আন্তর্জাতিক নারী দিবস উপলক্ষ্যে চাইল্ডস রাইটস অ্যাডভোকেসি কোয়ালিশন ইন বাংলাদেশ-এর আহবান
মো. মনজুরুল ইসলাম (মনজু) : আন্তর্জাতিক নারী দিবস উপলক্ষ্যে চাইল্ডস রাইটস অ্যাডভোকেসি কোয়ালিশন ইন বাংলাদেশ-এর আহবান সহিংসতামুক্ত নিরাপদ পরিবেশে বেড়ে ওঠা প্রতিটি শিশুর অধিকার কিন্তু বাংলাদেশে কন্যা শিশুরা প্রায়ই সহিংসতা ও বৈষম্যের শিকার হন, যা তাদের স্বাভাবিক বিকাশকে ব্যাহত করার পাশাপাশি তাদের সম্ভাবনাময় ভবিষ্যৎ বিনির্মাণের পথকে বাঁধাগ্রস্ত করছে। আজকের কন্যা শিশুই আগামীর নারী, দেশের সুযোগ্য নাগরিক। তাই, আন্তর্জাতিক নারী দিবসের প্রাক্কালে চাইল্ড রাইটস অ্যাডভোকেসি কোয়ালিশন ইন বাংলাদেশ কন্যা শিশুদের সামগ্রিক বিকাশে, সম-অধিকার ও সম-সুযোগ নিশ্চিতে যথাযথ বিনিয়োগ এবং প্রচলিত আইন ও নীতিমালার যথাযথ বাস্তবায়ন ও যুগোপযোগী সুরক্ষাব্যবস্থা জোরদার করার আহবান জানাচ্ছে।
মানবাধিকার সংগঠন, আইন ও সালিশ কেন্দ্র (আসক)-এর পরিসংখ্যান অনুযায়ী ২০২৪ সালের জানুয়ারি মাসেই ১৮ জন কন্যা শিশু ধর্ষণের শিকার হয়েছেন, ধর্ষণের চেষ্টার শিকার হয়েছেন ৭ জন কন্যা শিশু। গণমাধ্যমে প্রকাশিত পরিসংখ্যানের বাইরেও এ রকম ঘটনা অপ্রকাশিত থেকে যায়। বিশেষত, অধিকাংশ ক্ষেত্রে কন্যাশিশুদের মানসিক নিগ্রহের শিকার হওয়ার বিষয়টি উপেক্ষিত থেকে যায়। উপরন্তু, পারিবারিক বা সামাজিক পর্যায়ে কন্যাশিশুরা যে লিঙ্গভিত্তিক বৈষম্যের শিকার হন তা পর্যবেক্ষণের কোন ব্যবস্থা নেই। বাংলাদেশে শিশুর সংখ্যা প্রায় ৬ কোটি । এরমধ্যে প্রায় অর্ধেক কন্যা শিশু। বাংলাদেশের সংবিধান,আইন, নীতিমালা সহ সবক্ষেত্রে ছেলে ও মেয়ে শিশুকে সমান গুরুত্ব দেওয়া হয়েছে। ২০০০ সালে নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইন প্রণয়ন করা হয় এবং এর সংশোধনী ২০০৩-এ সর্বমোট ৩৪টি ধারায় নারী ও শিশুর ওপর সংঘটিত ১১ ধরনের অপরাধের বিচারের বিষয় উল্লেখ রয়েছে। পরে সে আইনকে ২০১৩ ও ২০২২ সালে সংশোধন করে আরো কঠোর করা হয়। তবুও এর যথাযথ প্রয়োগ বা বাস্তবায়ন না হওয়ায় ভুক্তভোগীরা আইনি অধিকার পাওয়া থেকে বঞ্চিত হচ্ছে। বিশ্ব জনসংখ্যা পরিস্থিতি–২০২৩ প্রতিবেদনের তথ্য মতে, এশিয়ার মধ্যে বাংলাদেশে বাল্যবিবাহের হার সবচেয়ে বেশি, বাংলাদেশে ১৮ বছর বয়সের আগেই ৫১ শতাংশ মেয়ের বিয়ে হচ্ছে। বাল্যবিবাহের সার্বিক প্রভাব পড়ছে মা ও শিশুস্বাস্থ্যে। যার ফলে মা ও নবজাতকের মৃত্যুঝুঁকিও বাড়ে। মহামারী, বৈশ্বিক মন্দাসহ যেকোনো দুর্যোগে, কন্যাশিশুদের শিক্ষা ব্যবস্থা থেকে ঝরে পরার প্রবনতাও বেশী লক্ষ্য করা যাচ্ছে।
ভবিষ্যতের সমৃদ্ধ বাংলাদেশ গড়ে তুলতে কন্যা শিশুদের যথোপযুক্ত শিক্ষা, স্বাস্থ্যসেবা ও নিরাপত্তা নিশ্চিত করার জন্য প্রয়োজনীয় আর্থ ও মানব সম্পদ বিনিয়োগের কোন বিকল্প নেই। তাছাড়া, টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রা অর্জনের জন্যেও কন্যা শিশুদের প্রতিটি ক্ষেত্রে সমান সুযোগ নিশ্চিত করা একটি পূর্বশর্ত। আন্তর্জাতিক নারী দিবসের প্রাক্কালে চাইল্ডস রাইটস অ্যাডভোকেসি কোয়ালিশন ইন বাংলাদেশ-এর দাবি:
কন্যা শিশুদের সুষ্ঠু বিকাশের গুরুত্ব অনুধাবন করে শিক্ষা প্রতিষ্ঠানসহ সকল ক্ষেত্রে তাদের সমান অধিকার ও সুরক্ষা নিশ্চিত করার লক্ষ্যে যথাযথ বিনিয়োগ, আইন প্রণয়ন, ও অবকাঠামোগত প্রয়োজনীয় সংস্কারের বিষয়ে যথাযথ পদক্ষেপ গ্রহণে রাষ্ট্র সক্রিয় ও দায়িত্বশীল ভূমিকা পালন করবে।
এ বিষয়ে সংশ্লিষ্টদের সচেতন ও সংবেদনশীল করে তুলতে সচেতনতা ও দক্ষতা বৃদ্ধিকরণ কর্মসূচী গ্রহণ করার এবং আইনের যথাযথ প্রয়োগ নিশ্চিত করার উদ্দেশ্যে প্রয়োজনীয় পর্যবেক্ষণ ব্যবস্থা জোরদার করবে।
সর্বোপরি, কন্যাশিশুসহ সব শিশুদের অধিকার রক্ষা ও উন্নয়ন সংক্রান্ত উদ্যোগসমূহ সমন্বয় করার জন্য দ্রততম সময়ে শিশুদের জন্য একটি পৃথক অধিদফতর প্রতিষ্ঠা করবে। এমনটাই আহ্বান চাইল্ডস রাইটস অ্যাডভোকেসি কোয়ালিশন ইন বাংলাদেশ-এর।