপদেষ্টা  ড. মুহাম্মদ ইউনূস রংপুরের পীরগঞ্জের মেরিন একাডেমিতে পৌঁছান। এর পর তিনি শহীদ আবু সাঈদের বাড়ি যান। সেখানে প্রথমে তিনি আবু সাঈদের কবর জিয়ারত করেন। পরে স্বজনদের সঙ্গে মিলিত হন।

এ সময় বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের নেতা ও অন্তর্বর্তী সরকারের উপদেষ্টা নাহিদ ইসলাম ও আসিফ মাহমুদ, বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের অন্যতম নেতা আখতার হোসেন, সারজিস আলমসহ  বেশ কয়েকজন উপস্থিত ছিলেন। এ ছাড়া রংপুরের বিভাগীয় কমিশনার জাকির হোসেন, জেলা প্রশাসক মোবাশ্বের হাসানসহ জেলা ও উপজেলা প্রশাসনের কর্মকর্তাসহ সেনাবাহিনীর  ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা  উপস্থিত ছিলেন।

এরপর তিনি রংপুরের বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ে যান। সেখানে বেরোবির সিন্ডিকেট হলে বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থীদের সঙ্গে মতবিনিময় করেন। এ সময় প্রধান উপদেষ্টা  ড. মুহাম্মদ ইউনূস তার গ্রামীণ ব্যাংক প্রতিষ্ঠার সময়ের গল্প শোনান। তিনি বলেন, সে সময় নারীদের হাতে টাকা দিয়ে দেওয়া চ্যালেঞ্জের ছিল। কিন্তু সেই চ্যালেঞ্জটা গ্রহণ করেছি। ধীরে ধীরে নারীদের উন্নয়ন হয়েছে। বিশ্বব্যাপী সমাদৃত হয়েছে সামাজিক ব্যবসার মডেল।

সংখ্যালঘুদের ওপর আক্রমণের কথা উল্লেখ করে তিনি শিক্ষার্থীদের বলেন, তারা কি দেশের মানুষ না। তারা কয়টা পরিবার, পুরো দেশ রক্ষা করতে পারছ, আর এ কয়েকটা পরিবারকে তোমরা রক্ষা করতে পারবা না, এরা তোমাদের সঙ্গেই আন্দোলনে ছিল।

তিনি শিক্ষার্থীদের উদ্দেশে আরও বলেন, তোমরা হিন্দু, বৌদ্ধ, খ্রিস্টানদের নিরাপদে রাখবা। বলবা, সবাই আমরা ভাই। বাংলাদেশ এক পরিবার। পৃথিবীতে বহু দেশ আছে, এত সুন্দর পরিবার নেই। এত সুন্দর একটা দেশ, কোথায় চলে যেতে পারতাম আমরা। কিছু ব্যক্তি অন্যের মদদে সহিংসতা করছে।

প্রধান উপদেষ্টা  ড. মুহাম্মদ ইউনূস বলেন, বেগম রোকেয়া নারীদের মুক্ত করেছেন। এখন রংপুর পুরো বাংলাদেশ মুক্ত করবে। পরে উপস্থিত কয়েক শিক্ষার্থী তিস্তা মহাপরিকল্পনা বাস্তবায়ন, রাজনীতিমুক্ত ক্যাম্পাস, রংপুর মেডিকেল কলেজকে বিশ্ববিদ্যালয় স্থাপনসহ বেশ কিছু দাবি তুলে ধরেন। তাদের কাছ থেকে প্রস্তাবনাগুলো তিনি লিখিত আকারে দিতে বলেন।

এর পর ড. মুহাম্মদ ইউনূস রংপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে কোটা আন্দোলনে চিকিৎসাধীন আহতদের দেখতে যান। এ সময় সাংবাদিকরা হাসপাতালকে দুর্নীতিমুক্ত করতে সেনাবাহিনীর পরিচালক চান। পরে তিনি সার্কিট হাউসে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সঙ্গে মতবিনিময় করেন। এ সময় সেনাবাহিনী, বিজিবি, পুলিশ ও আনসার বাহিনীর কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।

উল্লেখ্য যে, গত ১৬ জুলাই দুপুর আড়াইটার দিকে বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের সামনের সড়কে কোটা সংস্কারের দাবিতে আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদের ওপর ছাত্রলীগ হামলা করে। একপর্যায়ে পুলিশের গুলিতে নিহত হন বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের ইংরেজি বিভাগের ১২তম ব্যাচের শিক্ষার্থী ও বৈষম্যবিরোধী কোটা আন্দোলনের অন্যতম সমন্বয়ক আবু সাঈদ।

image_print
Spread the love
0 0 votes
Article Rating
Subscribe
Notify of
guest
0 Comments
Inline Feedbacks
View all comments