বুলেটিন নিউজস্থানীয় সংবাদ

অসাম্প্রদায়িকতা, ধর্মনিরপেক্ষতা, সামাজিক সম্প্রীতি ও সৌহার্দ্য বজায় রাখার আহ্বান বিএনপিএস’র

মো. মনজুরুল ইসলাম (মনজু) : তরুণ সমাজকে অসাম্প্রদায়িকতা, ধর্মনিরপেক্ষতা, সামাজিক সম্প্রীতি ও সৌহার্দ্য বজায় রাখার আহ্বান করেন বাংলাদেশ নারী প্রগতি সংঘ (বিএনপিএস)। আজ ২৫ মে বাংলাদেশ নারী প্রগতি সংঘ (বিএনপিএস)-এর উদ্যোগে জাতীয় জাদুঘরের কবি সুফিয়া কামাল মিলনায়তনে ‘জেন্ডার সমতা ও সমনাগরিকত্ব প্রতিষ্ঠায় গণতান্ত্রিক ও ইহজাগতিক মূল্যবোধ’ শীর্ষক একটি সেমিনার অনুষ্ঠিত হয়। সেমিনারে সভাপতিত্ব করেন বিএনপিএস-এর নির্বাহী পরিচালক রোকেয়া কবীর। ধারণাপত্র উপস্থাপন করেন বিএনপিএস-এর সমন্বয়কারী নাসরীন বেগম। সেমিনার পরিচালনা করেন বিএনপিএস-এর পরিচালক শাহনাজ সুমী।
প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন বিশিষ্ট শিক্ষাবিদ ও সাহিত্যিক অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ জাফর ইকবাল। আলোচক হিসেবে উপস্থিত ছিলেন প্রজন্ম ৭১-এর প্রতিষ্ঠাতা সাংস্কৃতিক সম্পাদক ও ঘাতক দালাল নির্মূল কমিটির যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ডা. নুজহাত চৌধুরী, বিশিষ্ট শিক্ষাবিদ ও সাংস্কৃতিক ব্যক্তিত্ব অধ্যাপক ড. রতন সিদ্দিকী। এছাড়াও অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়, জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়, জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়, ব্র্যাক বিশ্ববিদ্যালয়সহ বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীবৃন্দ।

ডা. নুজহাত চৌধুরী বলেন- ধর্মের ভুল ব্যাখ্যা দিয়ে বিভ্রান্তি ও বিদ্বেষ ছড়ানো হচ্ছে, নারীকে একধরনের বন্দি করার চেষ্টা করছে, ধর্মের অপব্যাখ্যা দিয়ে সমাজকে অস্থিতিশীল করার চেষ্টা করছে- যা মুক্তিযুদ্ধের চেতনার পরিপন্থি। আমাদের তরুণদের আত্মমর্যাদায় বেড়ে উঠতে হবে, কুসংস্কার থেকে দুরে থাকতে হবে, সাম্যের গান গাইতে হবে।
অধ্যাপক ড. রতন সিদ্দিকী বলেন, নারীর প্রতি বৈষম্যের একটি ঐতিহাসিক প্রেক্ষাপট আছে। হাজার বছর ধরে সুকৌশলে ভাষাগত পরিবর্তনের মধ্য দিয়ে বৈষম্য তৈরি করা হয়েছে। আমাদের ঐতিহ্যমন্ডিত সংস্কৃতির মধ্যে ধর্মকে সুকৌশলে যুক্ত করে দেয়া হয়েছে। পৃথিবীর প্রথম ধর্মনিরপেক্ষতার বা ইহজাগতিকতার চর্চা শুরু হয়েছিলো এই পুর্বভারতে সম্রাট অশোক-এর নেতৃত্বে। পরবর্তীতে বল্লাল সেনে আমল থেকে এর ভাঙনের সূত্রপাত। এরপর থেকে নারীর অধিকার সকল সময়ে আদায় করে নিতে হয়েছে। তিনি আরও বলেন, সাম্প্রতিক অর্থ বিনিয়োগ করে বিভিন্ন এলাকায় ধর্মীয় ওয়াজের নামে নারীর প্রতি বিদ্বেষ ছড়ানো হচ্ছে।

ড. মুহাম্মদ জাফর ইকবাল বলেন, ভিন্নতা মানে খারাপ না। এটি একটি সৌন্দর্য। মৌলিকভাবে সকল মানব সন্তান একইরকম। তরুণদের এগুলো বোঝা দরকার। তরুণদের স্বপ্ন পুরণে কাজ করতে হবে। আমরা আশাবাদী- তরুণদের হাত ধরে এদেশে সাম্যতা ও গণতান্ত্রিক মূল্যবোধ প্রতিষ্ঠা হবে।
তিনি আরও বলেন, ১৯৭৫ সালে বঙ্গবন্ধুকে হত্যার মধ্য দিয়ে মুক্তিযুদ্ধের চেতনা ধ্বংসের এক ধরণের চেষ্টা করা হয়েছে। আজকের তরুণরা মুক্তিযুদ্ধের চেতনা প্রতিষ্ঠায় কাজ করবে ও একটি সমৃদ্ধশালী বৈষম্যহীন সমাজ প্রতিষ্ঠায় গুরুত্বপূর্ণ ভুমিকা পালন করতে পারে।

সভাপ্রধানের বক্তব্যে বিএনপিএসের নির্বাহী পরিচালক মুক্তিযোদ্ধা রোকেয়া কবির বলেন, জনগোষ্ঠীর ৫০ শতাংশর বেশী নারী। অথচ তাদের বিরুদ্ধে এবং অপরাপর প্রান্তিক জনগোষ্ঠীর বিরুদ্ধে- তাদের প্রতি বৈষম্য টিকিয়ে রাখতে ধর্মকে অস্ত্র হিসেবে ব্যবহার করা হচ্ছে। গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশের জন্ম হয়েছে মুক্তিযুদ্ধের মাধ্যমে; যেখানে নারীর অবদান অনস্বীকার্য।
তিনি আরও বলেন, সংবিধানে বলা আছে- এ দেশের প্রত্যেক নাগরিকের সমান অধিকার থাকবে। অথচ উত্তরাধিকার আইনে তার কোন প্রতিফলন নেই। নারীর প্রতি বৈষম্য ̈বিলোপ ও সকল নাগরিকের জন্য ইহজাগতিকতা বিবেচনায় গনতান্ত্রিক মূল্যবোধ ও সমনাগরিকত্ব প্রতিষ্ঠা জরুরী।

তিনি আরও বলেন, পিছিয়ে পড়া জনগোষ্ঠীর জন্য কোটা ব্যবস্থা, যৌন হয়রানি, সম্পত্তিতে নারীর উত্তরাধিকার নিয়ে শিক্ষার্থীদের সচেতন ও নারীর মর্যাদা, ধর্মনিরপেক্ষতা, মানবিক মুল্যবোধসমৃদ্ধ বাংলাদেশ গঠনে আজকের শিক্ষার্থীদের এগিয়ে আসতে হবে।

সেমিনারে প্রশ্নোত্তর পর্বে আরও বক্তব্য রাখেন ঢাকা বিশ^বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী জান্নাতুল তুলি, মীর হৃদয়, বর্ষা আহমেদ, ওমর ফারুক, জান্নাত সুলতানা প্রমূখ।

image_print
Spread the love
0 0 votes
Article Rating
Subscribe
Notify of
guest
0 Comments
Inline Feedbacks
View all comments